DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

জামায়াতের হাতে সাঈদীর ‘জনপ্রিয়তার ফাঁদ’!

image_87507মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে এবার আন্দোলনের মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াত। জনপ্রিয়তার এ ‘ফাঁদ’ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছে তারা ‘সাঈদীকে বাঁচাতে’ সহিংস আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে।



সাঈদীর মামলার আপিলের রায় যে কোনো দিন ঘোষণা করবেন আপিল বিভাগ। আর এই রায়কে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াত। আর এ ইস্যুতে দলের নেতা-কর্মীদের চেয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সক্রিয় করতে সারাদেশে তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি।



এদিকে সোমবার সারাদেশে দলটি সাঈদীসহ শীর্ষ নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।



দলটির নেতাদের মতে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শুধু জামায়াতের নেতাই নন, একই সঙ্গে তিনি খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন। দীর্ঘ সময় তিনি দেশে-বিদেশে ওয়াজ-মাহফিলে বক্তব্য রেখে খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন। ফলে জামায়াতের নেতা পরিচয়ের চেয়ে ধর্ম প্রচারক হিসেবে গ্রামে-গঞ্জে তার পরিচিতি বেশি। এমনকি তার জন্য অনেকেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। অঘোষিতভাবেই সাঈদী দলের দূত হিসেবেই পরিচিত। এমন একজন ধর্মীয় নেতার কোনো অপরাধ করতে পারে না এমন ধারণা সাধারণ মানুষের মনে জাগ্রত করতে পারলেই দলের অবস্থান দৃঢ় হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগকে ধর্মবিরোধী দল হিসেবে স্থায়ীভাবে মানুষের কাছে পরিচিত করা যাবে। বিশেষ করে দলের নেতা-কর্মীদের সহিংসতার দায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও পড়বে। আর প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি শিবিরকে সক্রিয় দেখতে চায় দলটির শীর্ষ নেতারা।



জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় নিয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া জানাতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চলছে। দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি জামায়াত সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন সহ বিভিন্ন সংগঠন জনমত গঠনে কাজ করছে। দলের অধিক নেতা বিভিন্ন জেলায় সফর করে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নেমেছেন। ‘দেল্লা রাজাকার’ এর যাবতীয় অপকর্মের দায়ভার মাওলানা সাঈদীর ওপর চাপিয়ে তাকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিলে দলের নেতা-কর্মীদের সহিংসতা ঘটানো সহজ হবে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহিংসতায় অংশ নিতে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। হাজার মানুষের নামে মামলা হলে ফাঁক দিয়ে বিরেয়ে যাওয়া সহজ হবে দলের নেতা-কর্মীদের। আর আগেও সাঈদীর রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছিল। এবার তার চেয়ে অধিক সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই মাঠে জামায়াত। যার জন্য বিএনপির সঙ্গে আপাতত কোনো কর্মসূচিতে নেই দলটি।



বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, ‘সরকার দেশকে মেধা ও নেতৃত্বশূণ্য করতেই কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জিগির তুলেছে। সে ধারাবাহিকতায় শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা এখন আমিরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ শীর্ষ নেতাদের একইভাবে হত্যা করতে চায়।   মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শুধু জামায়াতের নায়েবে আমির নন, তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন। তিনিও পরপর দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিজামী-সাঈদীরা যুদ্ধাপরাধী হলে জনগণ তাদেরকে কখনোই ভোট দিত না। মূলত সরকার জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সততা, যোগত্যা ও জনপ্রিয়তায় ঈর্শাকাতর হয়ে কথিত বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে তাদের হত্যা করতে চায়। কিন্তু জনগণ সরকারের সে ষড়যন্ত্র কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। বরং জুলুমবাজ সরকারকে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যেমে ক্ষমতা থেকে বিদায় করবে।’



আন্দোলনের পদ্ধতি প্রসঙ্গে মোবারক হোসাইন বলেন, ‘জনগণ জাতীয় নেতাদের হত্যার ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই মেনে নেবে না। ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। সারাদেশের মানুষ প্রস্তুত প্রতিবাদ জানাতে। প্রতিবাদে মুখে সরকার কোনো ষড়যন্ত্র কখনোই বাস্তবায়ন করতে পারবে না।’



শুধু জামায়াতের নেতা-কর্মী নয় সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন।



তিনি বলেন, ‘বিশ্ববরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু জনগণ সরকারের সে ষড়যন্ত্র কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি পরিহার করে অবিলম্বে তাকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিয়ে সরকার তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের দুঃসাহস দেখালে জনগণ যে কোনো মূল্যে তা প্রতিহত করবে। দেশের মানুষ এই ষড়যন্ত্র বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না বরং জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে সরকারের সব ষড়যন্ত্র খড়কুটার মতো ভেসে যাবে।’



জামায়াত সমর্থিত সম্মিলিত পেশাজীবী ফোরামের মহাসচিব প্রকৌশলী শেখ আল আমিন বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের মতলবে নিরাপরাধ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ’দেল্লা রাজাকার’ বানিয়ে ফাঁসি কার্যকর করার ঘৃণ্য চক্রান্ত চলছে। আমরা পেশাজীবী সমাজ দেশবাসীর সঙ্গে গভীর উদ্বেগ নিয়ে লক্ষ্য করছি এই চক্রান্ত। এদেশের পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে এই চক্রান্তের প্রতিবাদ জানানো হবে। দেশের মানুষ বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা সাঈদীকে অবিলম্বে মুক্ত দেখতে চায়। এর জন্য সবাই প্রতিবাদ সংগ্রাম করতে মাঠে নামবে।’



সাঈদী ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি মারমুখী ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারাও সারাদেশে কর্মী সম্মেলন, আলোচনা সভা, প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। এসব সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য সাঈদী ইস্যুতে সক্রিয় প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি। শিবির সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলায় এখন সফরে রয়েছেন শিবির নেতারাও। সিলেটে রয়েছেন ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমান। এসব আলোচনা সভায় তারা প্রচার করছেন  বিচারের নামে প্রহসন করে বাংলাদেশের বুক থেকে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে নিঃশেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার। আল্লামা সাঈদীকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ইসলাম প্রিয় জনতাকে এই ষড়যন্ত্র রুখতে মাঠে নামতে হবে। দেশের আপামর ছাত্র-জনতা তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে এ অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে আল্লামা সাঈদীসহ জাতীয় নেতাদের মুক্ত করে আনতে হবে।



ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী সরকার বিচারের নামে আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি শুধু এ দেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতা নন, বরং তারা বিশ্বের কোটি কোটি ইসলামপ্রিয় মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে যদি সামান্যতম অবিচার করা হয় তাহলে সারা বাংলায় গণবিস্ফোরণ ঘটবে। আর এ আন্দোলন শুধু মিছিল-সমাবেশে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলন হবে। পুলিশ বা দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে সে আন্দোলন দমাতে পারবেন না। প্রতিবাদ জানাতে লাখো কোটি ছাত্রজনতা প্রস্তুত আছে।’



প্রসঙ্গত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পিরোজপুরের বাসিন্দা ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়ার দুটি অভিযোগে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তার বিরুদ্ধে ২০টির মতো অভিযোগ উত্থাপন করে তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে ১২টি অভিযোগ থেকে খালাস পান তিনি। বাকি ৮টির মধ্যে ২টি অভিযোগের ভিত্তিতে সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!