DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

প্রান- ভেজাল ও মানহীন খাদ্যপন্যের সমাহারঃ খেলে গুরুতর স্বাস্থঝুকির আশংখা

pran প্রচার আর প্রসার তথা বিজ্ঞাপনে শীর্ষে রয়েছে কাদিয়ানীদের প্রতিষ্ঠান প্রাণ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির পণ্যের মান নিয়ে সম্প্রতি যে প্রশ্ন উঠেছে, তাতে শুধু গণমাধ্যম নয়, দেশবাসীও হকচকিত।

 

প্রাণ ব্র্যান্ডের নামে যেসব কথিত কোমল পানীয় ও জুস বাজারে বিক্রি হয়, এর কোনোটিরই গুণগত মান ঠিক নেই। এমনকি তা জনস্বাস্থ্যের জন্যও নিরাপদ নয়। মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা দীর্ঘদিন পর হলেও প্রাণের আটটি পণ্যের সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স বাতিল করেছে।

 

এ খবরে নড়েচড়ে বসেছে ভোক্তা থেকে শুরু করে ব্যাংক ও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

 

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সূত্রে জানা যায়, গুণগত মান বজায় রেখে উৎপাদন করতে না পারায় সম্প্রতি যে ৩১ কোম্পানির বিভিন্ন পণ্যের সিএম লাইসেন্স বাতিল করা হয়, সে তালিকায় প্রথম প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড।

 

প্রাণের যে ৮টি পণ্যের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ম্যাংগো, অরেঞ্জ, লেমন, স্ট্রবেরি, লিচি, আপেল, পাইনঅ্যাপেলসহ ফ্রুট ককটেইল নামের সব ফ্রুট ড্রিংকস।

বাংলাদেশী কোম্পানি প্রাণের পণ্যে ইঁদুরের বিষ্ঠা পেয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইতালির সীমান্ত কর্তৃপক্ষ। ফলে কোম্পানিটির পণ্যের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সতর্ক বার্তা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর আগেও দেশে ও বিদেশে কোম্পানিটির খাদ্যপণ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর ভাইরাস পাওয়া যায়।

 

কোম্পানিটির রফতানি পণ্যে ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ ভাইরাস (খুরারোগ) ও পোকামাকড়ের উপস্থিতি থাকায় ২০১৪ সালের শেষের দিকে কানাডা থেকে খাদ্যপণ্য ফেরত আসে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর প্রাণের পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দি ইন্টারন্যাশনাল ফুড সেফটি অথরিটিস নেটওয়ার্ক (আইএনএফওএসএএন)।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছে, প্রাণের যেসব কথিত কোমল পানীয় ও জুস বাজারে বিক্রি হয়, এর কোনোটিরই গুণগত মান ঠিক নেই। জনস্বাস্থ্যের জন্যও নিরাপদ নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাণের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশী পণ্য প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু প্রচার আর প্রসারে শীর্ষে রয়েছে কাদিয়ানিদের এ প্রতিষ্ঠান। সূত্র জানায়, ইঁদুরের বিষ্ঠা ধরা পড়ার পর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই চালানের সব পণ্য জব্দ করে তা অনুমোদনহীন আমদানি বলে ঘোষণা করা হয়।

 

এরপর চলতি ২০১৫ সালের ২৩ মে ‘ব্যাপিড অ্যালার্ট সিস্টেম ফর ফুড অ্যান্ড ফিড’ শীর্ষক এক সতর্কবার্তা জারি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে স্বাস্থ্যঝুঁকির উপাদানসহ মানহীন পণ্য রফতানি নিয়ে ওই সতর্কবার্তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ইইউর হেলথ অ্যান্ড কনজিউমারস ডিরেক্টরেট জেনারেলের কার্যালয়।

 

সূত্র জানায়, ইতালিতে রফতানি হওয়া পণ্য যাচাই-বাছাই করে দেশটির সীমান্ত কর্তৃপক্ষ। প্রাণ এগ্রো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির রফতানিকৃত খাদ্যপণ্যের চালানে রোডেন্ট এক্সট্রেমেন্টের (ইঁদুরের বিষ্ঠা) উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর তা জব্দ করা হয়। চালানটি অনুমোদনহীন আমদানি ঘোষণা করে বর্ডার রিজেকশন নটিফিকেশন।

 

২০১৪ এভিই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয় বাংলাদেশের বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই), বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফভিএপিইএ) ও প্রাণ এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি।

 

ইইউ’র সতর্কবার্তার তথ্যানুসারে, ইতালির বাজারে প্রবেশাধিকার না পাওয়া ও জব্দকৃত প্রাণের ওই চালানে ছিল মিশ্র খাদ্যপণ্য। চালানটির ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করা হয় ‘রোডেন্ট এক্সট্রেমেন্ট’। এ প্রসঙ্গে বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমাদ ইসমাইল মুস্তফা বলেন, রোডেন্ট হল ইঁদুর বা চিকা জাতীয় প্রাণী। আর এক্সট্রেমেন্ট হল মলমূত্র। বিজ্ঞপ্তির বিষয়বস্তু অনুযায়ী রফতানিকৃত খাদ্যপণ্যে ইঁদুরের বিষ্ঠা রয়েছে, তা বলা যায়।

 

জানা গেছে, তিন দশকের বেশি সময় ধরে দেশে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য বাজারজাত করছে প্রাণ। তবে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে কোম্পানিটির খাদ্যপণ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর ভাইরাস পাওয়া যায়। প্রাণ গ্রুপের রফতানি পণ্যে ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (খুরারোগ) ভাইরাস ও পোকামাকড়ের উপস্থিতি থাকায় ২০১৪ সালের শেষের দিকে কানাডা থেকে খাদ্যপণ্য ফেরত আসে। তাতে ছিল প্রাণ টোস্ট বিস্কুট, ট্রি ব্রেক, চানাচুর, ম্যাংগোবার, চাল, ঝালমুড়ি, চিড়াভাজা, চিড়ালাড্ডু, পটেটো ক্র্যাকার্স ও মাস্টাড অয়েল।

 

আবার ২০১৪ সালের জুন মাসের শেষদিকে দূষণের দায়ে পরিবেশ অধিদফতরের জরিমানার ফাঁদে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। গুঁড়োদুধ বাজারজাতকরণে আইন না মানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নজরদারিতেও পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রাণের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দি ইন্টারন্যাশনাল ফুড সেফটি অথরিটিস নেটওয়ার্ক (আইএনএফওএসএএন)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহযোগী হিসেবে আইএনএফওএসএএন সারা বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে।

 

এছাড়া প্রাণের বাজারজাতকৃত খাদ্যপণ্যের মান যাচাই-বাছাই করার জন্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটকে (আইপিএইচ) চিঠিও দেয় সংস্থাটি। এছাড়া রফতানি করা প্রাণের গুঁড়া হলুদে উচ্চমাত্রার সিসা উপস্থিতির প্রমাণ পায় যুক্তরাষ্টে র ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)।

 

এরপর দেশটির বাজার থেকে প্রাণের গুঁড়া হলুদ প্রত্যাহার করে নিতে চারটি পরিবেশক সংস্থাকে নির্দেশ দেয় সংস্থাটি। পরবর্তীকালে বাংলাদেশেও প্রাণের হলুদ পরীক্ষা করলে তাতে উচ্চমাত্রার সিসা থাকায় কোম্পানির সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) সনদ বাতিল করে বিএসটিআই।

 

এ প্রসঙ্গে বিএফভিএপিইএ সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, খাদ্যপণ্যে এ ধরনের ত্রুটি অবশ্যই আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। এ ব্যাপারে শক্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া উচিত। ইউরোপের বাজারে কঠোর নজরদারির কারণে খাদ্যপণ্যে নানা ত্রুটি ধরা পড়লেও দেশের বাজারে তা দেদারসে বিক্রি হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের অধ্যাপকরা এ প্রসঙ্গে বলেছে, ত্রুটিযুক্ত খাদ্য আমাদের দেশসহ বিশ্বেও যেকোনো প্রান্তের মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। সরাসরি ভোক্তার শরীরে প্রবেশ করে, এমন পণ্য ত্রুটিমুক্ত নিশ্চিত না করা গর্হিত অপরাধ।

 

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে আমে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিন মেশাতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দন্ডিত হয় প্রাণের দুই কর্মকর্তা। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামে আমে ফরমালিন মেশানোর দায়ে প্রাণের কর্মকর্তাসহ একজনকে কারাদন্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি জেলায় প্রাণের জুসে ফরমালিন পাওয়া যায়। এর আগে প্রাণ গ্রুপের রফতানি পণ্যে ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ ভাইরাস ও পোকামাকড়ের উপস্থিতি থাকায় কানাডা থেকে খাদ্যপণ্য ফেরত আসে ২০১৪ সালের জুলাইয়ে। গুঁড়োদুধ বাজারজাতকরণেও আইন না মানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারিতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রাণের ফ্রুট ড্রিংকস নিরাপদ নয়, এমন তথ্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) থেকে জানানোর পর প্রাণের আটটি পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি বন্ধের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চায় আদালত। এছাড়া জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব পণ্য বাজারজাত বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।

 

প্রসঙ্গত, পবিত্র হাদীছ শরীফে  ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়।” এই পবিত্র হাদীছ শরীফ কাদিয়ানী এবং তাদের ব্যবসায়িক গ্রুপ প্রাণ এর জন্য আক্ষরিক অর্থেই সত্য। তারা যেহেতু আখিরী রসূল, খাতামুন নাবিইয়ীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শেষ নবী হিসেবে মানে না; তাই কাদিয়ানীরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত নয়। অর্থাৎ মুসলমানই নয়।

 

আর মুসলমান তথা কাফির কাদিয়ানীদের জন্য তাই ধোঁকা দেয়া খুবই স্বাভাবিক এবং সেই ধোঁকা বা ভেজাল এতদিন যাবৎ কাদিয়ানীদের ব্যবসায়িক গ্রুপ প্রাণ দিয়ে আসছিল।

 

কিন্তু এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানগণ উনাদের উচিত- কাদিয়ানীদের ধোঁকায় না পড়া এবং প্রাণের কোনো পণ্য না কেনা। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মু’মিন এক গর্তে দুইবার পড়ে না।”

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!