DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সেনাবাহিনীকে উর্ধতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

hasina6প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা, ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃংখলা বজায় রেখে আপনারা স্বীয় কর্তব্য সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে জেনারেলস কনফারেন্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান।

সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর জেনারেলদের সাথে মতবিনিময় করেন ।

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান ইকবাল করিম ভূইয়া, সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেনেন্ট জেনারেল মইনুল হোসেইন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার আবু বেলাল মুহাম্মাদ সাইফুল হক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ও উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যাত্রা শুরু হয়। সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় গত দুই মেয়াদে তাঁর সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছে।

তিনি বলেন, সরকারের এই দৃঢ় ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে সেনাবাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা দেশ ও বহির্বিশ্বে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তাঁর সরকারের সেনাবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিভিন্ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিগত মেয়াদে অনেকগুলো ইউনিট গঠন, প্রশিক্ষণের মান যুগোপযোগী করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং পদাতিক কোরের উন্নয়ন ও এর কাজের গতিশীলতায় নতুন করে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে বিশ্বাসী এবং সেই অভিষ্ঠ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর ফোর্সেস গোল ২০৩০’র বাস্তবায়ন অনেক দূর এগিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সাংগঠনিক কাঠামোতে আধুনিক অস্ত্র, গোলাবারুদ ও যোগাযোগ সরঞ্জামাদি অন্তর্ভুক্ত করেছি, যা সামগ্রিকভাবে আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর সমরশক্তি ও চলাচল ক্ষমতাকে অনেকগুণে বৃদ্ধি করেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন গঠন করা হয়েছে। এছাড়া, পর্যায়ক্রমে আগামী ৫ বছরে নবগঠিত ১৭ পদাতিক ডিভিশনের অর্গানোগ্রামে আরও ৩০ টি নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রস্তাাবিত পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার জন্য নবগঠিত ৯৯ ক¤েপাজিট ব্রিগেড পূর্ণদ্যোমে দায়িত্ব পালন করছে।’

শেখ হাসিনা সরকারের তৃতীয় মেয়াদে সেনাবাহিনীর উন্নয়নে গৃহিত কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ইতোমধ্যে রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং এর অধীন ১টি আর্টিলারি ব্রিগেড, ১টি পদাতিক ব্রিগেড, ১টি আর্টিলারি ইউনিট এবং ২টি পদাতিক ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে আরও কার্যক্ষম ও যুপোপযোগী প্রচুর অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম সংযোজিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেইন ব্যাটেল ট্যাংক, সেল্ফ প্রোপেল্ড গান সিস্টেম, উইপন লোকেটিং র‌্যাডার, এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার ইত্যাদি। এই অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি সংযোজনের ফলে সেনাবাহিনীর কার্যক্ষমতা, যুদ্ধের সামর্থ্য এবং সেনাসদস্যদের মনোবল বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া রাশিয়ান ফেডারেশনের ১ বিলিয়ন ডলার সামরিক ঋণ প্রোটোকলের মাধ্যমে ৬টি এম আই -১৭১ হেলিকপ্টার, ৩৩০টি এ পি সি এবং ১০টি আর্মার্ড রিকভারী ভেহিকেল ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে। এর প্রথম চালান ২০১৬’র শেষ নাগাদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহরে যুক্ত হবে। এ সঙ্গে ১৭৪টি টি-৫৯ ট্যাংকের উন্নীতকরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি বলেন, ফায়ার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে ইতোমধ্যে এক ব্যাটারী এম এল আর এস ক্রয় করা হয়েছে এবং আরও দু’টি এম এল আর এস ব্যাটারী ২০১৫ সালের মধ্যে সেনাবাহিনীতে সংযোজনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর ১টি পূর্ণাঙ্গ এম এল আর এস রেজিমেন্ট সাভার সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এছাড়াও ২০১৬ সালের মধ্যে দুইটি এফ এম-৯০, সারফেস টু এয়ার মিশাইল রেজিমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হবে। এর ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব সমর শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরও পেশাগত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!