DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

শান্তিমিশনে র‌্যাবের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললো জাতিসংঘ

RAB {focus_keyword} শান্তিমিশনে র‌্যাবের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন RAB

 জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে র‌্যাবের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘের সহযোগী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইরিন (আইআরআইএন)।

জুলাই মাসের শেষ দিকে সংস্থাটির প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ ভারত, নেপাল এবং নাইজেরিয়ার সেনা সদস্যদেরও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তাদের অতীত কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে পর্যালোচনা ও যোগ্যতা যাচাইয়ের সুপারিশ করা হয়েছে।

র‌্যাবের সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে বিচার-বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, নির্বিচার গ্রেপ্তারের অসংখ্য ঘটনার সঙ্গে র‌্যাবের নাম বারবারই এসেছে।

ইরিনের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১১ সালে ১৬ মার্চের ঘটনা। সেদিন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা ঝালকাঠিতে ১৬ বছর বয়সী তরুণ লিমন হোসেন মাঠে গুরু আনতে যাচ্ছিল। এসময় কয়েকজন র‌্যাব কর্মকর্তা তার পাশে মোটরসাইকেল থামায়। একজন তাকে জাপটে ধরে ও তাকে সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করে। তখন লিমন বলে, ‘আমি সন্ত্রাসী নই, ছাত্র। কিন্তু, তাদের মধ্যে একজন আমার বাম পায়ে গুলি করে সেখান থেকে চলে যায়। প্রাণ বাঁচাতে আমার পা কেটে ফেলতে হয়েছে। আমি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার। তা সত্ত্বেও দায়ী র‌্যাব কর্মকর্তারা বহালতবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’

এরকম বহু ঘটনায় আধা-সামরিক বাহিনী র‌্যাব ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। তাদের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে নির্যাতন ও অসদাচরণ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, বিচারবহির্ভুত হত্যা ইত্যাদি। গত ১০ বছরে প্রায় ৮০০ জন র‌্যাবের হাতে নিহত হয়েছে।

প্রতিবেদনে নেপালের সেনাবাহিনীর অসদাচরণের ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়েছে। ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মাইনা সুনুওয়ার নামে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে গ্রেপ্তার করে রয়্যাল নেপাল আর্মি সদস্যরা। মেয়েটিকে শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। সে বছর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে নেপালের ৩ হাজারেরও বেশি সেনা কর্মরত ছিল।

২০০৭ সালে আর্মি জেনারেল নিরঞ্জন বাসনেত এবং তার অধীনস্থ আরো তিন অফিসারকে সুনুওয়ার হত্যা মামলায় নেপালের একটি আদালত অভিযুক্ত করেন। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ চাদ শান্তিমিশন থেকে বাসনেতকে বহিষ্কার করে। অবশ্য বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতিসংঘ কৌশলে নিজেদের দায় এড়িয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপেন সোসাইটি পলিসি সেন্টারের নীতিবিষয়ক সিনিয়র বিশ্লেষক জেরি ফ্লাওয়ার বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার রক্ষায় ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা পাঠানো বিশ্বের শীর্ষ ৭টি দেশের মধ্যে অন্যতম এ ৪টি দেশ। সে কারণে সেনাদের মাঠে নামানোর পর কী হচ্ছে সেক্ষেত্রে তাদের নীতি ও কর্মকাণ্ডের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।’

বর্তমানে সারা বিশ্বে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ৮২ হাজারেরও বেশি সেনা নিযুক্ত রয়েছেন। যেখানে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৪৬৭ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। ২০১৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা প্রেরণ বাবদ প্রতি মাসে রাষ্ট্রগুলো সেনাপ্রতি ১ হাজার ৩৩২ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৩ হাজার ২৩৩ টাকা পেয়ে থাকে। একই সঙ্গে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয়া সেনাদের কাছেও গর্বের বিষয়।

সম্প্রতি যোগ্যতা যাচাই প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। ২০১২ সালে জাতিসংঘ শান্তিমিশনের সেনা পাঠাতে আগ্রহী রাষ্ট্রগুলোর সরকার এবং শান্তিরক্ষী বাহিনীতে আগ্রহী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সেনা বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার সচেতনতা যাচাইয়ের একটি নীতিমালা পাস করেছে। এ নীতিমালা অনুযায়ী মানবাধিকারের বিষয়ে সে সরকার এবং ব্যক্তির অবশ্য পরিষ্কার ভাবমূর্তি থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী দপ্তরের (UN Department of Peace-keeping Operations and Department of Field Services- DPKO-DFS) নীতি, নিরীক্ষণ ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক ড্যাভিড হায়েরি বলেন, ‘এই নীতি শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি এই বার্তা দিচ্ছে যে, জাতিসংঘ নিয়মনীতি এবং মানবাধিকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।’

কিন্তু এটা দুঃখজনক সত্য যে, জাতিসংঘ মিশনের বিশাল অংকের সদস্য সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে অনেকের মানবাধিকার রেকর্ড খুবই খারাপ। এছাড়া তাদের সশস্ত্র বাহিনী দেশেই বহুবছর ধরে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানে যুক্ত রয়েছে যা প্রায়ই বিতর্কিত।

জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, শান্তিরক্ষী বাহিনীতে লোক নেয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের শুদ্ধিঅভিযান চলছে। মানবাধিকার কর্মীরাও এ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য সরাসরি সে দেশের সরকারকে চাপ দেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন: যেখানে তারা জাতিসংঘের ইউনিফর্ম পরে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞরা শান্তিমিশনে যোগ দিতে ইচ্ছুক লোকদের যোগ্যতা যাচাই তাদের দেশ থেকেই শুরু করা উচিৎ বলে মনে করছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!