DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

আমরা মার্কিনিদের মানবাধিকার শিক্ষা দিতে চাইঃ প্রেসিডেন্ট চুপ্পু

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আমরা মানবাধিকারে সচেতন হয়েছি বলেইতো মার্কিনিদের শিক্ষা দিতে চাই। মার্কিনিদের এজন্যই শিক্ষা দিতে চাই, কারণ তাদের থেকে বেশি মানবাধিকার বাংলাদেশ রক্ষা করে থাকে। বাংলাদেশ মানবাধিকার রক্ষায় একটি উজ্জ্বল উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। 

রোববার (১০ ডিসেম্বর) সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মার্কিনিরা আমাদের যেন আর মানবাধিকার না শেখায়। বাংলাদেশ তাদের মানবাধিকার শেখাবে। যারা আমাদের মানবাধিকার শেখায়, তাদের মাস্টার বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তাদের শেখাবে। তোমরা পরতে পরতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছ। সারা বিশ্বে সংঘাত সৃষ্টি করছ। তোমাদের আমরা শেখাব মানবাধিকার কীভাবে রক্ষা করতে হয়।’

‘জাতিসংঘে যখন গাজার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এলো, এ মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা সেখানে বাধা দিল। আজ বিশ্ববিবেক কোথায়? আজ সারা পৃথিবীতে মানবাধিকার দিবস পালন করা হয়, অথচ চোখের সামনে কত নির্মমভাবে গাজায় মানুষকে, মুসলমানকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, অথচ সারা বিশ্ব নীরব ভূমিকা পালন করছে।’

গাজাকে রক্ষায় সারা বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। একযোগে এগিয়ে আসতে হবে— বলেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। বহু আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা এই মাসের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। এজন্য মাসটি আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। এই মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র হ্রাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ বিস্তার, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস ও নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক নানান সূচকে তাৎপর্যপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছে। যেখানে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মানবতা লঙ্ঘিত ও লুণ্ঠিত হয়েছিল। তিনিই মানবাধিকারের প্রতি দৃঢ় আস্থা ও অঙ্গীকার থেকে ২০০৯ সালে মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছিলেন, ‘আমি ভুক্তভোগী, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যেন ভুক্তভোগী না হয়।’ এতবড় মহান ব্যক্তিকে আমি শুভেচ্ছা জানাই।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি সংকট মোকাবিলায় দূরদর্শী নেতৃত্ব ও মানবিকতার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের মহামারিতে বাংলাদেশ মানবাধিকার সুরক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশ মানবাধিকার সুরক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মানবতার চরম বিপর্যয় ঘটেছে। নির্বিচারে নারী-শিশু হত্যা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় আমি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে অত্যন্ত দুঃখ ও চরম উদ্বেগ প্রকাশ করছি।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান হবে। সব ধরনের সংঘাতের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিতকরণ ও নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

সম্প্রতি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নির্বিচারে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, শিশু হত্যা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি সংঘাতের ঘটনায় চরম দুঃখ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং একইসঙ্গে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানান। কাতারের উদ্যোগ ফিলিস্তিনের গাজায় সম্প্রতিক সাময়িক যুদ্ধ বিরতির জন্য কাতার সরকারকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক মোবারকবাদ জানান রাষ্ট্রপতি।

বিশ্বের যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে সেখানেই দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব দেশ, মানবাধিকার সংস্থা ও মানবাধিকার কর্মীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হবেন বলেও তিনি আশা করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মানবাধিকার শাশ্বত ও সর্বজনীন অধিকার কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে, বিরাজমান বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি বিবেকবান যে কোনো মানুষকেই ব্যথিত করবে। অনেক দেশ ও সংস্থা মানবাধিকারের নামে দ্বিচারিতায় লিপ্ত হচ্ছে।’

বাংলাদেশে মানবাধিকার সংস্কৃতির বিকাশ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা ও প্রকাশনা বৃদ্ধি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপরে সার্বক্ষণিক নজরদারি বৃদ্ধি, মানবাধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি ও অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কমিশনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার কথাও বলেন।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় পারস্পরিক সংলাপ, সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ শিক্ষা ও প্রচারসহ সহযোগিতা বৃদ্ধির সব কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, অনুষ্ঠানের সভাপতি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য সেলিম রেজা অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!