DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ছাত্রদল নেতাকে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা, ‘তোর কোন পায়ে শুট করবো বল’

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদল নেতা ও তার বন্ধুকে তিন ঘণ্টা আটকে মারধর, মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় ছাত্রদল নেতাকে পিস্তল ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ।

গতকাল সোমবার (৬ মে) রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। তবে নির্যাতনের এই অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা।

তারা বলছেন, ওই ছাত্রদল নেতা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে পারেন এমন সন্দেহ থেকে আটক করে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাকে কোনো ধরনের নির্যাতন বা ভয়ভীতি দেখানো হয়নি।

ভুক্তভোগীরা হলেন- শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাফিউল ইসলাম জীবন ও তার বন্ধু ইউনুস খান। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

অপরদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, সহ-সভাপতি মনু মোহন বাপ্পা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ শেখ, সাদিকুল ইসলাম সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান সোহাগ ও মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিশকাত হাসান।

ভুক্তভোগী ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত ৯টার দিকে নাফিউল ও তার বন্ধু ইউনুস খান ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসেন। ক্যাম্পাস ঘুরে এক পর্যায়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের সামনে দাঁড়ান। এ সময় তারা বুঝতে পারেন ছাত্রলীগের তিনজন নেতা তাদের অনুসরণ করছেন। তখন তারা তাদের মোটরসাইকেলে করে রোকেয়া হলের পেছন দিয়ে ফ্লাইওভার সংলগ্ন গেট দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগের চেষ্টা করেন। ওই সময় ছাত্রলীগ নেতারা তাদেরকে পথরোধ করে আটক করেন। এরপর তাদেরকে জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসেন। কক্ষটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের।

এর কিছু সময় পর সেই কক্ষে আসেন গালিব ও অভিযুক্ত অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতারা। কক্ষে এসে ভুক্তভোগী ছাত্রদল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন বলে স্বীকার করলে তাকে মারধর শুরু করেন গালিব। এক পর্যায়ে পিস্তল দেখিয়ে ওই ছাত্রদল নেতাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। শুধু তাই নয়, অপর ভুক্তভোগী ইউনুস খান ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জানালেও তাকে চড়-থাপ্পর মারেন গালিব। খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে রাত ১টার দিকে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে তুলে দেন ছাত্রলীগ নেতারা।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রদল নেতা নাফিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গালিব আমাকে প্রায় তিন ঘণ্টার মতো আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এসময় গালিব তার কাছে থাকা একটি পিস্তলে বুলেট লোড-আনলোড করে আমাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে বলেন, “তোর কোন পায়ে গুলি করবো, বল?” এরপর তিনি আমার পায়ে একটি শুট করেন। তবে এতে বুলেট ছিল না। এছাড়া তারা জোরপূর্বক আমার মোবাইল চেক করেন।’

এ বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী ইউনুস খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না হওয়ায় তা পারা যায়নি।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘একা পেয়ে আমাদের সংগঠনের এক নেতাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছে ছাত্রলীগ। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’ এছাড়া ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘ওই ছেলেকে কোনো ধরনের মারধর, হুমকি কিংবা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। তবে এর আগেও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। সেই সন্দেহ থেকে তাকে নিয়ে এসে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তার কাছে সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস পাওয়া গেলেও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এমন কিছু তার কাছে আমরা পাইনি। পরে তাকে প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে হস্তান্তর করেছি।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ঘটনা জানতে পেরে আমি ওই হলে দুজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠিয়েছি। তারা সেখান থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তবে মারধর বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের কোনো অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ পেলে ঘটনা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!