DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

মানবাধিকার এবং গনতন্ত্রের প্রশ্নে বাংলাদেশ-জার্মানীর সম্পর্কে ব্যপক টানাপোড়েন।

 

 

 

 

 

 

 

Flag-Pins-Bangladesh-Germanyবাংলাদেশের বর্তমানকাল এবং বিগত কিছুদিনের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে   জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ব্যপক টানাপড়েন চলছে।

দুই বছর আগে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে তৈরি হওয়া বিতর্ক থেকেই এর শুরু। এরপর জার্মান সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে বার্লিনে দায়িত্বরত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। গত সাত মাস ধরে ঢাকায় কোনো রাষ্ট্রদূত নেই জার্মানির। বার্লিন থেকে নতুন রাষ্ট্রদূতকে নিয়োগ দিলেও সেই কূটনীতিকের এগ্রিমো অনুমোদন করেনি বাংলাদেশ।

 

 

 

জানা যায়, দায়িত্বপালন শেষে গত ১ জুন ঢাকা ত্যাগ করেন জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. আলব্রেখট কনজে। তিনি মালদ্বীপে নতুন দায়িত্বে চলে গেছেন। কয়েকদিন পর কনজের পরিবর্তে সাইপ্রাসে জার্মান রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা ড. গাব্রিয়েলা গুয়েলিলকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় গুয়েলিলের এগ্রিমো। সেই থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকে এগ্রিমো। বাংলাদেশ থেকে কিছুই জানানো হয়নি জার্মানিকে। অবশ্য, কূটনৈতিক ধারায় এগ্রিমোর বিষয়ে নিশ্চুপ থাকার মানে তা প্রত্যাখ্যান করা। সেক্ষেত্রে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।

ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে, রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ক্ষেত্রে এগ্রিমো অনুমোদন আবশ্যক। বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, সাইপ্রাসে দায়িত্ব শেষে বাংলাদেশে যোগ দিতে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ঢাকার শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতায় থাকার প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন গুয়েলিল। এ কারণেই এগ্রিমো অনুমোদন করা হয়নি। এখন নতুন কোনো রাষ্ট্রদূতকে নিয়োগ দিলে ভেবে দেখবে বাংলাদেশ।

 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ-জার্মান সম্পর্কের উত্থান-পতন চলছে ২০১২ সালের জুনে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইভো ভেস্টারভেলের ঢাকা সফর থেকেই। সেদিন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর সফররত মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে জার্মানির উদ্বেগের কথা জানান। বৈঠকের পরদিন দুপুরে জার্মান মন্ত্রীর ঢাকা ত্যাগের আগেই সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয় ঢাকার জার্মান রাষ্ট্রদূতকে। কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের। তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস লিখিত প্রতিবাদে বলেন, 'এই বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্মিত। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাধীন নাগরিকসমাজ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড ও খুনিদের শাস্তি দেওয়া,বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ইত্যাদি বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন বাস্তবে এসব বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনাই হয়নি। জার্মানির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আলোচনার মূল প্রসঙ্গ তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন।'

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবাদের এই প্রক্রিয়ায় সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু। এই ঘটনার পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নানের বিরুদ্ধে 'নিয়ম ভাঙা'র অভিযোগ আনা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে মাসুদ মান্নানকে প্রত্যাহারে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। অবশ্য রাষ্ট্রদূত মাসুদ মান্নান তখন দূতাবাসে লোকাল স্টাফদের বেতন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন বলে জানা গেছে। এরপর এখন জার্মান রাষ্ট্রদূতের এগ্রিমোর অনুমোদন সংশ্লিষ্ট বিতর্ক চলছে।

প্রসঙ্গত, ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি গত ৪০ বছরে উন্নয়ন-সহায়তা হিসাবে বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ইউরো দিয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৪০০ কোটি ডলারের বেশি। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে জার্মানির সঙ্গেই বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিই প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!