DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

রাশিয়ার উপর পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞাঃ অভিশাপ নাকি আশির্বাদ?

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ পশ্চিমা বিশ্বের সাথে রাশিয়ার ৩০ বছরের বাণিজ্যের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়া থেকে বেরিয়ে আসা পশ্চিমা কোম্পানিগুলির সম্পদ জাতীয়করণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের কর্মক্ষেত্রগুলি রক্ষা করার জন্য দৃঢ় সংকল্পে কাজ করতে বলেছেন।

গত বৃহস্পতিবার একটি টেলিভিশন মন্তব্যে পুতিন বলেন, ‘যেমন আমরা বিগত বছরগুলোতে এই অসুবিধাগুলি কাটিয়েছি, আমরা এখনও সেগুলি কাটিয়ে উঠব।’

এই মুহূর্তে রাশিয়া তার সার্বভৌম ঋণে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং অর্থনীতিতে তীব্র সঙ্কোচনের সম্মুখীন হয়েছে। পুতিন যুক্তি দিয়েছেন যে, ইউক্রেনে তার হস্তক্ষেপ রাশিয়ার অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য পশ্চিমাদের জন্য কেবল একটি অজুহাত হিসাবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমার কোন সন্দেহ নেই যে যাই হোক না কেন এই নিষেধাজ্ঞাগুলো বাস্তবায়িত হবে।’

এদিকে, পশ্চিমারা বাজি ধরেছে যে, বর্ধমান প্রজন্ম-সংজ্ঞায়িত অর্থনৈতিক সঙ্কট রাশিয়ানদের তাদের প্রেসিডেন্টের প্রতি বিরুপ করে তুলতে পারে। গত মাসে রুবলের মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, মৌলিক জিনিসপত্রের দাম দ্রুত বেড়ে গেছে, যা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ রেখেছিল। এখন এটি নতুন মূলধন নিয়ন্ত্রণ চালু করেছে এবং কোম্পানিগুলোকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য ৫ হাজার ডলারের বেশি নগদ উত্তোলন করতে বাধা দিচ্ছে।

রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটিতে ব্যবসারত বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেগুলো হাজার হাজার রাশিয়ানের কর্ম সংস্থান করেছে। যেসব পশ্চিমা সংস্থা একসময় সোভিয়েত-পরবর্তী রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তকরণের প্রতীক ছিল, যেমন ম্যাকডোনাল্ডস এবং আইকিয়া, এখন শত শত দোকান এবং কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও পশ্চিমারা রাশিয়াকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর, তবে এটাও সম্ভব যে, এই সঙ্কট পুতিনকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে তুলবে।

পুতিনের নিরাপত্তা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দিমিত্রি এ. মেদভেদেভ বলেছেন, ‘ক্রেমলিন পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে এবং তাদের সম্ভাব্য জাতীয়করণ করে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।’ পুতিন তার কর্মকর্তাদের বলেছেন যে, এই জাতীয় সংস্থাগুলির সম্পদ ‘বর্হিব্যবস্থাপনার’ অধীনে রাখা উচিত এবং তারপর যারা কাজ করতে চায়, তাদের কাছে হস্তান্তর করা উচিত।’

রাশিয়ান ধনকুবেররাও এখন পশ্চিমা হুমকির সম্মুখীন। গত বৃহস্পতিবার ব্রিটেন চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিক রোমান আব্রামোভিচ এবং প্রভাবশালী ধাতু ব্যবসায়ী ওলেগ ভি দেরিপাস্কা সহ সাতজন বিশিষ্ট রাশিয়ান ব্যবসায়ীর উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে সব রাশিয়ানরা সমানভাবে এই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় প্রভাবিত নয়। কেউ কেউ সতর্ক করেছেন যে, পশ্চিমের জন্য ঝুঁঁকি এই যে, নিষেধাজ্ঞাগুলো একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে। তারা বলছেন, পশ্চিমাদের ওষুধটি রোগের থেকেও জঘন্য হতে পারে, এমনকি তাদের ঘোষিত লক্ষ্যের দৃষ্টিকোণ থেকেও। নিষেধাজ্ঞাগুলো পশ্চিমা বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিগুলিকে সুরক্ষিত করতে পারে।

উদ্যোক্তা তাতায়ানা মাকারোভা বলেছেন, ‘কেউই বিস্তৃত ক্ষতির দিকে নজর দিচ্ছে না।’ তিনি বলেন যে, তিনি ইউক্রেনে পুতিনের যুদ্ধকে সমর্থন করেন এবং নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কেবল এটাই দেখিয়েছে যে, রাশিয়া পশ্চিমের উপর অত্যধিক নির্ভরশীল। একটি ছোট পরিচ্ছন্নতা প্রতিষ্ঠানের মালিক মাকারোভা বলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন, অর্থনৈতিক সঙ্কট অবশেষে রাশিয়াকে দেশীয় প্রযুক্তি বিকাশে বাধ্য করবে।

মাকারোভার দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখযোগ্য। কারণ তিনি ভালদাই লেকে ওপর ক্রেমলিনের অভিজাতদের অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করার চেষ্টা করে দীর্ঘদিন ধরে পুতিনের প্লুটোক্রেসি বা ধনীদের দ্বারা শাসনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিলেন, যেখানে পুতিনের বাসস্থান রয়েছে। মাকারোভা বলেন, ‘সম্ভবত এটি আমাদের জন্য ভাল হবে।’ তিনি বলেন, ‘এটি রাশিয়ানদের জাগিয়ে তুলবে, এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাবে।’ ক্রেমলিনপন্থী গণমাধ্যমগুলিও একই শ্লোগান দিচ্ছে। রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড ‘কম্সমোলস্কায়া প্রাভদা’ একটি অনলাইন জনমত জরিপ প্রকাশ করেছে, যা দেখায় যে, রাশিয়ানরা ম্যাকডোনাল্ডসের অভাব বোধ করবে না। ট্যাবলয়েডটি দাবি করেছে যে, অর্ধেকেরও বেশি উত্তরদাতাদের ফাস্ট ফুডের চেয়ে ঘরে তৈরি খাবারই পছন্দ।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!