DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সরকার বিরোধী আন্দোলনের পূর্বক্ষনে আবার সরব হয়ে উঠছেন মওদূদ আহমেদ!

103111_1বিএনপির রাজনীতিতে আবারও সরব হয়ে উঠছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। সমাবেশেও বক্তৃতা করছেন। সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। সরকারের সিনিয়র একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গেও তার ভাল সম্পর্ক ও যোগাযোগ রয়েছে। এই সব খবরও বিএনপি চেয়ারপারসনের কানেও যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন, তার দুই ছেলেকে নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদে তার সব শেষ বইয়ে এমন সব কথা লিখেছেন যেটা বিএনপি চেয়ারপারসন আশা করেননি। তার ওই লেখনি তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। কষ্টও দিয়েছে। অনেক সমালোচনাও তাকে সহ্য করতে হয়েছে। মওদুদের ওই লেখা নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও এই ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়ার কিছুই করার ছিল না। পুরোটাই সহ্য করতে হয়েছে। কারণ ভুলটা তিনি নিজেই করেছিলেন। এই কারণে নিজের ভুলের মাশুল তাকে দিতে হয়েছে।


এই ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, ম্যাডাম তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন। কারণ তার সম্পর্কে অনেক দিন ধরেই ম্যাডামের কাছে নানা খবর আসছিল। সরকারের থাকা তার আতœীয় এমন এক উপদেষ্টার সঙ্গে তার বিভিন্ন বৈঠকের কথাও শুনেছেন। এছাড়াও আরো অনেক খবর আসতো। এনিয়ে ম্যাডাম বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ ছিলেন। কিন্তু বিশেষ কারণে কিছু বলতে পারছিলেন না। তার মতো সিনিয়র নেতাকে তিনি কষ্ট দিতে চাননি। যখন বইটি প্রকাশ হলো ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সেটা হাতছাড়া হয়েছে তার কারণেই। কারণ তিনি যখন বইটি প্রকাশ করেন এর কয়েকদিন আগে বইটি বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে দিয়ে আসেন পড়ার জন্য। তিনি এটাও অনুরোধ করেন যে পড়ে ম্যাডাম যেন প্রতিক্রিয়া দেন। সব বিষয় না বললেও বইয়ে তিনি কি কি বিষয় লিখেছেন এরও একটা সংক্ষিপ্ত ধারণা দেন। ওই ধারণা থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন ধরে নেন যে বইটি ঠিকই আছে। প্রকাশ করলে কি আর হবে। তাকে বিশ্বাস করেই আর বইটি পড়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। বইটি যেভাবে দিয়ে গিয়েছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ সেইভাবেই রয়ে যায়। অন্য কোন নেতারও বইটি আগে পড়ার সুযোগ হয়নি। কারণ চেয়ারপারসন দলের কোন নেতাকেও বইটি আগে পড়ে তাকে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য দেননি। তা না দেওয়ার কারণে ব্যারিস্টার মওদুদ ধরেই নেন যে তার বইটি ম্যাডামের পছন্দ হয়েছে। কোন অংশে তার কোন আপত্তি নেই। যেহেতু ম্যাডাম কোন নেতিবাচক কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তিনিও বইটি প্রকাশ করে দেন। বইটি প্রকাশ করার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় ও হৈ চৈ পড়ে যায়। কিন্তু তখন আর বেগম খালেদা জিয়ার কিছুই করার ছিল না।তবে নেতা কর্মীদের আশ্বস্ত করতে, শান্ত রাখতে ও দেশবাসি যাতে দলের অবস্থান জানতে পারে এই জন্য রহুল কবির রিজভীকে দিয়ে বইটি প্রকাশের পর পরই বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করিয়ে দলের ভেতরে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করান। এরপর কথা উঠে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। কেবল তাকে কিছু দিন দলীয় ব্যানারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্ততায় ডাকা হয়নি। তবে তিনি দলের যে সব বৈঠকে তার উপস্থিত থাকার কথা সেগুলোতে থেকেছেন। এখনও থাকছেন।

ওই সূত্র জানায়, ব্যারিস্টার মওদুদ বেশ কৌশল করেই বইটি ম্যাডামকে আগে দিয়ে গেছেন। তিনি জানতেন যে তিনি যেটা বলে গেছেন ম্যাডাম সেটাই বিশ্বাস করবেন। আর হয়তো বইটি নাও পড়তে পারেন। সেই কারণেই তার কোন ঝুঁকি ছিল না। মওদুদের দাবি তিনি বইয়ে বিএনপির ক্ষতি হবে এমন কোন কথা লিখেননি বরং সরকারের সমালোচনা করেছেন।

এই ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, ম্যাডামকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বইটি আগে দিয়ে গিয়েছিলেন এটা সত্য। কিন্তু ম্যাডাম সময়ের অভাবে ও তার কথা বিশ্বাস করার কারণে আর প্রকাশের আগে বইটি পড়তে পারেননি। কিন্তু প্রকাশিত হওয়ার পর কি হয়েছে এটাতো আপনারা সবাই দেখেছেন। তিনি বলেন, দলের ভেতরে অনেক নেতাই অনুরোধ করেছিলেন তার ব্যাপারে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিন্তু সেটা এই কারণে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে সূত্র জানায়, ব্যারিস্টার মওদুদ নিজেকে নিরাপদে রাখার ব্যপারে সব সময়ই যতœশীল। তিনি কখনো তার বিপদ ডেকে আনেন না। যে কোন পরিস্থিতি কেমন করে মোকাবিলা করতে হয় সেটা তিনি জানেন। এই কারণে মাঝে যে সমস্যা হয়েছিল সেটা কাটিয়ে উঠেছেন। এখন আবার সব অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। ৪ ডিসেম্বর জাপান রাষ্ট্রদূতের বাস ভবনেও তিনি একটি গেট টুগেদার অনুষ্ঠানে যোগ দেন তার স্ত্রী সহ। সেখানে তারা বিভিন্ন অতিথিদের সঙ্গে কথা বলেন। এরমধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি সময় কাটান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও বর্ষীয়াণ নেতা যিনি ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা তোফায়েল আহমেদ। তার সঙ্গে প্রায় আধঘন্টা রাষ্ট্রদূতের বাসার লনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ কথা বলেন। প্রথমে হাসনা মওদুদ তাদের পাশে থাকলেও পরে রাজনৈতিক আলোচনার সময়ে তিনি কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ান। এই সময়ে তারা চলমান রাজনৈতিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। ব্যারিস্টার মওদুদের এই কথাও চলে গেছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে। তবে এখনও তাকে কিছু বলা হয়নি। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিএনপিকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বাইরে রাখার অন্যতম কারিগর হচ্ছেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি এমনভাবেই কৌশল করে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের প্রতিনিধি অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে বোঝাতে সক্ষম হন যে তারা প্রথমে একটি নিয়ম ও সংবিধান রক্ষার নির্বাচন করবে। এরপর সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করবে। বিএনপি যেহেতু এখন নির্বাচনে আসতে চাইছে না কিন্তু তারা চেষ্টা করেছেন নির্বাচনে আনার জন্য। এখন তারা না আসলেও আওয়ামী লীগকে একটা নির্বাচন করতেই হবে। নাহলে সংবিধান রক্ষা হবে না। সংবিধান রক্ষা করা না গেলে নির্বাচন যথাসময়ে না হলে অসাংবিধানিক ক্ষমতাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তারানকোও মনে করেছিলেন তারা আলোচনা করে সমাধানে আসবেন।

তিনি যাওয়ার পর সব মিলিয়ে দুই দলের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতির মধ্যেই দুই দল দুই দলের নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়। তারা আলোচনা শেষে নীতনির্ধারক পর্যায়ে আলোচনার জন্য তাদের স্ব স্ব দাবি লিখিত আকারে দেন। সেটা নিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন বিএনপির দাবির বিষয়ে দলের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরপর আর সেটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। নির্বাচন হয়ে গেছে। ওই নির্বাচন করার পর সরকার আর নির্বাচন করার কথা ভাবছে না। তারা ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। আর সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ পুর্তির বিষয়েও কাজ করছেন তোফায়েল আহমেদ। তার সঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদের দীর্ঘ সময়ে কথাবার্তা বেগম খালেদা জিয়া স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি বলে সূত্র জানায়। কারণ ব্যারিস্টার মওদুদকে এই ব্যাপারে বিএনপির তরফ থেকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!