DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সম্পাদকদের মতঃসম্প্রচার নীতিমালা নয়, গণমাধ্যম চলবে নিজস্ব আচরণবিধিতে

editorসম্প্রচার নীতিমালা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করবে, গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত এবং শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাহত করবে। গণমাধ্যম চলবে নিজস্ব আচরণবিধিতে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য কোনো সরকারি নীতিমালার প্রয়োজন নেই।

শনিবার বিকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের সামনে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

জাতীয় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এ নীতিমালাটি অপ্রত্যাশিত। দেশে এমন কোনো জরুরি অবস্থা বা সামরিক শাসন চালু হয়নি যে এ ধরনের নীতিমালা করতে হবে। এ নীতিমালা গণমাধ্যমাধ্যের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা। গণমাধ্যমের ওপর যে আক্রমণ আসছে এটা তাদের ঐক্যের অভাবের কারণে। আগেও এ ধরনের আক্রমণ হয়েছে কিন্তু সে সময় তারা ঐক্যবদ্ধ ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা মানে সরকারের দৃষ্টি হারানো। সরকার যদি নিজের দৃষ্টি শক্তি হারাতে না চায় তাহলে গণমাধ্যমের বাকশক্তির স্বাধীনতা দিতে হবে।’

সভায় বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা এ নীতিমালা করেছে তারা আসলে সরকারের বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষি কি না, সরকারকে এখনই তা দেখতে হবে। সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলছে। কিন্তু সম্প্রচার নীতিমালা গণমাধ্যমকে কঠোর জবাবদিহিতার মধ্যে এনেছে। গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা করতে হলে দেশের সুশাসন থাকে না।।’

অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্সের সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজ বলেন, ‘আমরা একটি নীতিমালা চেয়েছিলাম। যেটি গণমাধ্যমকে বিকশিত করবে।এ চাওয়ার পেছনে কয়েকটি যুক্তিও ছিল। যেমন চাইলে যে কেউ যেনো টিভির লাইসেন্স না পায়। যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেনো যোগ্যতার ভিত্তিতেই লাইসেন্স পায়।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সাংবাদিকদের চারটি বিষযে সুরক্ষার জন্য নীতিমালা চেয়েছিলাম। সাংবাদিকতা পেশায় নতুনদের চাকরির নিরাপত্তা, টেলিভিশন চ্যানেগুলোর বেতন বৈষম্য দূর করা, বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা এবং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে একটি সুরক্ষা চেয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যমান নীতিমালায় তার উপস্থিতি নেই। তবে অনেকেই না বুঝে নীতিমালা নিয়ে সমালোচনা করছেন। এর ইতিবাচক দিকও আছে।’

তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, দেশে উজ্জ্বল সাংবাদিকতা যেমন অগ্রসর হচ্ছে, তেমনি অপসাংবাদিকতাও কম নেই। এই অপসাংবাদিকতা দূর করতেই নীতিমালা প্রয়োজন। আমরা চেয়েছিলাম একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন। যে কমিশনের প্রধান হবেন গণমাধ্যমের কেউ। কোনোভাবেই সামরিক বাহিনীর বা আমলাদের কাউকে এই কমিশনে মেনে নেয়া হবে না। যোগ্য ব্যক্তির মাধ্যমে কমিশন গঠন করা হবে।’

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘ব্রডকাস্ট নীতিমালার একটি গেজেট আমরা হাতে পেয়েছি। এ নীতিমালায় টেলিভিশনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দেয়া হয়েছে। এর ধারাগুলো দেখে আমরা যে ধরনের মনোভাব পাই তা স্বাধীন গণমাধ্যমের পরিপন্থি।’

তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে অনলাইন মিডিয়াকেও এখন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। অথচ এটি এখন একটি দ্রুত বিকাশমান মিডিয়া।’

মাহফুজ আনাম বলেন, ‘নীতিমালার ৫:১:৪ ধারায় বলা হয়েছে- রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন ধরনের সামরিক, বেসামরিক বা সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না। আমাদের কথা হচ্ছে আমরা সেনাবাহিনী সম্পর্কিত তথ্যের স্পর্শকাতরতার বিষয়ে ভালোভাবেই অবগত। কিন্তু বেসামরিক এবং সরকারি তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার করা কেন যাবে না? কাজেই এ ধারা প্রমাণ করে- এ নীতিমালা গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘সম্প্রচার নীতিমালা সম্পাদকদের নিরস্ত্র করার অভিনব প্রয়াস। এ নীতিমালা হলে বাংলাদেশের শ্রোতা দর্শক দেশের টিভি-চ্যানেল বাদ দিয়ে অন্য দেশের মিডিয়ার ওপর ঝুঁকবে।’

সভাপতির বক্তব্যে দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘নীতিমালাটি করার পর থেকে যত ধরনের আলোচনা হয়েছে এ কারণে নীতিমালাটি এমননিতেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। এই নীতিমালা না করে তথ্যমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিতে পারতেন বিটিভির মতো করে চলতে। এই নীতিমালা দ্বারা এটাই বোঝায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরাই একটা আচরণবিধি করবো। যে আচরণবিধি অনুযায়ী গণমাধ্যমগুলো চলবে।’ এসময় তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

আলোচনায় আরো উপস্থিত রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রহমান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, মাছরাঙ্গা টিভির প্রধান সম্পাদক ফাহিম মুনায়েম প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!