DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

আসন্ন সরকার বিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা জানতে সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার ঘুম হারাম!

102427_1আগামী ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওইদিন তারা ঢাকায় সমাবেশ ও মিছিল করতে পারে।তানভীর হাসান আগামী ৫ জানুয়ারি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচি ও প্রস্তুতি সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে।

সম্প্রতি গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠক ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে ২০ দলীয় নেতাদের বক্তব্য এবং তাদের তৎপরতা আমলে নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাদের মাঠে নামানো হয়েছে। জেলা শহর ও রাজধানী কেন্দ্রিক তথ্য সংগ্রহের পর তা যাচাই-বাছাই শেষে চলতি মাসের শেষদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সব সময় ফিল্ড ওয়ার্ক করে। তারপরও দেশে কোনো মহল যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরো সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে এমন কোনো পক্ষ যেন চক্রান্ত করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। আগামী ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোট কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা করলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।


একটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যায়যায়দিনকে জানান, ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে রাজধানীতে বড় ধরনের শো-ডাউনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওইদিন তারা ঢাকায় সমাবেশ ও মিছিল করতে পারে। তবে ওই সমাবেশের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে সরকার এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে। সমাবেশ শেষে জোটের নেতাকর্মীদের পরিকল্পনা সম্পর্কে সরকারের কাছে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

এ কারণে সমাবেশ পরবর্তী কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করা হতে পারে কিনা সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপির কয়েকজন নেতা তাদের গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ ও ক্ষমতা জাহির করতে ওইদিন রাজধানীতে নাশকতা চালাতে পারেন। নাশকতা সফল করতে কর্মীদের পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হতে পারে। এ কারণে কর্মী থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীর ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। অর্থদাতাদের ওপরও নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী কেন্দ্রিক গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।

পাশাপাশি কয়েকটি জেলার নেতাকর্মীদেরও ওপর বিশেষভাবে নরজদারি রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ওইসব জেলার শীর্ষ নেতাদের মোবাইল ফোনে আড়িও পাতা হতে পারে। এসব জেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, গাজীপুর, পটুয়াখালী, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, লালমনিরহাট, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, খাগড়াছড়ি, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও পাবনা অন্যতম।জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্ণ হবে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় তাদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

তাই এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য নাশকতা এড়াতে স্পেশাল ব্রাঞ্চসহ (এসবি) আরো কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। এজন্য জেলা শহর এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ওয়ার্ডভিত্তিক নেতাকর্মীদের ওপর তীক্ষ্ন নজরদারি চালানো হচ্ছে। তাদের গতিবিধি সম্পর্কেও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে কেন্দ্র থেকে নেতাকর্মীদের কি নির্দেশনা দেয়া হয় সে বিষয়েও খোঁজ-খবর নিচ্ছে গোয়েন্দারা।

স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ সুপার পদমর্যাদার (এসবি) এক কর্মকর্তা জানান, ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে বিএনপির ও তার সহযোগী দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের আগাম প্রস্তুতি জানতে ঢাকা মহানগরের ৪৯টি থানা এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করতে সিটি এসবিকে (মহানগর স্পেশাল ব্রাঞ্চ) নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে প্রতিটা থানার ওসিকে নিজ এলাকায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা প্রতিবেদন আকারে তৈরি করে আগামী ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট জোনের উপ-পুলিশ (ডিসি) কমিশনারের মাধ্যেমে এই প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। জোনের ডিসিরা ওই প্রতিবেদন সঠিক কিনা তা যাচাই করে তা কমিশনার বরাবর পাঠাবেন। তাদের অবস্থান দুর্বল করতে প্রয়োজনে নাশকতামূলক মামলায় ধর-পাকড়ের নির্দেশ দেয়া হতে পারে। একই ধরনের নির্দেশনা রয়েছে জেলা শহরগুলোতেও।

সূত্রমতে, ঢাকা মহানগরের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যরাও প্রতিটা ওয়ার্ডভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করছেন। প্রতিটা ওয়ার্ডেই একজন সাব ইন্সপেক্টর ও একজন এএসআই কাজ করছেন। পাশাপাশি অপর একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে আলাদা একটি টিম কাজ করছে ৪টি থানাভিত্তিক এলাকা নিয়ে।

এসব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অতীতের তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের অবস্থান ও সামনের কর্মসূচিতে তাদের পরিকল্পনা জানার চেষ্টা করছেন। যদিও চিহ্নিত নেতারা এখন এলাকায় সক্রিয় নন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে সক্রিয় কর্মীদের কাছ থেকে তাদের নেতাদের নির্দেশনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে তথ্য আদায় করছেন গোয়েন্দারা। আবার কোথাও ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সোর্সও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারাও তাৎক্ষণিক আগাম খবর গোয়েন্দাদের কাছে সরবরাহ করবেন। এজন্য তাদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়ানোর জন্য অনেকে পুলিশের সঙ্গে গোপনে হাত মিলিয়েছেন।

ডিসি পদমর্যাদার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঢাকা মহানগরের মধ্যম পর্যায়ের বিএনপি যেসব নেতা এখন সক্রিয় রয়েছেন তাদের সম্পর্কেও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। এমনকি তাদের মোবাইল ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে কললিস্ট যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যদিও অনেক নেতা তাদের মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ করে অন্য নাম্বার দিয়ে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। মূলত তাদের পরিকল্পনা জানার পর পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!