DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংলাপের জন্য ক্রমশঃ বাড়ছে বিদেশী চাপ

93708_1চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে।
 
এরই মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বেগ প্রকাশ করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় কূটনীতিকরাও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন।
 
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, এসব বৈঠকে তারা বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন ভারতের শাসক দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ।
 
বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানান। সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সুশীল সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করে যুক্তরাজ্য।
 
রবার্ট গিবসন বলছেন, ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে সারা দেশে যে সহিংসতার সংস্কৃতি ফের শুরু হয়েছে তা দেশের জন্য মোটেই কাম্য নয়। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনকে ঘিরে প্রতি পাঁচ বছর পর দেশে যে সহিংসতার রাজনীতি ফিরে আসে সেটি এ দেশের অর্থনীতির জন্য শুভ নয়। অন্য সব বন্ধু রাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের এ সংস্কৃতির বিলোপ চায়।

 

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসও। বুধবার দূতাবাসের মুখপাত্র মনিকা এল শাই সহিংস কর্মকান্ড  থেকে বিরত থাকতে, সংঘাত ও  ভীতিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান।
 
৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর থেকেই পরবর্তী নির্বাচন কোন পন্থায় হবে তা ঠিক করতে সংলাপ অনুষ্ঠানে বড় দুই রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে দেশটি। কূটনেতিক সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় কূটনীতিকরা। এসব বৈঠকে তারা চলমান সঙ্কট নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
 
এসব বৈঠক যখন হচ্ছে ঠিক তার কিছুদিন আগে বাংলাদেশে দায়িত্ব দিয়ে ড. গাব্রিয়েলা গুয়েলিলকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জার্মানি। কিন্তু তার ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছে ঢাকা। ‘অবরুদ্ধ’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বুধবার ফোন করেন ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহ।
 
বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান  সাংবাদিকদের জানান, অবরুদ্ধ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পিপার স্প্রে নিক্ষেপের ফলে অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহ। স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
 
বিজেপি সভাপতির খালেদা জিয়াকে ফোন করার পরদিনই ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়াতে একটি কলাম লিখেছেন দেশটির সাংবাদিক রুদ্রনীল ঘোষ। তাতে তিনি লিখেছেন, … বাস্তবতা হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অনুপস্থিত। বিএনপি যদি সত্যিই আইন প্রণয়নে সংসদের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে তাহলে তাকে অবশ্যই বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে এবং পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট মেনে নিয়েই তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।
 
তবে এসব সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে একটি সংলাপের উদ্যোগ না নিয়ে ভুল করেছে। সত্য বটে, আওয়ামী লীগ নৈতিক এবং আইনগতভাবে সঠিক। কিন্তু তারা আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক গোলযোগ উপেক্ষা করতে পারে না। বিএনপি যদিও সংসদের বাইরে রয়েছে, তদুপরি তারা জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
 
এটা এমন একটি সরল সত্য, আওয়ামী লীগ যা এড়িয়ে যেতে পারে না। এটা সুখপ্রদ যে, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মতপার্থক্য ঘোচাতে সংলাপের জন্য সব দলকে বৈঠকে বসতে আহ্বান জানিয়েছেন।
 
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের বিবৃতিতে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের ব্যাপারে তদন্ত এবং আটককৃতদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে হবে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, নিজের অধিকার চর্চার কারণে কাউকে গ্রেফতার, হয়রানি বা হুমকিধমকি দেয়া হবে না সেটা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে তা করতে হবে।
 
অন্যদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের শক্তির অপপ্রয়োগ, বিরোধী দল দমনে গ্রেফতার, গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণারোপ ও সেন্সরশিপ, জনগণের মতকে দমনের বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন। অনাকাক্সিক্ষত এসব ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!