DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

মধ্যবর্তি নির্বাচনের সম্ভাবনাঃ বিএনপির দিকে ফের ঝুঁকছেন এরশাদ!

1416886237মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা মাথায় রেখে নতুন করে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ছোটভাই জিএম কাদেরকে দিয়ে তিনি দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে চান। 



মঞ্জুর হত্যা মামলা ঝুলে যাওয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে মূল্যায়ন না করাসহ সরকারের কাছে আস্থা ও গুরুত্বহীন হওয়ায় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি এখন বিএনপির দিকেই ঝুঁকছেন বলে তার ঘনিষ্ঠসূত্র জানিয়েছে।



জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টার অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ গত রবিবার পাঁচ দিনের সফরে মালয়েশিয়া গেছেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে আছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান ও জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠ মেজর অব. খালেদ আখতার। সেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধি প্রবাসী নেতাদের সঙ্গে গোপনে তার দেখা-সাক্ষাতের কথা শোনা যাচ্ছে। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেই দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে এ সফর কর্মসূচিতে রাখা হয়নি। কী কারণে তিনি হুট করে মালয়েশিয়া গেছেন দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও তা জানানো হয়নি। আগামী ২৮ নভেম্বর এরশাদ দেশে ফেরার কথা রয়েছে। 



দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, এরশাদের বিএনপি কানেকশনের মিশনে জিএম কাদেরের সঙ্গে ফ্রন্টলাইনে কাজ করছেন তার বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ। মিশনের অংশ হিসেবে তারেকের সঙ্গে কিংবা তার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত্ করতে তিনদিন আগে লণ্ডনে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। ববির মিশন সফল হলে সেখান থেকেই ববি হাজ্জাজ মালয়েশিয়ায় এরশাদের সঙ্গে তারেকের প্রতিনিধিদের যোগাযোগ করিয়ে দেবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। 

ওই সূত্র জানায়, এইচএম এরশাদ সভা-সমাবেশে বিএনপির চরম বিরোধিতা করে এলেও আগামীতে রোষানল থেকে বাঁচতে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। যাতে সময়-সুযোগে এই সরকারের অবমূল্যায়নের প্রতিশোধ নিতে পারেন। এজন্য তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গোপনে জিএম কাদের ও ববি হাজ্জাজকে দিয়ে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 



download (86)সূত্র জানায়, জিএম কাদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর চরম ক্ষুব্ধ। নির্বাচন বর্জনে এরশাদের পক্ষ নেয়ায় পরে তিনি আর মন্ত্রী এমপি হতে পারেননি। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার জন্য দলীয় রাজনীতিতেও কোণঠাসা তিনি।

এসব কারণে তিনি নিজেই বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চান। তাছাড়া দলের প্রভাবশালী মহাসচিব গ্রুপটির কাছে ছোটভাই কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারছেন না এরশাদ। তাদের কাছে অনেকটা অসহায় হলেও ছোট ভাইয়ের এমন পরিস্থিতি দেখে সাবেক রাষ্ট্রপতি নিজেও ত্যক্ত-বিরক্ত। সরকারের কাছে তদবির করেও কাদেরকে মন্ত্রী করতে পারেননি তিনি। তাই ছোটভাইকে তিনি পার্টির ফ্রন্ট লাইনে নিয়ে আসতে চান। বিএনপির সঙ্গে নতুন করে সুসম্পর্ক তৈরি করার দায়িত্ব দেন। কাদের নিজেও ভবিষ্যতে এরশাদকে মামলা-মোকাদ্দমা, বিএনপির রোষানল থেকে বাঁচাতে এবং এমপি, মন্ত্রী হয়ে পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী। 



জানা গেছে, জিএম কাদেরের সঙ্গে বিএনপির বেশ কিছু সিনিয়র নেতার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এরশাদের অবস্থান, বিএনপিবিরোধী বক্তব্যসহ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে একাধিক বৈঠকের কথাও শোনা গেছে। জিএম কাদের বিএনপি নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন এই বলে— সরকারের চাপে বাধ্য হয়ে তার ভাই বিএনপির বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছেন। সময় এলে ৫ জানুয়ারির আগের মতো ঘোষণা দিয়েই সরকারের বিরুদ্ধে এরশাদ আবারও অবস্থান নেবেন।

এমন প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিএনপি নেতৃত্ব জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ওপর ‘কোনো প্রকার আস্থা নেই’ সাফ জানিয়ে দেন। তারা এও বলেছেন— ‘এরশাদ নয়, জিএম কাদের দায়িত্ব নিলে তারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করবে। বিএনপির কাছে এরশাদের পরিবর্তে জিএম কাদেরই বেশি আস্থাভাজন। আর কৌশলী এরশাদ সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তার ভাইকে দিয়ে বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, এরশাদের বিএনপি কানেকশনের মিশনে জিএম কাদেরের হয়ে মাঠে কাজ করছেন পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ।

৫ জানুয়ারির আগে এরশাদকে সিএমএইচএ নিয়ে যাওয়ার পর তার মুখপাত্র নিযুক্ত হয়ে হঠাত্ করে আলোচনায় আসেন বহুল আলোচিত মুস বীন শমসেরের পুত্র এই ববি। এ সময় তিনি বিএনপির হয়ে এরশাদের নির্বাচন বর্জনের পক্ষে জিএম কাদেরের সঙ্গে কাজ করেন এবং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি ব্যর্থ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে লন্ডন পাড়ি জমান। জিএম কাদেরের পরামর্শে ববি সেখানে বসে বিশেষ বার্তা পাঠিয়ে নেতাকর্মীদের  ভোটদান থেকে বিরত থাকাসহ নির্বাচন বর্জনে অটল থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। 



নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দেশে এসে বেশ কিছুদিন চুপচাপ ছিলেন ববি হাজ্জাজ; কিন্তু অতি সম্প্রতি এরশাদের সিগন্যাল পেয়ে তিনি আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে জিএম কাদেরের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দশম নির্বাচনের আগে ববি হাজ্জাজ একটি জরিপ চালিয়েছিলেন। ওই জরিপের মাধ্যমে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং কৌশলে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার জন্য পার্টির চেয়ারম্যানকে প্ররোচনা দেন।   

এ প্রসঙ্গে জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও লন্ডনে থাকায় ববি হাজ্জাজের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তার একান্ত সচিব মমিনুল আমিন লন্ডনে ববির সঙ্গে যোগাযোগ করে  বলেন, ‘তিনি দাবি করেছেন তারেকের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন। ব্যক্তিগত কাজে তিনি লন্ডনে এসেছেন।’ ব্যক্তি উদ্যোগে নয়, দলীয় প্রচেষ্টায় কেবল বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির যোগাযোগ হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ববি।  



দলের এক প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, ‘সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত দলের অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে দায়িত্ব দিয়েও সরকারের সঙ্গে দুরত্ব কমাতে পারেননি এরশাদ। বরং তাদের কারণে দিন দিন সরকারের সঙ্গে তার দূরত্ব আরও বাড়ছে। এরইমধ্যে সরকারের শীর্ষকর্তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি আস্থাভাজনে পরিণত হন বিরোধী নেতা রওশন।

এই পরিস্থিতিতে কোনো কারণে দেশে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়ে গেলে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগের অংশ হিসেবে জিএম কাদেরের পরামর্শে এরশাদ মাঝেমধ্যে সভা সমাবেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলে যাচ্ছেন এবং পার্টির নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।  সেই নির্বাচনে ১৫১ আসন জিতে তিনি যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় যেতে চান। নির্বাচনের অংশ হিসেবে এরশাদ তার ভাইয়ের মাধ্যমে ববি হাজ্জাজকে দিয়ে বর্তমানে সারাদেশে সাংগঠনিক জরিপ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইতিমধ্যে ববি হাজ্জাজের একটি টিম দেশের প্রায় ১২ জেলা সফর শেষ করেছেন। হঠাত্ করে তার এমন তত্পরতায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে দলীয় শিবিরে। দলের মহাসচিব বাবলুর ঘোর বিরোধিতা সত্ত্বেও ববি হাজ্জাজ এরশাদের নির্দেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!