DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

অস্পষ্টতা এবং ফাঁকাবুলির জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাঃবিরোধী মত দমনের হাতিয়ার

images4ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বিভিন্ন মহলের প্রচন্ড বিরোধীতা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অস্পষ্ট ফাকাবূলির মধ্য দিয়ে অবশেষে অনুমোদিত হলো জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪।

পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সমালোচকদের আশঙ্কা অনুযায়ী নীতিমালাটি একদিকে গণমাধ্যমকে ‘বিশেষ নিয়ন্ত্রণ’ করতে সক্ষম  হলেও,  সরকারের প্রত্যাশা অনুসারে সম্প্রচার শিল্পকে সহযোগিতাতেও ব্যর্থ হবে এই নীতিমালা। নীতিমালাটিতে মোট তেরটি উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চারটি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই চারটি কৌশলের মাধ্যমে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

নীতিমালাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রচার মাধ্যমের মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা ও সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর মধ্যে উন্মুক্ত ও সুষম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা হবে। কিন্তু সম্প্রচার মাধ্যমের উন্নয়নের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করার কোন দিক-নির্দেশনা নাই নীতিমালায়। এছাড়া, সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির নামে কি ধরণের পদক্ষেপ নিতে হতে পারে তারও কোন রূপরেখা নাই এতে। ফলে, নীতিমালাটি কেবল কথার কথাতেই পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এছাড়া নীতিমালাটিতে এমন কিছু শব্দ ও ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলোর অর্থ ও বাস্তবতার মধ্যে বিস্তর ফারাক। এছাড়া, নীতিমালাটিতে এমন কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে, যার কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নাই। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘সামাজিক শৃঙ্খলা ও নৈতিক অবক্ষয় রোধ’, ‘সুস্থ বিনোদন’, ‘সম্প্রচারের মান’ ইত্যাদি। এই ধারণাগুলো স্পষ্ট না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত নীতিমালাটির কোন কার্যকরী প্রভাবই থাকবে না।বন্ধুরাষ্ট্র বিরোধী সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বন্ধু রাষ্টের কোন সংজ্ঞা বর্নিত হয়নি।উল্লেখ্য একমাত্র ইসরাইল ছাড়া পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রই বাংলাদেশের বন্ধু বলে বিবেচিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ, নীতিমালাটিতে বলা হয়েছে, কোন অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন শোভনীয়, সুরুচীপূর্ণ কিংবা মার্জিত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু ‘শোভন’, ‘সুরুচী’ ইত্যাদির কোন সাধারণ মাপকাঠি না থাকায় কোন অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন প্রচার নিয়ে কোন সম্প্রচার মাধ্যমকেই কখনই দ্বিধায় পড়তে হবে না। এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেও পরামর্শ চাইতে যেতে হবে না। ফলে, নীতিমালার এই বাক্যগুলো শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবেই অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

নীতিমালাটিতে বলা হয়েছে, সকল সম্প্রচার মাধ্যমকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা হবে। কিন্তু এই সমন্বিত ব্যবস্থাপনা বলতে কি বোঝান হয়েছে, তার কোন হদিস নাই নীতিমালাটিতে। ফলে, সম্প্রচার কমিশন গঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হয়ে পড়তে পারে ধোঁয়াটে।

 নীতিমালাটিতে প্রধানতঃ সম্প্রচার মাধ্যমে কি প্রচার করা হতে পারে, তার একটি সাধারণ রূপরেখা দেখান হয়েছে। এই রূপরেখায় বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান ও বিদ্যমান অন্যান্য বিধি-বিধানের সাথেও রয়েছে অসঙ্গতি। এই সাধারণ রূপরেখাটিতে উল্লেখিত বিষয়গুলো গণমাধ্যমে যে কোন স্তরের কর্মরতদের মধ্যেই অনানুষ্ঠানিকভাবে গৃহিত নিয়মনীতি।

তাই সরকারের এই নীতিমালাটি বিশেষভাবে বিরোধীমতের গণমাধ্যমের স্বাধীণতা হরণ করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।আর বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট বিষয়ে প্রভূত অস্পষ্টতা থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের খেয়াল খুশীর উপর নির্ভর করেই এই নীতিমালার অপব্যাবহার করা হবে বলে মিডিয়ায় কর্মরতগন আশংখা প্রকাশ করেছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!