DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

এবার দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তার অর্থ কেলেংকারীঃভীনদেশে দেশের সন্মান ভুলুন্ঠিত।

দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন, ইনসেটে ড. নাহিদ রশীদ {focus_keyword} এবার দিল্লি দূতাবাস কর্মকর্তার অর্থ কেলেঙ্কারি nahid01

দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন, ইনসেটে ড. নাহিদ রশীদ

দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ নেপালে নিমচন্দ্র ভৌমিক, ব্রিটেনে মিজারুল কায়েস, লেবাননে গাউসুল আজমের পর এবার ভারতের বাংলাদেশ হাইকমিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ড. নাহিদ রশীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তোলপাড় চলছে ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশনে।

বিব্রতবোধ করে হাইকমিশন থেকে পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কমিটি ভারতে গিয়ে অভিযোগ তদন্ত করলেও রহস্যজনক কারণে এখনো প্রতিবেদন দেয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, এই সুযোগে মন্ত্রণালয় ও হাইকমিশনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট পুরো অনিয়ম-দুর্নীতিটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তা ভারতে গিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তার আতিথিয়েতা গ্রহণ করেছেন। যার কারণে হাইকমিশন থেকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সব ধরনের অনিয়ম ও অর্থ লোপাট সংক্রান্ত নথিপত্র দিলেও তিনি সেগুলো প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করছেন না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ড. নাহিদ রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো- হাইকমিশনে যোগ দেয়ার পর তিনি বিভিন্ন বিল-ভাউচার জাল জালিয়াতি ও ঘষামাজা করে সরকারের বিপুল অংকের টাকা আত্মসাত করেছেন।

জানা গেছে, ড. নাহিদের মেয়ে নাহরীন ফাতিমা নয়াদিল্লিতে দিল্লি পাবলিক স্কুল ইন্টারন্যাশনাল এর  সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুল সূত্রে জানা যায়, নাহরীনের মাসিক বেতন ১১ হাজার টাকা। কিন্তু ড. নাহিদ জালিয়াতির মাধ্যমে স্কুলের ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে হাইকমিশনের কোষাগার থেকে বেতন তুলছেন মাসিক ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা।

এছাড়া যোগদানের পরপরই তিনি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই নতুন বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। কোনো অনুমতি ছাড়াই তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আগের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরের জন্য নির্ধারিত বাড়িটি ছেড়ে দেন। একই সঙ্গে দ্বিগুণ বেশি দামে একটি বাড়ি ভাড়া করেন। আগের বাড়িতে যেসব আসবাবপত্র ছিল সেগুলো ফেলে দিয়ে সরকারের বিপুল অংকের টাকা খরচ করে নতুন আসবাবপত্র কিনেছেন। এই ক্ষেত্রেও তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন নেননি।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড. নাহিদ রশীদ হাইকমিশন ও মন্ত্রণালয়ের কাউকে পরোয়া করেন না। কথায় কথায় তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। নিজেকে সাবেক সচিবের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পুরো হাইকমিশনকে তটস্থ করে রাখেন। এই ভয়ে হাইকমিশনের কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না। তিনি যোগদানের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যও ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ভারতে কমার্শিয়াল কাউন্সিলরের পুরনো বাড়িটি খুবই ভালো ছিল বলেও জানান তিনি।

ড. নাহিদ সরকারের অনুমোদন ছাড়াই নিজের পছন্দমতো ঠিকাদার নিয়োগ করে নতুন আসবাবপত্র কেনেন। এখন তিনি ওই ঠিকাদারের টাকা পর্যন্ত দিতে পারছেন না। ঠিকাদার টাকার জন্য প্রতিদিন হাইকমিশনে ধর্ণা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, নতুন আসবাবপত্র কেনায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা গচ্চা গেছে সরকারের। সম্প্রতি ভুবনেশ্বরে মেলার নামেও নানা কেলেঙ্কারি করেছেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, মেলায় ৯২৬ কেজি মালামাল পরিবহনের কথা থাকলেও কাগজপত্রে ২ হাজার ৯২৬ কেজি মালামাল পরিবহন দেখিয়ে ট্রাক ভাড়াটাও আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে এই ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়া সে বিল আটকে দিয়েছেন হাইকমিশনার।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ড. নাহিদ রশীদের এসব অপকর্মের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর আওতায় একটি সংবাদপত্রের পক্ষ থেকে সব ধরনের ডকুমেন্টসহ দরখাস্ত দিলেও গত দুই মাসেও সে দরখাস্তর কোনো জবাব দেয়নি মন্ত্রণালয়। উল্টো মন্ত্রণালয় থকে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের বাংলাদেশ হাইকমিশনে ড. নাহিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। ল্যান্ডফোনে যোগাযোগ করা হলে হাইকমিশন থেকে জানানো হয়, তিনি সিটে নেই। ভারতের বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে তথ্য অধিকার আইনে এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে মেইল পাঠানো হলেও তার কোনো রিপ্লাই পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক  দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ  কে বলেন, ‘ড. নাহিদ রশীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি যেহেতু ভারত হাইকমিশনে বাণিজ্যিক কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাই বিষয়টা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তদারকি করছে। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!