দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার মতই বিএনপিতে দিনে দিনে প্রবল হচ্ছে।
ঘরোয়া বৈঠকেও এতদিন যেসব নেতা ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে’ নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন তারাও পাল্টাতে শুরু করেছেন তাদের মতামত। বিএনপির এসব নেতাও এখন শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে। বিশেষ করে, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের জোরালো এই মনোভাব তৈরি হতে শুরু করেছে ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মী সবার মতামত, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে যাওয়া কোনো অবস্থায়ই ঠিক হবে না। ভোটের দিন দৃশ্যমান পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও ‘প্রশাসনিক ক্যু’র মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে রেজাল্ট হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সম্পূর্ণভাবে এখন ঐক্যবদ্ধ। এই অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের আন্দোলনই এখন বিএনপির একমাত্র কর্মসূচি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই দাবি আদায়ে প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি।
এতদিন নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন এমন কয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের মনোভাব জানা যায়। তারা মনে করছিলেন, সারা দেশে বিএনপির জনপ্রিয়তা যে পর্যায়ে রয়েছে এটাকে কাজে লাগাতে পারলে নির্বাচনে কোনো অনিয়ম করতে পারবে না সরকার। তাদের পরিকল্পনা ছিল, ভোটের দিন জনতার ঢল নামিয়ে ভোটকেন্দ্রে পাহারা বসানো হবে, ভোটের ফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা বলবত রাখা হবে।
এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটাররাও সামান্য ঝুঁকি থাকলেও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে। এবং ফলও ঘরে আনা সম্ভব হবে। কিন্তু খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন তাদের এ ধারণায় পরিবর্তন এনেছে। যাদের দিয়ে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আগেই এলাকাছাড়া করেছে। যারা পোলিং এজেন্ট ছিল তাদের অনেককেই গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়। সেখানে ভোটের দিন কোনো সহিংসতাও হয়নি। তারা মনে করছেন, শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচনও একই স্টাইলে হবে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পরের দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোটের আগের রাতেই নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে দিয়েছে। আমাদের এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি, অনেককে বাসা থেকে বের হতেই দেয়নি, অনেককে পথেই রুখে দেওয়া হয়েছে। এভাবে ষড়যন্ত্র করে গাজীপুরের নির্বাচনে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন এক হয়ে কাজ করেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচনে গেলে কী হবে তা খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফল দেখলেই বোঝা যায়। এ জন্য বেশি পড়াশোনা বা বড় রাজনীতিবিদও হওয়ার দরকার নেই। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং ৭৩ বছর বয়সে খালেদা জিয়াকে কেন ভিত্তিহীন মামলায় কারাবন্দি করা হয়েছে। সরকারের এই আচরণ থেকেই বোঝা যায়, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার মতো ইচ্ছে নেই।
তবে বিএনপি নেতাদের মধ্যে নতুন করে আশা জেগেছে। খুলনা ও গাজীপুরে নির্বাচনের পরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কাছ থেকে যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে, তাতে করে সরকারের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে বলে মনে করে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। গাজীপুরের নির্বাচনের পরে স্থায়ী কমিটির নেতারা একাধিক বৈঠক করেছেন।
সম্প্রতি যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন মির্জা ফখরুল। নানা দিক বিশ্লেষণ করে এই বৈঠকেও নেতারা বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচনে যেতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে গেলে খুলনা ও গাজীপুর স্টাইলে ‘প্রশাসনিক ক্যু’ করে ফল পাল্টে দেবে। তাই তারা সবাই আন্দোলনের দিকে নজর দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।
স্থায়ী কমিটির নেতাদেরও একই মতামত। তারাও বলছেন, রাজপথে আন্দোলন ছাড়া যেমন খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না, তেমনই নিরপেক্ষ সরকারের দাবিও পূরণ হবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে গণতন্ত্র ফিরবে না। দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।