DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বগুড়ায় ধর্ষনের কথা প্রকাশ করায় মা ও মেয়েকে শ্রমিক লীগ নেতা কর্তৃক গনধর্ষন

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বগুড়ায়  শ্রমিকলীগ নেতা কর্তৃক সদ্য এএসসি পাশ করা এক কিশোরীকে ধর্ষন করার ঘটনা প্রকাশ করায় মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে ও কিশোরীকে এবং তার মাকে দ্বিতীয় দফায় গনধর্ষন চালানো হয়েছে ।

একই সাথে ধর্ষিতা ও তার মাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে হিন্দি ফিল্মী কায়দায় লাঠিপেটা করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে। চাঞ্চাল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়া শহরে ।

এঘটনায় পুলিশ বগুড়ার কুখ্যাত শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকার সহ চার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার গভীর রাতে বগুড়া সদর থানা পুলিশ শহরের চকসুত্রাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর রহমানের পুত্র ও শহর শ্রমিকলীগের সভাপতি তুফান সরকার (২৫) তার সহযোগি একই এলাকার দুলুর পুত্র আলী আজম দিপু (২৪), শহরের কালিতলা এলাকার জহুরুলের পুত্র রুপম হোসেন ওরফে রুপম(২৫)এবং অন্যজন খান্দার এলাকার মোখলেছারের পুত্র আতিকুর রহমান(২৫) ।

এদিকে ধর্ষন এবং ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া এবং মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পৌরসভায় ইতিমধ্যেই বিতর্কিত হওয়া নারী কাউন্সিলর সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শনিবার সকাল হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতভাগ্য মা ও মেয়ে তাদের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মধ্যযুগীয় নির্যাতনের বর্ননা দিতে গিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন । তারা বার বার ঘটনার বিচার চেয়ে এ ব্যপারে প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, আর কারো ভাগ্যেয় যেন এমন ঘটনা না ঘটে ।

এদিকে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সুত্র সংবাদ সংস্থা এফএনএসকে জানায়, বগুড়া শহরের বাদুড়তলা এলাকায় বসবাসকারী চা ষ্টল ব্যবসায়ী এক কিশোরী কন্যা শহরের জুবলী ইন্সটিটিউিশন থেকে এবার এসএসসি পাশ করে। কিন্তু তার রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় ভাল কোন কলেজে ভর্তি হতে না পারায় মানসিক ভাবে চিন্তিত ছিল সে। এসময় তার উপর কু-দৃষ্টি পরে শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকারের । সে ওই শিক্ষার্থীর দূর্বলতার সুয়োগ নিয়ে তার সহযোগি ও প্রতিবেশী আলী আজম দিপুকে দিয়ে ওই কিশোরী শিক্ষার্থীকে শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। দিপু ওই কিশোরীকে মোবাইল ফোনে তুফান সরকারের সাথে কথা বলিয়ে দেয়। এরপর তুফান সরকার দিপুর মাধ্যমে ওই কিশোরীকে চার হাজার টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির জন্য পাঠায়। কিন্তু ওই কিশোরী ভর্তি হতে না পারার বিষয়টি দিপুর মাধ্যমে তুফান সরকারকে জানায়। গত ১৭ জুলাই তুফান সরকারের স্ত্রী- সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে ওই কিশোরীকে বাসায় ডেকে আনে। এরপর দিনভর তাকে আটকে রেখে তুফান সরকার তাকে কয়েক দফা ধর্ষন করে। এতে ওই কিশোরী রক্তক্ষরন জনিত কারনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাকে ডেকে এনে তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি খেয়িয়ে শাষিয়ে দেয়া হয়। পরে মূমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসার একপর্যায়ে তাকে তাকে তার মার সাথে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয় ।

কিন্তু ধর্ষনের ঘটনাটি ওই কিশোরীকে ধর্ষনের ঘটনা তুফান সরকারের স্ত্রী ও এলাকার বিশিষ্ট চামড়া ব্যবসায়ী রুনুর মেয়ে আশার কানে যায়।

এঘটনায় গত শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন তার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগম ওই কিশোরীর বাড়িতে যায়।

তারা ধর্ষনের ঘটনার বিচার করে দেয়ার কথা বলে ধর্ষিতা ও তার মা মুন্নী বেগমকে বাদুড়তলাস্থ পৌর কাউন্সিলর রুমকীর বাবার বাড়ীতে নিয়ে আসে। সেখানে বিচারের নামে ধর্ষিতাকে পতিতা আখ্যায়িত করে এবং মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর উল্টো অভিযোগ আনা হয় মুন্নী বেগমের নামে। এরপর তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগি নিয়ে লাঠি পেটা করে মা ও মেয়েকে।এর পর তাদের উপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দার নির্যাতন।

কয়েক ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতনের এক পর্যায়ে মাকে আটকে রেখে ওই বাড়ীর একটি ঘড়ের মধ্য গ্রেপ্তারকৃত রুপম,দিপু,আতিক সহ অপর এক যুবক ওই কিশোরীর উপর আবারো গনধর্ষন চালায় । তারা এতেও তারা ক্ষ্যন্ত না হয়ে মা ও মেয়ের মাথার চুল কেটে নেয় তারা। তাতেও তাদের মন না ভরায় এক পর্যায়ে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন কাউন্সিরর রুমকি নির্দেশে নাপিত ডেকে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়।

শুধু তাই নয় ২০ মিনিটের মধ্যে বগুড়া শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রিক্সায় তুলে দেয়া হয়। ওই অবস্থায় তারা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। মা মেয়ের উপর স্বরনকালের বর্বর নির্যাতনের বিষয়টি এক পর্যায়ে গোপনে পুলিশকে জানানো হয় । রাত সওিড় ১০ টার দিকে সদর সার্কেল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তীর নের্তৃতে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমদাদ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধিন মা ও মেয়ের বক্তব্য শুনে রাতেই অভিযান শুরু করে।

রাত সাড়ে ১১ টার দিকে প্রথমে তুফান সরকারকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তার অপর তিন সহযোগিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে তুফান সরকারকে গ্রেফতারের পর পরই তার স্ত্রী আশা খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন পৌর কাউন্সিলর রুমকী এবং তুফানের শ্বাশুরী রুমী বেগম আত্মগোপন করে।
শনিবার এঘটনায় ধর্ষিতার মা মুন্নী বেগম বাদী হয়ে তুফান সরকার সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেফতারকৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সহচারজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার দুপুরে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং-এ উপরোক্ত তথ্য জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন মা ও মেয়েকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ আরো নিশ্চিত করে শ্রমিক লীগ নেতা তুফানের বিরুদ্ধে অস্ত্র, ফেন্সিডিল সহ একাধিক মামলা রয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!