DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

এক স্বর্ন চোরাকারবারীর উত্থানের অবিশ্বাস্য কাহিনী

103262_1একাধিক বাড়ি আছে দেশের গুলশান, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায়। এত বিত্তবৈভব যার তার নাম সালেহ আহমেদ।

তিনি চলনে-বলনে অতি সাধারণ। পোশাকেও নেই সামান্যতম আভিজাত্যের ছাপ। বয়স পঞ্চাশের ওপরে। কোটি টাকা মূল্যের প্রাডোসহ একাধিক গাড়ির মালিক হলেও অধিকাংশ সময় চলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। গুলশানে রয়েছে বিশাল অট্টালিকা। বাড়ির নিচতলায় পোষেন হরিণশাবকও। একাধিক বাড়ি আছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায়। এত বিত্তবৈভব যার তার নাম সালেহ আহমেদ। পড়াশোনা কম নয়, এইচএসসি পাস। উল্লেখ করার মতো বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই তার। দৃশ্যমান ব্যবসা বলতে বায়তুল মোকাররমে 'সাব মানি এক্সচেঞ্জ'। চোরাই স্বর্ণের টাকায় গুলশানে আলিশান বাড়ি


সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক চোরাই স্বর্ণের চালান ধরা পড়ার পর অনেক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।তাহলে কী করে নামে-বেনামে শত শত কোটি টাকার মালিক হলেন তিনি? সালেহ আহমেদের উপার্জন শুরু মতিঝিলের ফুটপাতে ডলার বিক্রি করে। ১৯৭৮ সালে তিনি ছিলেন ভ্রাম্যমাণ ডলার বিক্রেতা। এরপর যেন সিনেমার গল্প। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার আড়ালে দেশ-বিদেশে স্বর্ণ চোরাকারবারিদের কাছে অর্থ বিনিয়োগ করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে তিনি 'রহস্যপুরুষ'।

ঢাকা মহানগর ডিবির তদন্তাধীন একাধিক মামলার আসামির জবানবন্দিতে স্বর্ণ চোরাকারবারিদের অর্থ জোগানদাতা হিসেবে এই সালেহ আহমেদের নাম উঠে আসে। এরপর সঙ্গোপনে শুরু হয় সালেহ আহমেদকে ঘিরে অনুসন্ধান। বেরিয়ে আসে নেপথ্যে থেকে বছরের পর বছর স্বর্ণসহ অন্যান্য চোরাকারবারিতে তার কোটি কোটি টাকা 'বিনিয়োগ' করার তথ্য। গত বৃহস্পতিবার ডিবির একটি দল বায়তুল মোকাররম থেকে তাকে আটক করে। এরপর তাকে দু'দিনের হেফাজতে নেওয়া হয়। তার দেওয়া তথ্যে বিস্মিত গোয়েন্দারা।

মামলার তদারক কর্মকর্তা ডিবির ডিসি (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম  বলেন, স্বর্ণ চোরাকারবারিদের কাছে সালেহ গডফাদার হিসেবে পরিচিত। হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা মূল্যমানের মুদ্রা বিদেশে পাঠান তিনি। তার অন্যান্য দেশি-বিদেশি সহযোগীকেও আটকের চেষ্টা চলছে।

গুলশান এক নম্বর সেকশনে ২৩/বি নম্বর সড়কের সাত নম্বর বাড়িটির মালিক সালেহ আহমেদ। শনিবার গুলশান গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা বাড়ির সামনে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জনৈক লিয়াকত। বাসার সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা। স্ত্রী ফারজানা ও এক মেয়েকে নিয়ে চতুর্থ তলায় থাকেন সালেহ। অন্য এক মেয়ে বিদেশে বসবাস করেন। বাড়ির নিচতলার একপাশের গ্যারেজে সালেহর প্রাডো গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৮০৯৭)। পাশেই আরেকটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-৪২৪১)। অন্য একটি প্রাইভেটকার নিয়ে সালেহর স্ত্রী ও মেয়ে সকাল ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সালেহ আহমেদের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। দুটি মোবাইল টেলিফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আমাদের জানান, গুলশানে বাড়ি ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে তার ১৫টি দোকান রয়েছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ তার কোটি কোটি টাকা। বায়তুল মোকাররমে তার মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ও মতিঝিলে প্রাইভেট চেম্বার। সালেহর পরিবার একসময় পুরান ঢাকায় বসবাস করতেন। বংশালে আশির দশকে তার পরিচিতি ছিল 'দুই নম্বর' সালেহ নামে। লিটন, সমীরসহ আরও কয়েকজন আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারির সঙ্গে সখ্য ছিল তার। ভারতের একাধিক স্বর্ণ চোরাকারবারির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। দুবাই, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের অনেক দেশে যাতায়াত তার।

স্বর্ণ চোরাচালানে বিনিয়োগ করতে পল্টনের আরেক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীকে সম্প্রতি ১০ কোটি টাকা দেন তিনি। সালেহকে গ্রেফতারের পর তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। হঠাৎ পালিয়েছেন তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক। তাকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে সালেহর স্ত্রীর মোবাইল ফোনসহ আরও কিছু আলামত জব্দ করেছে পুলিশ। সূত্র জানায়, শুধু অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন নয়, ব্যক্তিগত জীবনে একজন বড় ধরনের প্রতারক সালেহ।

১৯৯৩ সালে প্রতারণা করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এক পরিচালকের মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। যে কোনো উপায়ে অনেক টাকার মালিক হওয়াই ছিল তার স্বপ্ন। স্বর্ণ চোরাকারবারিতে অর্থ বিনিয়োগের কারণে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক চোরাচালানিদের কাছে গডফাদার হয়ে ওঠেন সালেহ।

ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, চোরাইপথে যেসব স্বর্ণ বাংলাদেশ হয়ে পার্শ্ববর্তী ভারতসহ অন্যান্য দেশে যায়, সেখানে অর্থ বিনিয়োগ করে কমিশন নেন সালেহ। বিশ্বস্ত কয়েকজন সহযোগীর মাধ্যমে এ অবৈধ কারবার চালিয়ে আসছিলেন বছরের পর বছর।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!