DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

“তোমাদের বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।।’’ —ব্যারিস্টার আবু সায়েম।।

ব্যারিস্টার আবু সায়েমঃ  ক্ষেপেছেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। অবসরে গিয়ে প্রচলিত প্রথার বাইরে রায় লিখেছিলেন তিনি, ঘোষিত রায় পরিবর্তনও করেছিলেন পূর্ণাঙ্গ রায়ে। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) বাতিল করে দেশকে ধ্বংসযজ্ঞ ও চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন এই বিচারপতি।

আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের ছাড়পত্রখ্যাত সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন মাদারিপুর জেলায় জন্ম নেওয়া বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। এছাড়াও তার দেওয়া অনেক রায়ে প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই উঠে আসে বাংলাদেশের ইতিহাস, খণ্ডিত ও বিকৃতভাবে। দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও ঘোষক সম্পর্কিত মামলার রায়টিও আসে খায়রুলের আদালত থেকে।

আনুগত্যের পুরস্কারস্বরূপ অবশ্য চাকরিরত অবস্থাতেই প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দশ লক্ষ টাকা অনুদান মেলে দলবাজ এই বিচারপতির। আবার অবসরে গিয়েই ২০১৩ সালের জুলাই মাসে তিনি নিয়োগ পান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে। আইন-আদালতের ভগ্নদশা ঠেকাতে কোন অবদান না রাখতে পারলেও এখনো তিনি বহাল আছেন গুরুত্বপূর্ণ এই সাংবিধানিক পদে।

সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করলে বসে থাকতে পারেন নি বিতর্কিত এই বিচারক। নিয়মনীতির বালাই নেই, সাংবাদিক ডেকে একগাল কথা বলে ফেললেন তিনি সর্বজনপ্রশংসিত রায়টিকে ঘিরে। খুব গোস্বা লেগেছে আমাদের খায়রুল বিচারপতির!

তার মতে, ‘ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে দেওয়া ওই রায় ছিল পূর্বধারণাপ্রসূত ও আগে থেকে চিন্তাভাবনার ফসল।’ তিনি বলেন, ‘জাজমেন্টের ২২৩ ও ২২৪ পাতায় বলা হয়েছে, এমপি হওয়ার আগে বিবেচনা করা উচিত, তাঁরা এমপি হওয়ার যোগ্য কি না। এখন এমপি হওয়া যোগ্য কি না সেটা ভোটাররা বুঝেছে, যারা ভোট দিয়ে তাদের এমপি বানিয়েছে। এখানে তো সুপ্রিম কোর্টের এ ধরনের মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।’ (সূত্র- প্রথম আলো, ১০ আগস্ট ২০১৭)

আদালত অবমাননাকর কথা বলতে একটুও বাধেনি এবিএম খায়রুল হকের। একবারও ভাবেন নি, এমপি হিসেবে তিনি যাদেরকে সম্মান দেখাচ্ছেন তারা কেউই জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। গোটা দুনিয়া জানে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি শেখ হাসিনার খবরদারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো প্রহসন ও তামাশার এক নির্বাচন। অতঃপর জন্ম নেয় দশম জাতীয় সংসদ। সংসদতো নয়, যেন আস্ত এক রঙ্গশালা! উন্মাদ, ঘুম-কাতুরে, গালিবাজ, নৃত্যপারঙ্গম, তৈলবাজ, অপদার্থদের ছড়াছড়ি হালের এই আইনঘরে। এখানে নেই কোন বিরোধী দল, নেই কোন প্রোটকল! ঢলাঢলি, বলাবলি, গলাগলি, হাসাহাসি, মাতামাতি, প্রেম-প্রীতি-বন্দনা, গীতচর্চায় সদামুখর খায়রুলের ‘যোগ্য’ এমপিরা। শেরে-বাংলা নগরের পবিত্র দালানটিতে এদেরতো থাকারই কথা ছিলো না, এদের অনেককে বরং সুন্দর মানাতো যাত্রাপালা কিংবা সার্কাসের জমজমাট আসরে। সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ, তাঁরা ঠিক কাজটিই করেছেন। ‘সঙ’দের বিধান (ষোড়শ সংশোধনী) বাতিল করে দিয়ে তাঁরা প্রমাণ করেছেন, দশম সংসদ অবৈধ।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিবেক কি একটুও কেঁপে ওঠে নি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের সমালোচনা করতে, ষোল কোটি মানুষের ইচ্ছে ও আবেগের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে? কোন্ যৌক্তিক বিবেচনায় তার মতে ‘সংসদ কার্যকর’ অথবা সুপ্রিম কোর্টের জাজরা ‘ইমম্যাচিউরড’? বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক কি ঘুমিয়ে কথা বলছেন?

বোঝাই যায়, আদিষ্ট হয়ে তিনি একাজটি করেছেন। তিনি হয়তো তার অন্ধকার অতীত, ভয়কাতুরে বর্তমান আর অনিরাপদ ভবিষ্যতের কথা ভেবেই উপরোধে ঢেঁকি গিলেছেন। তবে পার পেতে পারবেন কি? শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ হতে গিয়ে কিংবা তার সম্ভাব্য রোষানল থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি বিচারকদের মারাত্মকভাবে খাটো করেছেন, কঠিন আঘাত হেনে বসেছেন গোটা আদালত ব্যবস্থার সম্মানের ওপর। এখন পারবেন কি বিচারপতি হক নিজেকে শেষ রক্ষা করতে কিংবা তার প্রভুদের?

বর্তমান প্রধান বিচারপতি হয়তো এককালে খায়রুল হকের বিশ্বস্ত সহকর্মী ছিলেন। আরও বড় সত্যি হল, শেখ হাসিনার সুনজরে না থাকলে কারোই এ পদে নিয়োগ পাওয়ার কথা নয়।

কিন্তু ‘তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।’ মহাভারতের সে প্রবাদটিওতো ভুলবার নয়।।

লেখকঃ বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!