DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

আমাদের সৌভাগ্য যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ পেয়েছি :শেখ হাসিনা।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে পারাটা আওয়ামী লীগের জন্য বিরাট সৌভাগ্য উল্লেখ করে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা আমাদের আওয়ামী লীগের একটা বিরাট সৌভাগ্য যে আমরা ক্ষমতায় থেকে স্বাধীনতার রজত জযন্তী উদযাপন করেছি আর আজকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছি ।

বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত শনিবার বিকেলে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।

ইতিহাস বিকৃত করে ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর নাম ও অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বাংলাদেশে এমন একটা সময় ছিল আমাদের বাংলা ভাষা দাবি আদায়ের যে আন্দোলন সেখানে যে তার অবদান ছিল সেটা মুছে ফেলা হয়েছিল। একেবারে অস্বীকার করেছিল।’

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তির সংগ্রামে যে তার অবদান সেটাও মুছে ফেলা হয়েছিল। স্বাধীনতার ঘোষক যাকে সাজানো হয়েছে, সে সরকারের ৪শ টাকা বেতনের কর্মচারি ছিল। কোথাকার কোন মেজর এসে বাঁশিতে ফুঁ দিল আর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল, এটা কি কখনও সম্ভব?

শেখ হাসিনা বলেন, আসলে সত্যকে কখনো কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আর জাতির পিতা তো তার ৭ মার্চের ভাষণে বলেই গেছেন যে ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ কোন কিছু দাবায়ে রাখা যায় না। সত্য উদ্ভাসিত হবেই। সত্য ঠিকই উঠে আসবে। আজকে সে সত্যটা মানুষের কাছে পরিস্কার হয়েছে।

 

তিনি বলেন, ‘মুজিব সৈনিকদের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, কিন্তু তারা থেমে থাকেনি। মুজিব আদর্শ বুকে ধারণ করে এগিয়ে গেছে এবং তারা এগিয়ে যাবে।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ৭ মার্চের ভাষণ, যে ভাষণ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। এখন তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামণ্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ আড়াই হাজার বছরের যত ভাষণ, যত সামরিক অসামরিক নেতারা দিয়েছেন তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। যে ভাষণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে স্বাধীনতার চেতনায়। এই ভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এই ভাষণ পেয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন আমার মা।’ ‘মা বলেছিলেন, এ দেশের মানুষের মন তুমি বোঝ। তোমার মনে যা আসবে তুমি তাই বলবে’, যোগ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

 

‘জিয়া-এরশাদ-খালেদা সবাই ৭ মার্চের ভাষণ বাজানোর জন্য বাধা দিয়েছেন, বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘যারা এই ভাষণ মুছে ফেলতে চেয়েছিল, নিষিদ্ধ করে রেখেছিল আমি জানি না তারা আজ লজ্জা পায় কি না। অবশ্য তাদের লাজ-লজ্জা আছে বলেও মনে হয় না। যে ভাষণ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আজকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সে ভাষণ স্বীকৃতি পেয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল ৭ মার্চের ভাষণ। এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সারাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে মুক্তিযুদ্ধ করে তারা দেশটাকে স্বাধীন করেছেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার রক্তক্ষয়ী ৯ মাসে সবসময়ই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ চলত। মুক্তিযোদ্ধারা এ ভাষণ শুনতেন, তারা যুদ্ধের অনুপ্রেরণা নিতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত বাধা এসেছে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐ বাধা অতিক্রম করে এই ভাষণ বাজিয়েছে, মানুষ ভাষণ শুনেছে।’

তিনি এজন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা অনেক প্রতিকূলতা স্বত্ত্বেও ২১ বছর এ ভাষণ বাজিয়েছেন। যারা শুনেছেন তারাই বুঝেছেন কী অমূল্যসম্পদ এই ভাষণ।’

৭ মার্চের ভাষণের আবেদনকে চিরন্তুন আখ্যায়িত করে বলেছেন, এটি সমসাময়িক কালেও যেমন আগামীতেও তেমনি, যুগ যুগ ধরে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিশ্ববাসীকে মুক্তির চেতনায় উজ্জীবিত করবে।

তিনি বলেন,‘৪৯ বছর ধরে জাতির পিতার ভাষণই একমাত্র ভাষণ যেটা সমগ্র পৃথিবীতে এখনও আবেদন রেখে যাচ্ছে। আর এই ভাষণ যুগ যুগ ধরে শুধু এদেশেরই নয়, সারা বিশ্বের মানুষকে উজ্জীবিত করবে।’

৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ভাষণ যে কতবার, কত দিন, কত ঘন্টা, কত মিনিট বেজেছে, কত মানুষ এই ভাষণ শুনেছে তা কেউ হিসেব করে বের করতে পারবেনা।’

 

প্রধানমন্ত্রী এ সময় মুজিববর্ষে দেশে আর কেউ গৃহহীন থাকবে না মর্মে তার সরকারের অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনা তার সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে আসার উদ্যোগসমূহ তুলে ধরে বলেন,‘মুজিববর্ষে বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে-এটা হতে পারেনা।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীরও দেশের ও জাতির জন্য একটা দায়িত্ব আছে। সেটা যদি করতে পারেন তবে তাই হবে স্বার্থকতা।’

তিনি বলেন, ‘ধরে নিন এটাই আপনাদের কাছে আমার একটা দাবি। আপনারা ঘর করে দেবেন প্রয়োজনে টাকা আমি দেব।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন।

আলোচনা সভায় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ,সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম,মোহাম্মদ নাসিম এবং মুহম্মদ ফারুক খান এবং ইউজিসি’র সাবেক চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বক্তৃতা করেন।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ এবং মাহবুব-উল-আলম হানিফ,কেন্দ্রিয় সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফি এবং উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস.এম. মান্নান কচি ও বক্তৃতা করেন।

শিমূল মুস্তফা অনুষ্ঠানে কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা- ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’, আবৃত্তি করেন।

সংগঠনের প্রচার সম্পাদক ড.আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভা পরিচালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তার সরকার এবং দল মুজিববর্ষ উদযাপনে অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং সেখানে অনেক অর্থও ব্যয় হবে। তবে, মুজিবর্ষে দেশের সকল মানুষকে বাসগৃহের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারলে এর চেয়ে বড় কাজ আর হতে পারেনা।

 

তিনি বলেন,‘বাংলাদেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এ সময় জাতির পিতার ভাষণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্বৃত করেন।

জাতির পিতা বলেছিলেন,‘আমার জীবনের একমাত্র কামণা বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবন পায়।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতা সবসময়ই বলেছেন-‘এই বাংলাদেশের মানুষের অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসার মত মৌলিক চাহিদাগুলো তিনি নিশ্চিত করতে চান।’ এজন্য স্বাধীনতার পর তিনি যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেই সংবিধানেও এই মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতের কথা বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও আমাদের দেশে নদী ভাঙ্গনে গৃহহীন হয়ে যায়। এখনও কিছু মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় যারা ভ’মিহীনও গৃহহীন।’

তিনি বলেন, ‘আমি চাই এই মুজিবর্ষের ভেতরেই বাংলাদেশের একটা মানুষও গৃহহীন থাকবেনা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘সেখানে আমার অনুরোধ থাকবে আওয়ামী লীগের এত নেতা-কর্মী, এত আদর্শের সৈনিক আপনারা যার যার নিজের গ্রামে, নিজের এলাকায়, নিজেরা একটু খোঁজ নেন, কয়টা মানুষ গৃহহীন বা ভ’মিহীণ আছে। তাঁদেরকে আমরা ঘর করে দেব।’

অনুষ্ঠানে সমবেত সকলকে প্রধানমন্ত্রী ‘তার সরকার মুজিবর্ষে সকলের জন্য একটি বাসগৃহের ব্যবস্থা করতে পারবে কি না’, এ সংক্রান্ত প্রশ্ন করলে সকলে সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দেন। তখন প্রধানমন্ত্রী তার এই কথাটি সারাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দলের সকল নেতা-কর্মীকে নির্দেশ দেন।

‘আমি যে কথা বললাম, সে কথা মেনে নিয়ে আশা করবো আপনারা সকলেই উদ্যোগ নেবেন,’ বলেন তিনি।

জাতির পিতার উদ্যোগে করা গুচ্ছগ্রামের অনুকরণে তার সরকারের গৃহহীনদের পুণর্বাসনে গৃহীত ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্প এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে ‘দুর্যোগ সহনীয় ঘর’ করে দেওয়ার প্রকল্পেরও উল্লেখ করেন তিনি। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!