DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

আজ পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৭তম বার্ষিকীঃএখনও কাজ শুরু হয়নি পার্বত্য ভূমি কমিশনের, বেড়েছে সহিংসতা

Bandarban Pahar_2_32097পার্বত্য শান্তি চুক্তির ১৭ বছরেও পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি, কমেনি ভূমি নিয়ে বিরোধ। অন্যদিকে বেড়ছে সহিংতা, বৈষম্য। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার মূলে রয়েছে ভূমি।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ের ভূমি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে শান্তিচুক্তির আলোকে প্রায় এক যুগ আগে গঠিত হয়েছিল ভূমি কমিশন। কথা ছিল, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বাধীন এ কমিশন পাহাড়ে ভূমির বিরোধ নিষ্পত্তি করবে, সেখানে প্রতিষ্ঠা করবে শান্তি। এ ক্ষেত্রে কমিশনের রায়ই হবে চূড়ান্ত। এর বিরুদ্ধে আদালতে কোনো আপিল চলবে না।

 

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য ভূমি কমিশন শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভূমির একটি বিরোধও নিষ্পত্তি করেনি। খাগড়াছড়িতে কমিশনের অফিস থাকলেও অন্য দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানে এর অফিসও নেই। নেই পর্যাপ্ত লোকবল, তহবিল। যথাযথ আইনের অভাবে কমিশন রয়ে গেছে অকার্যকর। আর কমিশনকে আইনি ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে গত আওয়ামী লীগ, বিএনপি-জামায়াত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং আবারও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দফায় দফায় হয়েছে অসংখ্য বৈঠক, আলোচনা, পত্রবিনিময়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি। আর এ সুযোগে পাহাড়ে বেড়েছে ভূমির বিরোধ। এ নিয়ে সেখানে একের পর এক সহিংসতাও ঘটছে।

 

এমন বাস্তবতার মধ্যেই আজ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৭তম বার্ষিকী। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে জনসংহতি সমিতির চুক্তি সই হয়েছিল। জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, সরকারগুলোর সীমাহীন উদাসীনতায় ভূমি কমিশনসহ চুক্তির মূল বিষয়গুলোই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আর সরকারপক্ষ বলছে, শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। চুক্তির অনেক শর্তই পূরণ করা হয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।

 

জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, শান্তিচুক্তির বেশির ভাগ শর্তই পূরণ হয়েছে। বাকি শর্তগুলো বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই বাস্তবায়ন করা হবে। চুক্তি বাস্তবায়নে এ সরকার পুরোপুরি আন্তরিক।

 

অন্যদিকে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেন, ‘শান্তিচুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে সরকার অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সরকারের আলামত দেখে স্পষ্ট বলা যায়, চুক্তি বাস্তবায়নে তারা আর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবে না। চুক্তি বাস্তবায়নের প্রশ্নে বড়জোর তারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে পারে। তাই চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন দাবিতে আমরা আগামী ১ মে থেকে পাহাড়ে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছি। পাশাপাশি চুক্তিবিরোধী তথা জুম্ম (পাহাড়ি) স্বার্থবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ড করা হবে প্রতিরোধ।’

 

অসহযোগ কর্মসূচির বিষয়ে সন্তু লারমা বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের বল প্রয়োগ করে দমন করতে চায়, তা হলে তা ঠিক হবে না। আমরা তো শান্তিবাদী। কিন্তু পরিস্থিতি বলে দেবে আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে না অশান্তিপূর্ণ হবে।’

 

গত শনিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়ে ১ মে থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।

 

এর প্রতিক্রিয়ায় গত সোমবার রাঙামাটিতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা দীপংকর তালুকদার। তিনি বলেন, এই অসহযোগ আন্দোলন সহিংস হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।

 

এদিকে সন্তু লারমা বলেন, চুক্তির অন্যতম মৌলক শর্ত ভূমি কমিশন নিয়ে ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিস্তর বৈঠক হয়েছে। তিনি জানান, একটি যথাযথ আইনের অভাবে কমিশন গঠনের প্রায় এক যুগ পরও তা কাজই শুরু করতে পারেনি। আর কার্যকর আইন তৈরি করতেই পেরিয়ে গেছে ১৩ বছর। এখনো এটি সংশোধিত আকারে পাস হয়নি। সবশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। ‘সংশোধিত ভূমি কমিশন বিল, ২০১৩’ নিয়ে ওই বৈঠকে পাঁচটি মতবিরোধের মধ্যে একটি বাদে সবকটি নিষ্পত্তি হয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘উপজাতি’ অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হলেও পার্বত্য অঞ্চলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে এ পর্যন্ত কোনো সরকারই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে প্রতিনিয়তই পাহাড়ি-বাঙালি জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতও বাড়ছে।

 

মানবাধিকার সংস্থা কাপেং ফাউন্ডেশনের হিসাবে, শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে অন্তত ১৩টি রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছে। এসব সংঘাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্মম হিংসার বলি হয়েছে পাহাড়ি গ্রামবাসী। হিংসার অনলে পুড়েছে খাগড়াছড়ি, বাঘাইহাট, মাটিরাঙা, গুইমারা, তাইনদংসহ অসংখ্য পাহাড়ি জনপদ।

 

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন জেলা নিয়ে গড়ে ওঠা পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট আয়তন প্রায় পাঁচ হাজার ৯৩ বর্গমাইল। সেখানে রয়েছে ১২টি ভিন্ন ভাষাভাষি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বাস। পাহাড়ি-বাঙালি মিলিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে লোকসংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। পাহাড়ি-বাঙালি জনসংখ্যার অনুপাত ১৯৮১ সালে ৫৮.৬ শতাংশ ও ৪১.৪ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ৪৯ ও ৫১ শতাংশ এবং সবশেষ ২০০১ সালের হিসাবে ৪১ শতাংশ ও ৫৯ শতাংশ।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!