DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়াই হবে ‘গণতন্ত্র রক্ষা’: বিশিস্ট নাগরিকবৃন্দ

intalectual৫ জানুয়ারি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে বড় দুই দল। আওয়ামী লীগের ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ আর বিএনপির ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে ডাকা হয়েছে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ। তবে রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীতে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করায় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ২০০ পয়েন্টে ‘সতর্ক’ অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপি কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তে অটল। এর মধ্যে দলের চেয়ারপারসনকে তার কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাকে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলেও অন্য কোথাও যাওয়ার ব্যাপারে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্রশাসন।

এদিকে ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে যখন এই পরিস্থিতি তখন রোববার দুপুর থেকেই শুরু হয়েছে গাড়ি ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকের জানমাল, দেশের ভবিষ্যৎ ও গণতন্ত্র নিয়ে শঙ্কিত দেশের বিশিষ্টজনরা। বাংলামেইলের সঙ্গে আলাপকালে এমন শঙ্কার কথাই জানিয়েছে।

তারা বলেছেন, বিরোধী দলগুলোকে সভা সমাবেশ ও মত প্রকাশ করতে না দেয়া গণতন্ত্র নয়। এর ফলে গণতন্ত্র ও দেশের ভবিষৎ অনিশ্চিয়তার দিকে চলে যাবে। এ অবস্থায় বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়াই হবে আওয়ামী লীগের ‘গণতন্ত্র রক্ষা’ আন্দোলনের সাফল্য। আর এর ব্যতিক্রম হয়ে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এর দায় দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবিতে সে নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপিসহ অধিকাংশ দল। এরপর থেকে সরকার পতনের আন্দোলন করে যাওয়া ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে সর্বশেষ গত ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে সমাবেশের ডাক দেয় তারা। কিন্তু ছাত্রলীগের বাধা ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারির ফলে সমাবেশ করতে পারেনি দলটি।

চলতি মাসের ৫ জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তি। দিবসটিকে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ উপলক্ষে বিএনপির পাশাপাশি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। দুই দলের এমন মুখোমুখি অবস্থায় রাজধানীতে সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পুলিশ।

এসব বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সরকার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অহেতুক জটিলতা ও অস্থিতিশিলতা সৃষ্টি করেছে। তারা আমাদেরকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এদের কাছে জনগণ জিম্মি ও গণতন্ত্র অবরুদ্ধ। মানুষের চলা ফেরা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সভা সমাবেশ করতে দেয়া গণতান্ত্রিক দেশের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকারগুলো চর্চা করতে দেয়া না হলে দিন দিন গণতন্ত্র হারিয়ে যাবে, মানুষ ফুঁসে উঠবে। ক্ষমতাশীনরা এভাবে করতে থাকলে তারা জনপ্রিয়তা হারাবে।’

এভাবে চলতে থাকলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছলে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে সুশীল সমাজের এই প্রতিনিধি বলেন, ‘এরা এখন ব্যক্তিগত ও দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জনগণের ওপর বলপ্রয়োগ করে চলছে। বিএনপির আমলেও তারা দলীয়ভাবে এদের ব্যবহার করতে চেষ্টা করেছে ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের আমলেও হচ্ছে। এটা কাম্য নয়।’

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এভাবে বল প্রয়োগ করা শুরু হলে দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার দিকে চলে যাবে। গণতন্ত্র নীরাপত্তাহীনতায় পড়বে। এ অধিকারহীনতার জন্য আমাদেরকেও বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্র হারিয়ে যাবে।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘৫ জানুয়ারি নিয়ে গোটা দেশ উৎকণ্ঠায় রয়েছে। জনগণ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলসহ কারো কোনো কিছুই নেই।’

রাজধানীতে সভা সমাবেশের ওপর পুলিশের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এর কারণে কিছু হলে এর দায় দায়িত্ব সরকারের। কারণ সরকার যা-ই বলে পুলিশ তা-ই বাস্তবায়ন করে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকার ফায়দা লুটাতে চায়। সরকারের উচিৎ বিরোধী দলগুলোকে তাদের মত প্রকাশের অধিকার দেয়া।’

একই মত প্রকাশ করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সভা সমাবেশের ওপর নিষেধজ্ঞা কোনো রূপেই যৌক্তিক হতে পারে না। সরকার অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। কারণ এর আগেই বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার মেসেজ (বার্তা) দিয়েছিল। সরকারের উচিৎ ছিল তাদেরকে সমাবেশ করতে দেয়া।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে সমাবেশে করতে দেয়া হবে না। সরকারের লোকজন বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে কিন্তু পুলিশ তাদেরকে কোনো বাধা দিবে না। এটা হতে পারে না। সরকারের আচরণে জনগণ আজ অবরুদ্ধ। সব স্থান থেকে বাস আসতে দেয়া হচ্ছে না। জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে।’

৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র রক্ষা দিবস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনে গণতন্ত্রের কোনো রূপ ফুটে ওঠেনি। কারণ গণতন্ত্রের অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে নির্বাচন। আগে সর্বদলীয়ভাবে এ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতো। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনো নির্বাচন হতে পারে না। এ নিয়ে বড়াই করার কিছুই নেই।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশে ভয়ঙ্কর আতঙ্কজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকার ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের মানে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যদি গণতন্ত্রের বিজয় হয়ে থাকে তাহলে বিরোধী জোট কেন অবরুদ্ধ থাকবে। এজন্য কেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে আটকে রাখা হবে?’

তিনি বলেন, ‘আজ পুলিশ দিয়ে ঢাকা মহানগরকে সমস্ত দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। এটা দেশের জন্য একটি অশনি সংকেত। ভয়াবহ দুর্যোগের লক্ষণ। এর জন্য দায়ী বর্তমান সরকার। আমরা বিশ্বাস, অতি দ্রুত সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।’

খালেদা জিয়াকে সমাবেশ করতে দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!