DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বাংলাদেশে কিছুতেই কাটছে না উদ্বেগ, বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতাঃ জার্মান রেডিও ডয়েচে ভ্যালে

dwক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের পুলিশ অতি সম্প্রতি নিহত ইতালিয় নাগরিক তাবেল্লা সিজারের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি করলেও নিরাপত্তা নিয়ে মোটেই কাটছে না উদ্বেগ।

বরং দেশীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ত্রমেই বাড়ছে। এদিকে কূটনৈতিক এলাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছে সরকার। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাতে পুলিশের দৃশ্যমান তৎপরতা বেড়েছে ব্যাপকহারে৷

ইতিমধ্যে মহররম উপলক্ষ্যে আয়োজিত শিয়া সম্প্রদায়ের জমায়েতে গ্রেনেড হামলা হয়েছে৷ এতে এ পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হয়েছেন৷ 

tavellaখোদ রাজধানীতেই চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনের সময় খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা৷ এছাড়া হঠাৎ করেই প্রধান বিমানবন্দরসহ তিনটি বিমানবন্দরে নাশকতার আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ বিমানবন্দর ঘিরে ২৮টি সংস্থা কাজ করছে ৷ এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় কাজ করে ৯টি সংস্থার প্রায় আড়াই হাজার সদস্য৷ তবুও অতিথিদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷

এর অর্থ হচ্ছে গোয়েন্দাদের কাছে নাশকতার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মঙ্গলবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বিব্রতকর পরিস্থিতির আশঙ্কা থেকেই এ নিরাপত্তা জোরদার করেছি৷ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে৷ আমরা ইয়েলো বা রেড অ্যালার্ট জারি করিনি৷ শুধু নিরাপত্তা বাড়িয়েছি৷’

সোমবার সকালে হঠাৎ করেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়৷ বিমানবন্দরে দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রেও দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা৷ কড়া তল্লাশির মাধ্যমে যাত্রীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়৷

বিমানবন্দরের পরিচালক জাকির হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রোববার শেষ রাত থেকে বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে৷ রেড অ্যালার্ট জারির খবর সত্য নয়৷ শুধু নিরাপত্তা বাড়িয়েছি আমরা৷ তবে শুধুমাত্র হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নয়, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে৷

মঙ্গলবার থেকেই ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেও আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন) মোতায়েন করা হয়েছে৷ বিমানবন্দরের বাইরের নিরাপত্তায় এপিবিএন কাজ শুরু করেছে৷ এতদিন এপিবিএন শুধুমাত্র হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে মোতায়েন ছিল৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেটেও এপিবিএন মোতায়েনের চিন্তা রয়েছে৷ পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, দেশে পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটে গেছে৷ তাই আর যাতে কোনো ঘটনা না ঘটতে পারে সেজন্য নানা ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ এর অংশ হিসেবে বিমানবন্দরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ যদিও বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে সিভিল এভিয়েশন৷ সারাদেশে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এ সব নিয়ে কাজ করছেন৷

এই মুহূর্তে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন? জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যখন পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটে, তখন আমরা তো আর নতুন কোনো ঘটনা ঘটাতে দিতে পারি না৷ সে কারণে যে ধরনের ব্যবস্থা থাকা দরকার, তার সবই করা হয়েছে৷ আমার দৃষ্টিতে এই মুহূর্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি রাখা হয়নি৷

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, নিরাপত্তার শুধু জোরদার করলেই হবে না, গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়াতে হবে৷ পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে৷ ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাচলে সতর্কতা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে৷

ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার সোমবার এক ব্রিফিংয়ে ইতালির নাগরির তাবেলা সিজারের খুনিদের গ্রেপ্তারের কথা জানান৷ ওই দিনই ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা হালনাগাদ করেছে৷ দূতাবাসের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিদেশিদের উপর হুমকির বিষয়ে মার্কিনিদের জন্য জারি করা সতর্ক বার্তা এখনো বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য৷

দূতাবাস মার্কিন নাগরিকদের পূর্বসতকর্তা অবলম্বন এবং চলাচলে সব সময় সজাগ থাকার জোরালো পরামর্শ দিচ্ছে৷ একইসঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ দূতাবাসের কর্মীদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সতর্কতা অবলম্বন করতেও নির্দেশনায় বলা হয়েছে৷ এর আগের দিন ঢাকাস্থ যুক্তরাজ্য ও অষ্ট্রেলিয়া দূতাবাস নিজেদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে৷

এদিকে টাইম ম্যাগাজিনের সর্বশেষ প্রিন্ট সংস্করণের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের তালিকা প্রকাশ করে নৃশংস কায়দায় হত্যা, বিদেশি খুন এবং জঙ্গিদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের তৎপরতায় আতঙ্কে সময় পার করছে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ, বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল ধারার মানুষেরা৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে সরকার হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই৷

ভবিষ্যতের ভয়াবহতার ইঙ্গিত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ধারাবাহিকভাবে ব্লগার খুনের পর বিদেশিদের গুলি করে হত্যার ঘটনা অশুভ ইঙ্গিত৷ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠিগুলোর সাথে যোগাযোগ না থাকলেও স্থানীয় জঙ্গিরা এ সুযোগে তাদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ ছাড়বে না বলে আশঙ্কা তাঁর৷

সূত্র-ডয়েচে ভেলে

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!