DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

অর্থমন্ত্রী মোবাইল ফোন সেটের চোরাচালান ঠেকাবেন কীভাবে?

phone-set02দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ  ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে আমদানিকৃত মোবাইল ফোন সেটে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট বা মূসক) বাড়ানো হয়েছে। সংযোজন করে এমন দেশীয় কোম্পানিগুলোকে সুযোগ করে দিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বাস্তবে ফল উল্টো হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভ্যাট বাড়ানোর ফলে এখন সস্তায় মোবাইল ফোন সেট কেনার সুযোগ হারাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

শুধু তা-ই নয়, দেশীয় কোম্পানিকে উৎসাহিত করতে গিয়ে চোরাচালান ঠেকানোই এখন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভুত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে সরকারও বিশাল অংকের রাজস্ব হারাতে পারেন। অন্যদিকে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বেচাবিক্রিও কমে গেছে। আমদানিকারকরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

দেশে মোবাইল ফোন সংযোজন করছে এমন কোম্পানিগুলো অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে- এ যুক্তিতে মোবাইল ফোন সেটের আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বাড়িয়েছে সরকার।

phone-set02 {focus_keyword} অর্থমন্ত্রী চোরাচালান ঠেকাবেন কীভাবে? phone set02


গত ৫ জুন অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর এবং অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে আমদানি পর্যায়ে মোবাইল ফোনে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রযোজ্য ছিল। পরে বাজেট পাস হলে মোট ৩০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। যা বিগত সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি।

এদিকে বাজেটে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রভাব ইতিমধ্যেই বাজারে পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিএ)। ২০ শতাংশ বিক্রি কমেছে বলে দাবি করেছে তারা।

তারা বলছেন, দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে এই উদ্যোগ নেয়া হলেও বর্তমানে দেশে কোনো প্রতিষ্ঠান হ্যান্ডসেট উৎপাদন বা সংযোজন করে না। এখন ভ্যাট বাড়ানোর ফলে চোরাই পথে মোবাইল সেট আসতে শুরু করবে। সাধারণ মানুষের জন্য সহজ করতে এবং দেশে বাংলার প্রচলন বাড়াতে ২০১২ সালে সরকার বাংলা কি-প্যাড ছাড়া মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি নিষিদ্ধ করে। কিন্তু চোরাই পথে মোবাইল এলে সরকারের এই নির্দেশনা উপেক্ষিত হবে।

এদিকে ইস্টার্নপ্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, মোতালেব প্লাজাসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, হ্যান্ডসেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিক্রিও হচ্ছে কম। ঈদকে সামনে রেখে বিক্রি কিছুটা বাড়লেও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের আশঙ্কা, সেটের দাম বাড়ার ফলে ব্র্যান্ডের নকল সেট বিক্রি বাড়বে। ফলে আসল নকল ধরতে না পারলেই ঠকতে হবে।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিএ) সভাপতি মোস্তফা রফিকুল ইসলাম  দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ কে জানান, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে সর্ব মোট মোবাইল ফোন আমদানি হয়েছিল ৬ লাখ ২২ হাজার। গতবছর বাজেটে মোবাইল ফোনের আমদানি শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ । মোবাইল ফোন আমদানি হয়েছিল ২ কোটি ১ লাখ ১০ হাজারটি। ফলে বোঝা যায় দেশে হ্যান্ড সেটের বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মোবাইলের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে নানা সেবা। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বড় কর্মযজ্ঞ মোবাইল ফোননির্ভর। কিন্তু মোবাইল ফোনের দাম বাড়লে তা ব্যাহত হবে।

এদিকে বাজেটের প্রভাবে মোবাইল ফোন সেটের বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন বিএমপিএর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক। তিনি দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ কে জানান, গত মাসে বাজেটে দাম বৃদ্ধির কারণে ২০ শতাংশ বিক্রি কমেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভালো ফোন কেনার সুযোগ কমেছে।

অবৈধ পথে ফোন আমদানি প্রসঙ্গে রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘একটা সময় অবৈধ পথে আসা মোবাইল ফোন প্রায়ই জব্দ করতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যখন সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়েছে অবৈধ পথে আমদানিও কমেছে। এখন শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আবার অবৈধ মোবাইল ফোন আমদানি বাড়বে। এর ফলে সরকার বঞ্চিত হবে ন্যায্য কর থেকে। বর্তমানে ৯৬ শতাংশ হ্যান্ডসেট বৈধ পথে আমদানি হচ্ছে। কিন্তু শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ২০ শতাংশ অবৈধ পথে আমদানি বাড়বে। অন্যদিকে ভোক্তারা এসব হ্যান্ডসেটের জন্য কোনো গ্রাহক সেবা (ওয়ারেন্টি) পাবেন না। আবার নিম্ন মানের হলে হবেন প্রতারিত। এছাড়া বাংলা কি-প্যাড ছাড়া মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি নিষিদ্ধ হলেও চোরাই পথে আসা ফোনে বাংলা থাকবে না। ফলে সরকারের বাংলা প্রচলনের উদ্যোগও ব্যাহত হবে।

দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনের জন্য এই উদ্যোগ যথাযথ নয় বলেও মনে করেন বিএমপিএ সভাপতি মোস্তফা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশে প্রকৃতপক্ষে কোনো মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রন্তুত বা সংযোজন করা হয় না। শুধু শুল্ক হ্রাস করে এই খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা যাবে না। মোবাইল ফোনের কারখানা চাইলেই যেকোনো সময় স্থাপন সম্ভব নয়। এই শিল্প প্রযুক্তিনির্ভর এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল। হ্যান্ডসেট উৎপাদনের জন্য অধিক বিনিয়োগের প্রয়োজন। সেজন্য সরকার যদি এই খাতে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করে তবে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হবে। শুধু বাংলাদেশের বাজারের ওপর নির্ভর করেই উৎপাদনে গেলে লোকসান গুণতে হবে। এক্ষেত্রে রপ্তানি শুল্ক মুক্ত করলেই মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনে দেশের ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হবে।

হ্যান্ডসেট হবে সামনের দিনে সরকারের ইন্টারনেট বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা দেশে কত দ্রুত ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটাতে চায়। মোবাইল ফোন অপারেটররা কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তৈরি করছেন। এখন যদি দামের কারণে গ্রাহকরা সহজে সঠিক হ্যান্ডসেটটি কিনতে না পারেন তাহালে এতো টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!