DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

‘বাংলাদেশ কেবল নামেই স্বাধীন!’:সিরাজুল আলম খান(দাদা ভাই)

Capture10-300x213বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম অগ্রসেনানি সিরাজুল আলম খান ‘রাজনীতির রহস্য-পুরুষ দাদাভাই’ নামে খ্যাত। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য ও আলোচনার জন্যও তিনি সমধিক পরিচিত। রাজনীতির অন্যতম এই প্রবাদপুরুষ, এবার বাংলাদেশ নামেমাত্র স্বাধীন বলে মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশ নামে স্বাধীন হলেও আইন-কানুনে পুরোপুরি পাকিস্তানি।

সিরাজুল আলম খানের মতে, ব্রিটিশরা শাসন-শোষণের উদ্দেশ্যে ১৮৬১ সালে যেসব আইন করেছিল, তা আজও বহাল আছে। বৃটিশদের করা আইনে বাংলাদেশ চলতে পারে না বলে বিভিন্ন সময় কথা উঠলেও আজো পরিবর্তিত হয়নি, সেসব আইন। বাংলাদেশে প্রচলিত বারোশরও বেশি আইনের অধিকাংশই বৃটিশ আমলে প্রণীত। পাকিস্তান আমলেও এ আইনের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। এমন কি স্বাধীন বাংলাদেশেও তার একটিও পরিবর্তিত হয়নি।

সিরাজুল ইসলাম খানের মতে, একটি পাঠচক্রের পুস্তিকায় ৪৩ বছর ধরে ‘পাকিস্তান’ শব্দের জায়গায় ‘বাংলাদেশ’ বসিয়ে দেশ শাসন করা হচ্ছে। এর ফলে দেশটা নামে স্বাধীন বাংলাদেশ কিন্তু আইন-কানুনে পাকিস্তানি।

তিনি বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেন, বৃটিশ আমলে প্রণীত এসব আইনই হলো ঔপনিবেশিক আইন। এ আইন দিয়ে বিদেশি শক্তিরা তাদের উপনিবেশ (অধীনস্থ দেশ) পরিচালনা করে থাকে; তার নামই পরাধীনতা। আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় এসব আইনের সংস্কার করা ছাড়া দেশের অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশের প্রত্যেকটি আইনই বৃটিশ আমলে প্রবর্তিত এবং পাকিস্তান আমলেও চালু ছিল। এ আইন দিয়েই বৃটিশ-পাকিস্তানিরা আমাদের শাসন, শোষণ এবং নির্যাতন করত। এ আইন ও বিধি দিয়েই তারা আমাদের পরাধীন করে রাখার পাকা ব্যবস্থা করেছিল।

নবম জাতীয় সংসদ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রচলিত আইনের সংস্কার করার পক্ষে মত দিয়েছিল। কমিটির মতে, ব্রিটিশরা এ দেশ শাসনের উদ্দেশ্যে ১৮৬১ সালে যেসব আইন করেছিল তা দিয়েই কাজ চালান হচ্ছে।’ আইন কমিশনের চেয়ারম্যানও প্রচলিত আইনের সমালোচনা করে বলেন, ‘১৮৬১ সালে ব্রিটিশরা এ দেশ শাসন করার জন্য যেসব আইন করেছিল তা দিয়ে আজকের বাংলাদেশ চলতে পারে না।’

সিরাজুল আলম খান বলেন, পরাধীন আমলের সব আইনকানুন, বিধিব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য বাঙালিরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে দীর্ঘকাল ধরে; যা নয় মাসব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে শেষ হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময়ে ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হন এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট হয়।

স্বাধীনতার পর মাত্র কয়েক দিন ‘প্রবাসী সরকারের’ নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ পরিচালনা করেন। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে বাঙালিরা এবং বিশ্ব দেখল, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জেল থেকে ফিরে এসে ব্রিটিশ-পাকিস্তানিদের নির্যাতন-শোষণের হাতিয়ার এসব আইনকানুন বজায় রেখেই বাংলাদেশকে শাসন করা শুরু করেন। তারপর থেকে জিয়া, এরশাদ, খালেদা-হাসিনা সবাই একইভাবে ওইসব ঔপনিবেশিক আইনের মাধ্যমে দেশ শাসন করেছেন এবং এখনো করছেন।

তিনি বলেন, ৪২-৪৩ বছর ধরে ‘পাকিস্তান’ শব্দের জায়গায় ‘বাংলাদেশ’ শব্দ বসিয়ে দেশ পরিচালিত হয়ে আসছে। ফল যা দাঁড়াল তা হচ্ছে, আমাদের দেশটা নামে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ কিন্তু আইনকানুনে ‘পাকিস্তানি’। একে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘অভ্যন্তরীণ পরাধীনতা’ ।

সিরাজুল আলম খান আরও বলেন, দেড়শ-দুশ বছরের পুরনো আইনকানুন জন্ম দিয়ে চলেছে অপরাজনীতি ও অপ্রয়োজনীয় প্রশাসন। যার কুফল বয়ে বেড়াতে হচ্ছে দেশের গোটা জনগোষ্ঠীকে। নির্বাচন ও ভোটের নাম দিয়ে নির্বাচিত হচ্ছে দুর্নীতিবাজ, কিছু অসৎ ব্যবসায়ী, মাস্তান, এমনকি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরাও। পার্লামেন্ট পরিণত হয়েছে রাতারাতি হয়ে ওঠা বিত্তবান এবং অযোগ্যদের ক্লাবে।

তার মতে, ‘নারীর ক্ষমতায়ন’র বিষয়টি শুধু মুখে মুখে; শাসন ব্যবস্থায় নারীর ‘অধিকার’, ‘ক্ষমতা’ ও ‘কর্তৃত্ব’ নেহাত সামান্যই। ওইসব পুরনো, অচল ও ঔপনিবেশিক আইনকানুন ও বিধিব্যবস্থার কারণে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ চিন্তা ও মননে গড়ে উঠতে পারেনি মহৎ কোনো দৃষ্টিভঙ্গি। জ্ঞানচর্চায়, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে, নান্দনিক বিষয়ে উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনী শক্তি প্রসারের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে গোটা সমাজ ব্যাধিগ্রস্ত।

রাজনৈতিক তাত্ত্বিক দাদাভাই বলেন, গত ৪০-৪২ বছর ধরে যেসব রাজনৈতিক দল, নেতা এবং শাসকগোষ্ঠী পুরনো আইন না বদলিয়ে দেশ পরিচালনা করেছে তাদের পাপের বোঝা আর বয়ে বেড়ানো যায় না। আমরা ব্রিটিশ-পাকিস্তানি নির্যাতন ও শোষণমূলক আইনকানুন জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করে এই ‘পরাধীনতা’ থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। আর এ লড়াইয়ে জনগণের সব অংশের (শ্রম-কর্মী-পেশা) মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে তার অভিমত।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!