DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

হংকংয়ে শ্রমিক রপ্তানির সুবর্ন সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ

download (53)হংকংয়ে শ্রমিক রপ্তানির পর্যাপ্ত সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। হংকংয়ের জীবনধারণ পদ্ধতির সাথে অভ্যস্ত হতে না পারা বাংলাদেশীরা ফিরে আসছেন অধিকহারে। তবে বাংলাদেশই শুধু নয়, হংকং থেকে ফিরে যাচ্ছেন অন্যান্য দেশের অধিবাসীরাও।



এদিকে, হংকংয়ে কাজ করতে যাওয়া বাংলাদেশী ও মায়ানমারের শ্রমিকরা ফিরে আসতে শুরু করায় শ্রমিক সংকটে পড়েছে হংকং। এজেন্সিগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিপিনি কর্মীদের ভাড়া করা ক্রমাগত কঠিন হয়ে পড়ছে কারণ তারা হংকংয়ের তুলনায় তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের কারখানাগুলোতে চাকরি করতেই বেশি পছন্দ করছে। হংকংয়ে তারা বেতন পেত ৪ হাজার ১০ হংকং ডলার, এর তুলনায় তারা আরো বেশি বেতন পাচ্ছে। ফলে সেখানে কাজ করতেই তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে।

হংকংয়ের জনসংখ্যার তিন শতাংশই বিদেশী শ্রমিক। শহরটিতে প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার শ্রমিক বাস করে। তাদের অর্ধেক এসেছে ফিলিপাইন থেকে এবং বাকি অর্ধেক এসেছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। কর্মসংস্থান এজেন্সিগুলো জানায়, আগে কত শ্রমিক ভাড়া করা হবে তা বাছাই করার সুযোগ দেওয়া হত নামী নিয়োগদাতাদের। কিন্তু এখন শ্রমিক পাওয়াই এত দুষ্কর যে নিয়োগদাতাদের বাছাই করার আর কোন সুযোগ দেওয়া হয় না।

মায়ানমার থেকে প্রথম ১৯ জনের যে দলটি হংকংয়ে যায় তার পরের ছয় মাসে, আরো এক ডজন শ্রমিক সেখানে যায়। কিন্তু শহরটির জীবনধারণ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে না পারায় তাদের প্রতি ছয় জনে একজন ইতোমধ্যেই বাড়িতে ফিরে গেছে। বাংলাদেশ থেকে প্রথম দলটিকে হংকংয়ে নিয়ে যাওয়া রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি জানায়, দলটির প্রতি পাঁচ জনে এক জনে বাড়ি ফিরে গেছে।

মায়ানমার থেকে শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার লাইসেন্সধারী একমাত্র এজেন্সি গোল্ডেন মাইন্ড এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ল ইউ কিং জানান, এই শহরে চাকরি নিয়েছিল সর্বমোট ৯০ জন। কিন্তু এদের ১৪জনই ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরে গেছে। ল বলেন, ‘কেউ কেউ গেছে কারণ তারা এখানকার জীবনের সাথে অভ্যস্ত হতে পারে নি। কেউ কেউ আমাদের কারণ জানাতে চায় নি। শুধু বলেছে তারা বাড়িতে যেতে চায়। এখানে আসার আগে এখানকার কাজ নিয়ে তাদের কল্পনার সাথে বাস্তবতা সম্ভবত মেলেনি’।

২০১৩ সালে, হংকংয়ে ৩ লক্ষ ২০ হাজার বিদেশী শ্রমিকদের মধ্যে ৫০ শতাংশ এসেছিল ফিলিপাইন থেকে, ৪৭ শতাংশ এসেছিল ইন্দোনেশিয়া থেকে এবং বাকিরা থাইল্যান্ড, মায়ানমার, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা থেকে। হংকং আইনে বলা হয়, বাইরে থেকে আসা এই ধরণের শ্রমিকদেরকে অবশ্যই তাদের চাকরিদাতাদের সঙ্গে থাকতে হবে। বিগত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের বেতন কমপক্ষে ৪ হাজার ১০ হংকং ডলার করার নিয়ম করা হয়।

এদিকে নিয়োগদাতা কর্তৃক শ্রমিকদের অত্যাচার ও নির্যাতনের নানান হাই প্রোফাইল কেস আদালতে রয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার অভিবাসী শ্রমিকদের হংকংয়ে শ্রম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে।

ল প্রথম বছরে মায়ানমারের দুই হাজার শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এখন, অনুমোদন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মাত্র ৯০ জন পৌঁছাতে পেরেছে। ল বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কার্যাবলি সম্পন্ন করতে হংকং সরকারের সময় লাগে এক মাস। কিন্তু মায়ানমারে এটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে দুই-তিন মাস। এখন আরো বেশি নিচ্ছে’। ল বিশ্বাস করেন, নাগরিকদের নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবার আগে এজেন্সি কিভাবে কাজ করছে তা মায়ানমার সরকার মনিটর করছে।

টেকনিক এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস সেন্টারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তেরেসা লিউ সুই লান শ্রমিকদের নতুন উৎস বের করার চেষ্টায় মায়ানমারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তিনিও জটিলতার সম্মুখীন হন। তিনি বলেন, ‘এখন আমি পুনর্বিবেচনা করছি। আপনাকে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে, কিন্তু লাভ হবে খুবই কম’।

তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ান সরকার রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিকে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য ১৩ হাজার ৫ শত হংকং ডলার চার্জ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু মায়ানমার এই এজেন্সিগুলোকে শ্রমিকদের জন্য ‘খুব সামান্য পরিমাণে’ চার্জ করার অনুমতি দেয়’।

লিউর এজেন্সিই হল প্রথম এজেন্সি যেটি বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পায়। গত বছর মে মাসে বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রথম দলটি পৌঁছানোর পর আরো ৩০০ জন হংকংয়ে যায় তার মতে, ‘২০ শতাংশই কাজ ত্যাগ করে চলে যায় কারণ তারা এখানকার জীবনের মাথে মানিয়ে নিতে পারে না। তারা কখনোই কল্পনাই করেনি এখানকার কাজ এত কঠিন হতে পারে। কেউ কেউ একবছর পরই চলে যায় কারণ ততদিনে তারা যথেষ্ট উপার্জন করতে পেরেছে’।

এশিয়া মাইগ্র্যান্ট কো-অর্ডিনেটিং বডির বক্তা ইমান ভিলানুয়েভা তার অতীত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, ২৩ বছর আগে শ্রমিক হিসেবে হংকংয়ে এসে তিনি খুব ধাক্কা খেয়েছিলেন কারণ সেখানে তার জীবন ফিলিপাইন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘আমি সারারাত কান্না করতাম আর বাড়িতে ঘনঘন ফোন করার পেছনে প্রচুর ব্যয় করতাম’।

অনেক শ্রমিক প্রায় আধবছরের মত সময়ও গৃহকাতরতা অনুভব করেন। তার পরামর্শ, ‘এখানকার ঘরোয়া শ্রমিকদের সাথে বন্ধুত্ব করার উপদেশ রইল তাদের প্রতি। তবে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের জন্য এটা খুব কঠিন হবে কারণ তাদের কমিউনিটি বেশ ক্ষুদ্র’।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!