DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বিএনপির পূনর্গঠন বাধাগ্রস্থ করতে আবার গন গ্রেফতার শুরু

arrest-generic-thinkstock-240_240x180_81429282251ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিনা কারনে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ । জাপানি নাগরিক হোচি কোনিও হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকেই এ ধরপাকড় শুরু হয়।অথচ বিএনপির নতুন কোন আন্দোলনের পরিকল্পনাও আপাততঃ নেই ,তথাপি এই গন গ্রেফতারের কারন ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে ।

এদিকে গত আগস্ট মাস থেকে বিএনপি দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার শুরুতেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ে চরম উৎকণ্ঠায় বিএনপি। দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, বিএনপি যাতে সংগঠিত হতে না পাওে, সে জন্য প্রশাসন এই গ্রেফতার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

তাঁরা বলছেন, যখন বিএনপি নেতাকর্মীরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেন, তখনই সরকার মিথ্যা মামলা ও ধরপাকড় শুরু করে। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, জাপানি নাগরিক হত্যার ঘটনার পর গত ৩ অক্টোবর রাতে সাদা পোশাকে র‌্যাব পরিচয়ে রংপুর মহানগর বিএনপি নেতা ও রংপুর জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান লাকু এবং বিএনপি নেতা রাশেদুন্নবী খান বিপ্লবকে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।

BNP2 (1)৬ অক্টোবর জাপানি নাগরিক হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা রাশেদুন্নবী খান বিপ্লবসহ দুজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রংপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

রাশেদুন্ননবী খান বিপ্লব ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ভাই। যশোর জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুকে ৪ অক্টোবর মধ্যরাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পর্যায়ক্রমে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়।

৫ অক্টোবর বিকেল ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট সাবুসহ বিএনপির ৩৪ নেতাকর্মী এবং অজ্ঞাত আরও কিছু ব্যক্তির নামে একটি মামলা করা হয়।

পুনরায় ধরপাকড় শুরু হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘এগুলো খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এক কথায় এটাই বলব- দুর্ভাগ্যজনক, মানে একদলীয় ব্যবস্থার দিকেই সরকার এগোচ্ছে। অর্থাৎ বিরোধী দল কোনোভাবেই সংগঠিত হোক অথবা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দলের অপরিহার্যতা- এটা সরকার মানতেই চাচ্ছে না। একদলীয় বা ইংরেজিতে বললে ‘ডোমিনেন্ট ওয়ান পার্টি সিস্টেম’টাই এখন সরকারের বিশ্বাসের মধ্যে আছে। এর বাইরে তারা যেতে চায় না। নতুন করে এখন মামলা দিয়ে বা আবার অ্যারেস্ট করা বা সব মিলিয়ে এত বেশি মামলা একজনের বিরুদ্ধে দেওয়া হচ্ছে, এগুলো অসুস্থতা। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এটা অসুস্থ রাজনীতিরই লক্ষণ।’

আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ৫ অক্টোবর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিল ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের নতুন করে ধরপাকড় শুরু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এর অংশ হিসেবে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেরুল হক সাবু, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া এবং কিশোরগঞ্জ সদর থানা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদকে ৪ অক্টোবর রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এছাড়া ৬ অক্টোবর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন স্বাক্ষরিত এ বিবৃতিতে ড. আসাদুজ্জামান রিপন অভিযোগ করেছেন, ‘বর্তমান সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে দেশব্যাপী বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযানের ধারাবাহিকতায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল-ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ)-এর যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান খোকন এবং দক্ষিণখান থানা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নবী হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ এছাড়া তিনি তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

গত ৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সাদা পোশাকে বিরোধী দলের লোকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপির ৬ নেতাকর্মীকে তুলে নেওয়ার দীর্ঘ ২৪ দিন পর র‌্যাবই তাঁদেও গ্রেফতারের কথা স্বীকার করে। এর আগে কুমিল্লার লাকসামে আমাদের দলের সাবেক এমপি হুমায়ুন কবির হিরুকে তারা তুলে নিয়ে গেছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকেও সাদা পোশাকের র‌্যাব তুলে নিয়ে গেছে বলেও তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজও তাঁদের হদিস পাওয়া যায়নি।

বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, ৫ অক্টোবর দুপুরে ভোলার বোরহানউদ্দিন থানা বিএনপি পুনর্গঠন উপলক্ষে চলা সম্মেলন থেকে ২১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নাশকতার পরিকল্পনাকারী সন্দেহে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। একই রাতে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নানকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৬ অক্টোবর নাশকতার মামলায় মাগুরার শালিখা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনা সরদারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রামে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জেলগেট থেকে আটক করা হয় চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে।

সরকারবিরোধী আন্দোলন পরিচালনার অভিযোগে সাভার উপজেলার ধামসোনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুল গফুরকে গ্রেফতার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। তিনি আশুলিয়া থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার যুবদল আহ্বায়ক কামরুজ্জামানসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নাশকতার অভিযোগে ১৫টি মামলার আসামি বগুড়া জেলা যুবদল সভাপতি, জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও বগুড়া পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ারকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

৭ অক্টোবর বরগুনার আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া বাজার থেকে মো. নুরু মিয়া নামে বিএনপির এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নড়াইলের জেলা যুবদল সভাপতি মশিয়ার রহমানকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।

মাগুরার শালিখা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. অনুপ বিশ্বাসকে (৩২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রেফতার করা হয়েছে জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতাকর্মী। বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিতে গেলে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

বিএনপি নেতাদের নামে মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করে ৬ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘সরকারবিরোধী দলকে ঠেকানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োগ করা হয়েছে। যার ফলে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই।

তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকার কী তাঁদের রাজনীতি করতে দেবে না।’ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশি হত্যায় বিএনপি নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। অথচ কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতাদের নামে বিদেশি হত্যায় যোগসূত্রের অভিযোগ করছেন। তাতে মনে হয় দেশে কোনো তদন্তকারী সংস্থা ও বিচারের প্রয়োজন হবে না। যাকে ইচ্ছে ধরেই তারা শাস্তি দিয়ে দেবে। এর ফলে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের পার পেয়ে যাওয়ার অবকাশ রয়েছে। আমরা চাই এ প্রক্রিয়া বন্ধ হোক।’

যশোরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম গুরুতর অসুস্থ। তাঁর হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে। তাঁর কিডনির অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। হার্টের চিকিৎসার আগে তাঁর কিডনির চিকিৎসা করতে হবে। নানা জটিলতায় চিকিৎসকরা তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি ৪ অক্টোবর যশোর পাসপোর্ট অফিসে যান পাসপোর্ট স্বাক্ষর করাতে। তরিকুল ইসলাম যাতে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে না পারেন, সে জন্য সরকার কাল্পনিক গল্প তৈরি করে তাঁকেসহ যশোর বিএনপির ৩৪ জনের নামে মামলা দিয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে তরিকুল ইসলাম ও বিএনপি নেতাদের চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া।’

বিএনপির এ সিনিয়র নেতা বলেন, ‘দল পুনর্গঠন এবং সুসংহত প্রক্রিয়ায় বাধা দিতেই নেতাদের গ্রেফতার ও নতুন করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই দল পুনর্গঠন ও সুসংহত করে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে। সে জন্য অবিলম্বে দলের সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, রিজভী আহমেদ, রাজশাহী সিটি মেয়র মোসাদ্দেক আলী বুলবুল, গাজীপুরের মেয়র মান্নান, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের মেয়র জিকে গউসসহ সব নেতার মুক্তি দাবি করছি।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!