DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

এক অসীম সাহসী মুক্তি যোদ্ধা খায়রুল বাশার খান,বীর প্রতিকের বিরত্ব গাথা

10264968_903098309701643_1011839744138041902_nখায়রুল বাশার, বীর প্রতীক





২৮ জুলাই ১৯৭১। সাড়াশব্দহীন অন্ধকার রাত। খায়রুল বাশার (খান)সহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করেন। নিঃশব্দে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটির কাছে যান। দুই-তিন দিনের মধ্যেই তাঁরা ওই ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাবেন। সে জন্য রাতের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে যান। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দীন মমতাজ (বীর উত্তম ও শহীদ)।




কিন্তু এক দুর্ঘটনা ঘটে। রাতের অন্ধকারে তাঁরা ভুলক্রমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লিসনিং পোস্টের কাছে যান। এক পাকিস্তানি সেনা ‘হল্ট’ বলে চিৎকার করে ওঠে। বাশারের দলনেতা সালাহউদ্দীন চিৎকার করে ওঠা পাকিস্তানি সেনাকে পরবর্তী কার্যক্রমের সুযোগ দেননি। সঙ্গে সঙ্গে জাপটে ধরে মাটিতে ধরাশায়ী করেন। তাঁদের এক সহযোদ্ধার গুলিতে ওই পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। সেখানে থাকা আরেক পাকিস্তানি সেনাকেও তাঁরা হত্যা করেন। এরপর তাঁরা ভারতে ফিরে যান।




নিজেদের প্রতিরক্ষার ভেতর এমন ঘটনা পাকিস্তান সেনাবাহিনী কল্পনাও করেনি। পরদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজি ওই প্রতিরক্ষা পরিদর্শনে যান। তাঁর মনে ধারণা জন্মে ভারতীয় আক্রমণ আসন্ন। তারা প্রতিরক্ষার শক্তি বৃদ্ধি করে এবং সতর্ক হয়ে যায়।

 




মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ পরিকল্পনা এতে থেমে যায়নি। নির্ধারিত দিন (৩০ জুলাই শেষ রাত, তখন ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ৩১ জুলাই) মুক্তিবাহিনীর দুটি দল (কোম্পানি) সেখানে আক্রমণ করে। ব্রাভো (বি) ও ডেল্টা (ডি) দল। ডি দলে ছিলেন খায়রুল বাশার। তাঁরা কয়েকটি উপদলে (প্লাটুন ও সেকশন) বিভক্ত এবং তিনি একটি প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন। 




‘ডি’ দলের নেতৃত্ব দেন সালাহউদ্দীন মমতাজ। অপর দলের (বি) নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (বীর বিক্রম)। তাঁদের নেতৃত্বে প্রচণ্ড বর্ষণমুখর রাতে খায়রুল বাশারসহ মুক্তিযোদ্ধারা এফইউপিতে (ফর্মি আপ প্লেস) সমবেত হন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তাঁদের কিছুটা দেরি হয়ে যায়।


ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ দল মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা করে। নির্ধারিত সময় শুরু হয় গোলাবর্ষণ। কিন্তু সেগুলোর কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে পড়ে। এতে হতাহত হন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রাকৃতিক বাধা এবং নতুন এ বিপর্যয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।




খায়রুল বাশারসহ তাঁর সহযোদ্ধারা এতে দমে যাননি। মনের জোর ও অদম্য সাহসে উজ্জীবিত হয়ে তাঁরা অধিনায়কের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। সমন্বিত আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষায় ফাটল ধরে। পাকিস্তানিরা সামনের প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে শেলপ্রুফ বাংকারে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ শুরু করে।




অদম্য সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবৃষ্টির মধ্যেই সামনে এগিয়ে যান। বাংকার অতিক্রম করে তাঁরা মূল প্রতিরক্ষার (কমিউনিটি সেন্টার) মধ্যে ঢুকে পড়েন। বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেও তাঁরা শেষ পর্যন্ত সফল হননি। আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।




এ ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কামালপুর বিওপিতে। জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কামালপুর গ্রামের মাঝামাঝি বিওপির অবস্থান। সে দিন যুদ্ধে খায়রুল বাশারসহ মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধকতা সাহসিকতার সঙ্গে পার হয়ে মূল প্রতিরক্ষায় ঢুকে পড়েন। তাঁর দুই পাশের অনেক সহযোদ্ধা মাইন ও গুলির আঘাতে শহীদ ও আহত হন।




খায়রুল বাশার চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর সেক্টরের ৫ নম্বর উইংয়ে। তখন তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ভারতে যান। পরে ’জেড’ ফোর্সের অধীন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হন।




মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য খায়রুল বাশারকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৭২। তাঁর প্রকৃত নাম খায়রুল বাশার খান।


খায়রুল বাশার খান ১৯৮৮ সালে বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) থেকে উপপরিচালক হিসেবে অবসর নেন। ২০০৭ সালে মারা যান। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামে। বাবার নাম (শহীদ) আমীর আলী খান। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। মা ফিরোজা বেগম।তাদের পরিবারে আরও বেশ কয়েকজন শহীদ হন মুক্তিযুদ্ধে।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী জোবেদা বাশারএবং তিনি সুযোগ্য চার ছেলে রেখে গেছেন,যারা সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজ স্বনামধন্য।এছাড়াও তিনি পরম পিতৃস্নেহে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন নিজ কনিষ্ঠ ভ্রাতাদের ।অত্যন্ত সৎ এবং পরোপকারী ছিলেন লেঃ কর্নেল বাশার।এধরনের ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব আমাদের সমাজে আজ বিরল।

বিজয়ের এই মহান ক্ষনে আমরা  বীর মুক্তিযোদ্ধা লেঃ কর্নেল খায়রুল বাশার খানের প্রতি 'প্রথম বাংলাদেশ' প্রকাশনা পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করছি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!