DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও ‘মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা’ খুঁজছে বাংলাদেশ!

1a286-300x195বিগত ৪৩ বছরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরীতে ব্যাপক জালিয়াতি, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরীর কারণে, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণে নতুন করে সিদ্বান্ত নিয়েছে সরকার।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন নিয়মে মুক্তিযোদ্ধার উপাধি বা সনদ পাওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে আট ধরনের যোগ্যতাকে মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণের মাপকাঠি হিসেবে রাখা হয়েছে। এত দিন এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না। ২০১০ সালে শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের আইন হালনাগাদ করার জন্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বৈঠকে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার জন্য নতুন করে এক লাখ আবেদনপত্র জমা হয়েছিল। ওই আবেদনপত্র আবারও উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে এ অভিযোগ পাঠাতে বলা হয়েছে।

নতুন করে মুক্তিযুদ্বার সনদ পেতে গেলে যে যে যোগ্যতাগুলোর প্রয়োজন হবে সেগুলো হল: মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ট্রেনিং ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করা; মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে ভূমিকা রাখা; কাদেরিয়া বাহিনী, হেমায়েত বাহিনী, আনসার বাহিনীর মতো বিভিন্ন মুক্তিবাহিনীর সদস্য থাকা; প্রথমে ভারতের ত্রাণশিবিরে অবস্থান করলেও পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া; পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া; মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অথবা মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত গণপরিষদের সদস্য হওয়া; মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিতে শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, চিকিৎসক, লেখক, সাংবাদিক হিসেবে বা বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অবদান রাখা প্রভৃতি।

এছাড়া খেতাব ও অন্যান্য: সংজ্ঞা নির্ধারণের খসড়ায় সব মুক্তিযোদ্ধার নামের সঙ্গে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খেতাব ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, খেলোয়াড় ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তিদের অবদান বিবেচনা করে খেতাব দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়া অব্যাহত রাখা, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং এক বছরের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করার কথাও বলা হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য সেল গঠন করে এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ-সম্পর্কিত গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, কবিতা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিশু, কিশোর, যুব, পেশাজীবী সংগঠন গঠন করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের স্থায়ী ‘ডিজিটাল সনদ’ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত করার বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন কঠিন । তারপরও এ বিষয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার।বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট প্রণীত তালিকা অনুসারে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৬৯ হাজার ৮৩৩। কিন্তু ডিজিটাল সনদের জন্য এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮৭ হাজার ৩০৮ জনে।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তালিকাভুক্ত প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার ‘মায়ের নাম’ ও ‘ডাকঘর’ সংযুক্ত করে তথ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর ফলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শিগগিরই তালিকাভুক্ত পৌনে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফের তথ্য হালনাগাদ করা হবে। এরপর চূড়ান্ত তালিকার ভিত্তিতে তাঁদের ডিজিটাল সনদ দেওয়া হবে। এ সনদ যাতে কোনোক্রমেই জাল করা না যায়, সে জন্য বারকোড, জলছাপ, টাকার মতো নিরাপত্তা সুতা, থ্রিডি প্রযুক্তিসহ নয়টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যও থাকছে নতুন এই নিয়মে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!