DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

৫ই জানুয়ারী’২০১৫ : এক ভয়াবহ অগ্নি পরীক্ষার দিন

105324_1আগামী ৫ জানুয়ারি'২০১৫  হতে যাচ্ছে সমসাময়িক বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক বলয়ের অগ্নি পরীক্ষা।এইদিন  পাল্টাপাল্টি শক্তি দেখাবে  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এদিনকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট 'গণতন্ত্র রক্ষা দিবস' হিসেবে পালন করবে। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট পালন করবে 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' হিসেবে।

দুই জোটের পক্ষ থেকেই পৃথকভাবে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগরে সভা-সমাবেশ করার প্রস্তুতি চলছে। সরকারের এক বছর পূর্তির এদিনে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় বিভিন্ন মহলও। তবে ৫ জানুয়ারি ঘিরে সরকার সতর্ক। র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সারা দেশে শোডাউনের ব্যাপক প্রস্তুতি আওয়ামী লীগে :

বিএনপির কর্মসূচির জবাবে ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে চায় তাদের সাংগঠনিক শক্তি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ৫ জানুয়ারি সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য। দেশের সব কটি বিভাগীয় শহরে আওয়ামী লীগ ওইদিন সভা-সমাবেশ ছাড়াও বের করবে আনন্দ মিছিল। দিনটিকে ঐতিহাসিক দিন হিসেবে জাতির কাছে তুলে ধরতেই সরকারি দলের এসব আয়োজন।


আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ। কেন্দ্র থেকে ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ লাখ লোকের সমাবেশের টার্গেট রয়েছে দলের নীতিনির্ধারকদের। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দলের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগও নিচ্ছে আলাদা প্রস্তুতি।

এ ছাড়া যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ এদিন ব্যাপক শোডাউন করবে বলে সংগঠন সূত্র জানিয়েছে। সূত্রমতে, রাজধানীর ৫ জানুয়ারির মহাসমাবেশ সফল করার পাশাপাশি দলের নির্বাচিত সব এমপি ও দলীয় নেতৃত্বকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। নির্বাচিত দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যানদেরও দেওয়া হয়েছে একই নির্দেশনা। সূত্রমতে, বিভাগীয় সদর, জেলা-উপজেলাই নয়, ৫ জানুয়ারির গণতন্ত্র রক্ষা দিবস কর্মসূচি পালন করবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগও।

তৃণমূলে দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই এ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চলমান দলীয় সম্মেলন সামনে রেখে এ ধরনের কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া মিলবে বলেও আশাবাদী কেন্দ্রের নেতারা। সূত্রমতে, দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েক নেতা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি সফল করতে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। জেলা উপজেলা পর্যায়ের কর্মসূচি সফল করতে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্র থেকে।

এ ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৫ জানুয়ারি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিই মাঠে থাকবে। এদিন স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ  বলেন, ৫ জানুয়ারি কেবল রাজধানী নয় সারা দেশে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। ইতিমধ্যে বিভাগীয় পর্যায় এবং জেলা-উপজেলার দলীয় নেতা, নির্বাচিত দলীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, এদিন আওয়ামী লীগের দখলেই থাকবে রাজপথ। কর্মসূচির নামে কোনো রাজনৈতিক দল যদি এদিন নাশকতা কিংবা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে সে ক্ষেত্রে তাদের গণধোলাই দেওয়া হবে।দলীয় সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারি রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের আয়োজন করছে আওয়ামী লীগ।

কেন্দ্র থেকে এ কর্মসূচি নেওয়া হলেও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতিদিনই মহাসমাবেশের প্রাকপ্রস্তুতি নিয়ে নগর আওয়ামী লীগ নেতারা বসছেন দলীয় কার্যালয়ে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া নগর, থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের দিচ্ছেন দিকনির্দেশনা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলের সিনিয়র নেতারা।

যে কোনো মূল্যে রাজপথে থাকতে চায় বিএনপিও :

৫ জানুয়ারি যে কোনো মূল্যে রাজপথে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। ওইদিন শান্তিপূর্ণভাবে সারা দেশে শোডাউন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ দিনকে 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' হিসেবে ঢাকাসহ সারা দেশে পালন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ দল। বিগত ৫ জানুয়ারি 'প্রশ্নবিদ্ধ' নির্বাচনের চিত্রও তুলে ধরা হবে সভা-সমাবেশে। এ কারণেই ৫ জানুয়ারির আগে বড় ধরনের কোনো সংঘাত-সংঘর্ষে যাচ্ছে না বিএনপি জোট। গতকালের হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলেও সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, '৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনসভা করব। ঢাকায় কর্মসূচি পালনে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আশা করি সংশ্লিষ্টরা অনুমতি দেবেন। নইলে ওইদিনই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। হরতাল-অবরোধ-গণমিছিলসহ নানা কর্মসূচি আসতে পারে। এগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর কোনো সহিংসতা হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।'

সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, সোমবারের (গতকাল) হরতাল হবে শান্তিপূর্ণ। কোনো সহিংসতায় যাওয়া যাবে না। ৫ জানুয়ারি ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিতেও এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ৩ ও ৫ জানুয়ারি ঢাকায় জনসভা করতে তিনটি স্থানের অনুমতি চেয়েছে বিএনপি।

স্থান বরাদ্দ না পেলেও ৫ জানুয়ারি যে কোনো মূল্যে রাজধানীসহ সারা দেশে বড় ধরনের গণজমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অহিংস কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমে সরকারকে নতুন নির্বাচনের জন্য বাধ্য করতে সব ধরনের চেষ্টা চালাবে বিএনপি। সরকার বাধ্য করলে ওই কর্মসূচি 'সহিংসতায়' রূপ নিলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না বলে জানান বিএনপি জোটের নেতারা। বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, গাজীপুরে জনসভা করতে না পারার প্রতিবাদে বড় ধরনের কোনো শোডাউনে যায়নি বিএনপি।

এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই ওইদিন গাজীপুরে যাওয়া থেকে বিরত থেকেছেন বেগম খালেদা জিয়া। যদিও তিনি এর আগে বলেছিলেন, যে কোনো মূল্যে গাজীপুরে জনসভা করা হবে। কিন্তু ছাত্রলীগ সেখানে পাল্টা সমাবেশ ডাকায় পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। বড় কোনো ঝুঁকি না নিতেই বেগম জিয়া ওই সমাবেশে যাননি। যদিও এতে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা 'আশাহত' হয়েছেন বলে মনে করে দলের একাংশ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, ৫ জানুয়ারির আগে বড় কোনো ঝুঁকি নেবে না বিএনপি। আগামী ৫ জানুয়ারি ঘিরেই বিএনপির যত প্রস্তুতি। ঢাকাসহ সারা দেশে ওইদিন শান্তিপূর্ণভাবে বড় শোডাউন করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। জোটের নেতা-কর্মীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রাজধানীতে জনসভার অনুমতি না দিলেও যে কোনো মূল্যে ওইদিন রাজপথে নামবেন বেগম খালেদা জিয়া।

এজন্য দল ও জোটগতভাবে নানা কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হলেও বিএনপি আর পেছন ফিরে তাকাবে না। জানুয়ারি জুড়েই হরতাল-অবরোধসহ 'অল আউট' কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। অবশ্য দলটির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ৩ অথবা ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে দেওয়া না হলে ২০-দলীয় জোট ৫ তারিখ থেকেই টানা ৭২ ঘণ্টা দেশব্যাপী হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, '৫ জানুয়ারি আমরা জনসভা করতে চাই। সরকারও জনসভা করবে। আলাদাভাবে জায়গা বরাদ্দ থাকলে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু সরকার যদি বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয় তাহলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তখন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!