DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বিএনপির হুমকিতে নির্বিকার আওয়ামী লীগ!

 BNP_BALবিরোধীদের প্রতি সরকারের কঠোর অবস্থান ও সাংঠনিক দুর্বলতার কারণে বিএনপি বারবার সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ অনেকটা একাই নির্বাচন দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেছে। এরমধ্যে তারা নিরুপদ্রবে ছয় মাস অতিক্রম করেছে। এতোদিনে এসে আবারো সরকার পতন আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আসন্ন ঈদের পরেই তারা মাঠে নামবে। এ লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতিও শুরু করেছে।

তবে বেগম খালেদা জিয়ার এই আন্দোলনের হুমকি আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দল হিসেবে বিএনপি এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে কোনো পাত্তাই পাচ্ছে না!

গত মহাজোট সরকারের শেষ মুহূর্তে ২০১৩ সালের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার পরে আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু মাঠে সেভাবে সরব হয়নি তারা।

এরপর ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত জোট ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে টলাতে পারেনি। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে আন্দোলনের ডাক দেয়। কিন্তু সরকার ও সরকারি দলের প্রতিরোধমূলক তৎপরতায় তাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

গতকাল শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নয়, জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন তীব্রতর করবো। ঈদের পর আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হবে। আন্দোলন, নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সংগঠন গোছানোর কাজ একই সঙ্গে চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে ঈদের পর দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেছেন।’ এর আগে ১ মে শ্রমিক সমাবেশে খালেদা জিয়া ঈদের পরে সরকার পতন আন্দোলনের নামার ঘোষণা দেন।

আন্দোলনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে বিএনপি। এরই মধ্যে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে তোড়জোর শুরু হয়েছে। বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে ইফতার পার্টি শুরু করেছেন চেয়ারপারসন। এর মাধ্যমে বিএনপি আন্দোলনের গ্রাউন্ড তৈরি করছে বলে মনে করা হচ্ছে। কূটনৈতিক লবি জোরদার করার প্রয়াসে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোরশেদ খান আবারো বিএনপিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

সংবিধান রক্ষার নামে আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি একটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন দেয়। ওই নির্বাচনে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি সরকার গঠিত হয়। এবং এ-ই প্রথম সংসদে প্রধান বিরোধী দলকে সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই নির্বাচন ও সরকার নিয়ে দেশে বিদেশে বিতর্ক ও সমালোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই প্রথমে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে তবে পরে তারা এই সরকারের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে একটা অস্বস্তি রয়েই গেছে।

আর এই পরিস্থিতিটাকে পুঁজি করেই মূলত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ঈদুল ফিতরের পর বিএনপি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাতে পাত্তা দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ভাষা সেরকমই।

বিএনপির আন্দোলনের হুমকি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত জোট সরকারের আমলেও আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু তার কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসেনি। তাই তার আন্দোলনের কথা শুনতে শুনতে আমরা এখন বিরক্ত। তিনি কাজের চেয়ে কথা বলেন বেশি। তার এসব কথায় কান দিয়ে কোনো লাভ হবে না।’

আর যদি বেগম খালেদা জিয়া সত্যিই ঈদুল ফিতরের পর আন্দোলনের ডাক দেন, আওয়ামী লীগ তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ওই আন্দোলন প্রতিহত করা হবে।’

আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী হতাশ হয়ে পড়েছেন। দিশেহারা নেতাকর্মীদের চাঙা করতে কখনও তারেক রহমান, কখনও খালেদা জিয়া উদ্ভট তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত ও কাছে টানার চেষ্টা করছেন। তাছাড়া বিএনপি আন্দোলন করবে কাদের নিয়ে? তারাতো দেশের মানুষের চেয়ে বিদেশিদের ওপর আস্থা রাখে বেশি। আর জনগণ তা ভালোভাবেই বুঝে ফেলেছেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুঙ্কার বাগাড়ম্বর মাত্র। তিনি বহু আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। বহু আল্টিমেটাম দিয়েছেন। বরং তার আল্টিমেটাম বুমেরাং হয়ে তার ওপরই ভর করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আন্দোলন কারো নির্দেশে হয় না। বেগম খালেদা জিয়া নির্দেশ দিলেন, আর দেশের মানুষ আন্দোলনের নেমে গেলেন তা কখনই হবে না। কারো পছন্দ-অপছন্দের ওপর আন্দোলন নির্ভর করে না। দেশের মানুষ এখন শান্তি চায়। মানুষ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চায় না। বরং ওনি আন্দোলন করতে চাইলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন।’

এদিকে সম্প্রতি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার ওপর বিরক্ত হয়ে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। হতাশার কারণেই খালেদা জিয়ার এ সফরে বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতা অংশ নেননি। যারা দলের মধ্যে অস্থিরতা দূর করতে পারে না, তারা আবার জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এটা বিশ্বাস করে না।’

খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকির জবাবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের হুমকিতে কোনো লাভ হবে না। জনগণকে কাছে টানার সাংগঠনিক শক্তি আপনার (খালেদা) নেই। তাই দলকে আরও সুসংগঠিত ও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!