DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

২০ বছরে আগুনে নিহত দুই হাজার মানুষ

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৬ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বরাবরের মতো আবার আলোচনায় অগ্নিকাণ্ড। বারবার অগ্নিকাণ্ডের পরও তা কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সে আলোচনা উঠছে সবখানে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সনাক্ত করার পরও কেন সেগুলোতে বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যায় সে প্রসঙ্গই উঠে আসছে এ আলোচনায়।

পুরান ঢাকার নিমতলী, চকবাজারের চুড়িহাট্টা, আশুলিয়ার তাজরিন গার্মেন্টস, টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানা, বনানীর এফ আর টাওয়ারের পর এবার বেইলি রোড ট্রাজেডি অগ্নি দুর্ঘটনার ভয়াবহ সাক্ষী।
 
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের বার্ষিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি ২০ বছরে বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ ৯ হাজার ৬৮৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় দুই হাজার মানুষ।

নিমতলী: ২০১০ সালের ৩ জুন পুরাণ ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় ৪৩ নম্বর বাড়িতে রাত ৯টায় রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হন নারী ও শিশুসহ ১২৪ জন।
 
তাজরীন ফ্যাশন: ২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর ঢাকা মহানগরীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১১ জন নিহত হন। এতে সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় ১০১ জন পোশাকশ্রমিক। আগুন থেকে রেহাই পেতে উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয় আরও ১০ জনের।
 
গার্মেন্টস শিল্প: ২০১২ সালে গরিব অ্যান্ড গরিব গার্মেন্টসে লাগা আগুনে নিহত হন ২১ জন। এ ছাড়া হামীম গ্রুপের অগ্নিকাণ্ডে ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৩ সালের ২৮ জুন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে স্মার্ট এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেডে আগুনে পুড়ে ৭ নারী পোশাকশ্রমিক নিহত হন।
ট্যাম্পাকো ট্র্যাজেডি: ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গির ট্যাম্পাকে ফয়েল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪১ জন প্রাণ হারান।
 
রাজধানীর বিভিন্ন বস্তি: ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ রাত ২টা ৫০ মিনিটে মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ০৫ অক্টোবর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে বউবাজার বস্তিতে আগুনে পুড়ে যায় ৫০টি ঘর। ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর একই বস্তিতে লাগা আগুনে প্রাণ হারান ১১ জন। একই বছর ১২ মার্চ রাজধানীর পল্লবীর ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তিতে আগুন লেগে বস্তির প্রায় ৫ হাজার ঘরের সব পুড়ে যায়।
 
চকবাজারের চুড়িহাট্টা: ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জন নিহত হন।
 
বনানী এফআর টাওয়ার: ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুর ১২টায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৭০ জন।
 
বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটে আগুন: ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভোরে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুন লাগে। সেদিন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের পাশাপাশি আরও চারটি মার্কেট আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গত ১১ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
তারা বলেছে, মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি এমব্রয়ডারি টেইলার্স থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। সিগারেটের আগুন অথবা মশার কয়েলের আগুন থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকার।
 
বেইলি রোড ট্রাজেডি: সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪৬ জনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। সাত তলা ওই ভবনটির প্রায় পুরোটাতেই বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট ছিলো। অগ্নিকাণ্ডের মধ্যেই এসব রেস্টুরেন্টের মজুত থাকা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারগুলো বিস্ফোরিত হওয়ায় এ অগ্নিকাণ্ডে ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
 
দুর্ঘটনায় আহত ৬৫ জনের অবস্থাও আশঙ্কা জনক বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।  
 
এদিকে শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার এক্সেস রোডের একটি নির্মাণাধীন কোল্ড স্টোরেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই দুর্ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
 
এদিকে অগ্নিদুর্ঘটনা ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘এখন শুধু সচেতনতার কথা বললে চলবে না। প্রতিটি অগ্নিদুর্ঘটনার পরে বহু তোড়জোড় হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনার আগে কারো কোনো সচেতনতা থাকে না। এখন থেকে কড়া হাতে আইন প্রয়োগ করতে হবে।’
 
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) পরিকল্পনাবিদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘রাজধানীর ৯৫ ভাগ ভবনে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। ইমারত নির্মাণ বিধিমালাতেও যেসব নির্দেশনা আছে তা যাচাই-বাছাই করা হয় না। তাই একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রতি বছরই ভয়ঙ্কর মাত্রায় অগ্নিদুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে আর এসব ঘটনায় মারাত্মক প্রাণহানি ঘটছে।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!