DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সরকারের উপর আন্তজার্তিক ও কূটনৈতিক চাপ ক্রমেঃ বাড়ছে

world1চলমান রাজনৈতিক সংকটে সরকারের ওপর আন্তজার্তিক ও কূটনৈতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে। অবস্থার উত্তরণে সরকার, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, বিরোধী দল এবং কূটনীতিকরা সক্রিয়তা বাড়িয়েছেন।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক চাপ নেই। বরং বিশ্ব সম্প্রদায়ের আস্থা রয়েছে। এদিকে শুধুমাত্র গত বৃহস্পতি থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান ও ভারত। সেইসাথে জাতিসংঘের সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিএনপি সমর্থিত সুশীল সমাজের লোকজন। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি কূটনীতিকদের সাথে শনিবার আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবে।

 

ভারতে সফরকালে গত ২৬ জানুয়ারি বৈঠককালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে। কূটনৈতিক সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সামলানোর অঙ্কে সরকার এখন স্পর্শকাতর অবস্থানে রয়েছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মতে, সরকার কোনো প্রকার আন্তর্জাতিক চাপ অনুভব করছে না। বরং বিশ্ব সম্প্রদায়ের আস্থা রয়েছে।

 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মেরি হার্ফ এক বিবৃতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটি। বিবৃতিতে সহিংসতা পরিহার করতে সব নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দিতে সব দলকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র পরিচালক ফিল র‌্যাইনার জানান, বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও প্রাণহানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ধরনের ঘটনার তদন্ত চেয়েছে বৃটেনও। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ফিরে দেয়া বিবৃতিতে বৃটেনের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বলেন, এসব সহিংসতা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার এ চক্র ভাঙতে সকল পক্ষকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে, সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।

 

এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি পিয়েরে মায়দুনের বাসায় এক বৈঠক ও নৈশভোজে আওয়ামী লীগ নেতারা চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আলোচনায় রাজি বলে জানিয়েছেন। বৈঠকে ইইউ ছাড়াও ইউএস এইডের প্রতিনিধি এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

 

বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু সাংবাদিকদের জানান, ইইউ প্রতিনিধি আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাই আমরা গিয়েছিলাম। আমরা জানিয়েছি, আলোচনা করতে হলে বিএনপিকে আগে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। বৈঠকে আরো যোগ দেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টি নেতা তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু প্রমুখ।

 

যে ভারত একসময় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে ঢাকায় এরশাদের কাছে পররাষ্ট্র সচিব পাঠিয়ে প্রকাশ্যে তাদের পক্ষে ভোট চেয়েছিল তারাও এখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক তা চাইলেও কোনো হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এম জে আকবর গত বৃহস্পতিবার দিল্লীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা সব সময় চাই- আমাদের দেশ ও প্রতিবেশী দেশে শান্তি থাকুক। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলেও সেখানে নাক গলানো বা হস্তক্ষেপ করাটা কিন্তু ভারতের নীতি নয়। সেটা ভারত কখনো করেনি, করবেও না।

 

বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি ভারতের এ মনোভাব চাপ হিসেবে কাজ করছে বলে জানান কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে সরকার ও বিএনপির মধ্যে সংলাপের আয়োজন করতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে গত বুধবার চিঠি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও শত নাগরিক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ।

 

ঢাকায় জাতিসংঘ আবাসিক প্রতিনিধি ক্রিস্টিনা রেডার কাছে এ চিঠি তুলে দেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, ইতিপূর্বে জাতিসংঘের কর্মকতা তারানকো এসে দুই দলের মধ্যে সংলাপের আয়োজন করেছিলেন। জাতিসংঘের উদ্যোগে আবারো যেন সংলাপের আয়োজন করা হয় সেজন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছি। বাংলাদেশ-জাপান সচিব পর্যায়ের প্রথম বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, সফররত জাপানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সচিব) ইয়াসুহিদি নাকায়ামা বলেছেন, জাপান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না।

 

এদিকে, শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সম্মানে হোটেল ওয়েস্টিনে নৈশভোজের আয়োজন করেছে বিরোধী দলের নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ। সূত্র জানায়, কূটনীতিকদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবেন রওশন এরশাদ। বৈঠকে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও থাকবেন। শুক্রবার তিনদিনের ভারত সফর শেষে এরশাদ দেশে ফিরেছেন। দেশের বর্তমান সংকট এবং কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যে পূর্ণাঙ্গ নয় তা পশ্চিমা বিশ্বসহ সকলেই অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন।

 

ভারতের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও ঢাকা সফরে একই কথা বলে গেছেন। ওই নির্বাচনের পর সরকার বলেছিল, ওইটা ছিল নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। তাই যতদিন পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন হবে না ততদিন বিশ্ববাসী এটা নিয়ে কথা বলবেই। সংকট থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসতে হবে। সংলাপে বসে সমাধানের রাস্তা বের করতে হবে। এ ছাড়া কোন সমাধান নেই।

 

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, এভাবে তো আর দিনের পর দিন চলতে পারে না। তবে প্রধানমন্ত্রীও যে এ সব নিয়ে উদ্বিগ্ন, সেটা বোঝা যাচ্ছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, খুব সহসাই আমাদের প্রধান দুই নেত্রীকে সমঝোতায় আসতেই হবে। কারণ এভাবে চলতে পারে না।

 

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ের ১৪ দলের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ইইউসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের উদ্বেগ প্রকাশ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা বিদেশিদের ‘রুটিন ওয়ার্ক’।

এটা শুধু উদ্বেগ, এ নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। তবে বিকেলে একই স্থানে আলেম-ওলামা, নারী সংগঠক ও পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ আমাদের কিছু বলেনি, ওদেরকে (বিএনপি জোট) বলেছে। ওদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক আস্থা বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের জানানো হচ্ছে। দেশের বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোকেও এ বিষয়ে যথাযথ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!