DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

শেখ মুজিব ‘বঙ্গবন্ধু’ নয়, ‘পাকবন্ধু’:দেশনায়ক তারেক রহমান

T-4শেখ মুজিবুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধু’ নয়, ‘পাকবন্ধু’। ‘জাতির জনক’ নয় ‘জাতির হত্যাকারী’ এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, ‘৭ মার্চে পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগান দিয়ে শেখ মুজিব বক্তৃতা শেষ করেছেন। ২৫ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অস্বিকৃতি জানিয়ে বলেছেন, এটি তার বিরুদ্ধে দেশোদ্রোহিতার দলীল হয়ে থাকবে। এরপর তিনি স্বাধীনতাকামীদের নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তাই সঙ্গতকারনেই বলা যায়, শেখ মুজিব ‘বঙ্গবন্ধু’ নয় ‘পাকবন্ধু’।’

তারেক রহমান আরো বলেন, ‘শেখ মুজিব ৭ মার্চ কিংবা ২৫ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে মুক্তিযুদ্ধে এতলোক মারা যেতো না। যার অদূরদর্শিতা কিংবা আপোষকামিতার ফলে মুক্তিযুদ্ধে এত লোকের প্রানহানী হয়েছে তিনি ‘জাতির জনক’ হতে পারেন না। তিনি হত্যাকারী।’

সোমবার পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীনে ইয়র্ক হলে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বিশ্বনেতা শহীদ জিয়াউর রহমান : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান আবারো অভিযোগ করে বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরেন শেখ মুজিব। এসেই মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রকে পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি থেকে দুইদিন পরই প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। সংবিধানের এতবড় মৌলিক পরিবর্তনের সময়ও তিনি জনগণের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে স্বাধীন হওয়ার পর যিনিই পাকিস্তানের পাসপোর্ট গ্রহণ করেন আইনের দৃষ্টিতে তিনি সেই দেশেরই নাগরিক। একজন পাকিস্তানের নাগরিক কীভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী হলেন, আজ হোক কাল হোক সেই প্রশ্নের জবাব অবশ্যই জনগণের সামনে দিতে হবে। গলাবাজি করে, র‌্যাবের বন্দুকের ভয় দেখিয়ে কিংবা মন্ত্রী পাঠিয়ে বই পুড়িয়ে ইতিহাসের সত্য আড়াল করা যাবে না।’

সভায় তারেক রহমান ১৯৭৩ সালে তৎকালীন ছাত্রনেতা বর্তমানে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলামের একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘৭৩ সালে ৩রা জানুয়ারি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, দেশের জনগণ এবং গণমাধ্যমের কাছে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ছাত্র হত্যার অভিযোগে শেখ মুজিবের সকল পদবী প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। কেউ যেন শেখ মুজিবের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’ কিংবা ‘জাতির জনক’ না বলেন, না লেখেন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের দুঃশাসনে আওয়ামী লীগের গর্ব করার কিছু নেই। বরং শেখ মুজিব আওয়ামী লীগকে সাংবিধানিকভাবেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এখন শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডই আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র পুঁজি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘গত কয়েকমাস আমি বেশ কয়েকটি বক্তৃতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ এবং এর পূর্বাপর ঘটনা এবং ইতিহাস বিকৃতির আড়ালে পড়ে থাকা কিছু কঠিন সত্য তুলে ধরেছি। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তির বিপরীতে কিছু ব্যক্তি লম্পঝম্প করেছে। কারণ তাদের কোনো যুক্তি নেই। আবার যুক্তি দিলেও শেখ হাসিনার কাছে মুক্তি নেই।’

তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের কোনো সত্য শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে গেলেই আওয়ামী লীগ এবং তাদের অনুগতরা তাকেই রাজাকার হিসাবে অপপ্রচার চালায়। তারা এরইমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ১১ জন সেক্টর কমান্ডারের কমপক্ষে ছয়জনকে রাজাকার অপবাদ দিয়ে ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘একটি বই লিখে মুক্তিযুদ্ধের উপ অধিনায়ক একে খন্দকার রাজাকার আর বেয়াই খন্দকার কিংবা নুরা খন্দকার নির্দোষ।’ তারেক রহমান বলেন, ‘ধীরে ধীরে ইতিহাসের সত্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। হুমকী ধামকি কিংবা র‌্যাবের বন্দুকের ভয় দেখিয়ে সত্য আড়াল করে রাখা যায় না।’

তারেক রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনার কথার খুব একটা গুরুত্ব জনগণের কাছে নেই। সবসময়ই কোনো ঘটনাকে নিয়ে বাচালতা করা তার স্বভাবসিদ্ধ। কিন্তু জনগণের ভয়টা অন্যখানে, তা হলো, বর্তমানে রাষ্ট্র ক্ষমতা এমন একজনের হাতে কুক্ষিগত হয়ে আছে যাকে ২০০০ সালে বাংলাদেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত ‘রং হেডেড’ বলেছিল, যিনি ‘হাবরিস সিনড্রমে’ আক্রান্ত কি না সেটি পরীক্ষার জন্যও বিভিন্নমহল থেকে দাবি উঠেছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ সরকারের দীর্ঘদিন ক্ষমতা আকড়ে থাকার পরিকল্পনা কল্পনায় পরিণত হতে আর খুব বেশি সময় নেই। দেশের জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। বিদেশের কাছে ধর্না দিয়েও অবৈধ সরকারের বৈধতার সার্টিফিকেট আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিএনপি প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের দূরাচার অনাচার আর গণতন্ত্রহীনতার কথা তুলে ধরছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাছে এটি আন্দোলন মনে হচ্ছে না। তাদের কাছে অন্দোলন মানে লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করা। আওয়ামী লীগ যে বিএনপির আন্দোলন টের পাচ্ছে না এটিও বিএনপির অন্দোলনেরই অংশ। যখন টের পাওয়া শুরু করবে তখন তাদের পালানোর পথ থাকবে না।’

সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, ‘যারা শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল ক্ষমতার লোভে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বহীন মিডিয়া নির্ভর সেইসব ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে শেখ হাসিনা এখন জিয়াউর রহমান ও তার পরিবার এবং বিএনপিকে তাদের অপপ্রচারের টার্গেট করেছে।’

তিনি বলেন, ‘অপপ্রচার চালিয়েও শেখ হাসিনা শিকাগোতে জিয়াউর রহমানের নামে সড়কের নামকরণ ঠেকাতে পারেননি। দেশে বিদেশে জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকৃত হচ্ছে। জিয়াউর রহমানের জীবন ও কর্মের স্বীকৃতির জন্য আদালতের রায়ের প্রয়োজন নেই।’

তারেক রহমান বলেন, ‘কোনো একটি সরকারের নৈতিক ও আইনগতভিত্তি দুর্বল হলে এবং জনমর্থন না থাকলেই সরকার আইনের দোহাই দিয়ে বেআইনীভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আসলে এই সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নেই, সরকারও জনগণের আস্থার তোয়াক্কা করছে না। তাদের একমাত্র ভরসা আইনশৃংখলাবাহিনীর পোশাকে তাদের কতিপয় দলীয় ক্যাডার। আর যুবলীগ ছাত্রলীগের নামে সরকারের দলীয় সন্ত্রাসীবাহিনী।’ তিনি সম্প্রচার আইনেরও তীব্র সমালোচনা করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘হুমকী ধামকী কিংবা হামলা মামলা করে সরকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। কথায় কথায় আইনের দোহাই দিয়ে বেআইনী কাজে লিপ্ত রয়েছে। রাজপথে সরকারের অগণতান্ত্রিক কাজের প্রতিবাদ করলে একদিকে তারা বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গুলীর ভয় দেখাচ্ছে অপরদিকে অহেতুক অভিযোগে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একটি অশুভ শক্তি। চোর, খুনী, বদমাশ, সন্ত্রাসী, ব্যাংক লুটেরা ও দুর্নীতিবাজরাই শেখ হাসিনার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। যিনি যত খারাপ কথা বলবেন, শেখ হাসিনার কাছে তিনি ততোই প্রিয়।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য আর নিরাপদ নন, তার কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়, গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, নিরাপদ নয় বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ।’

তারেক রহমান বলেন, ‘জাতিসংঘ যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়েছে হাসিনার এমন মিথ্যাচারেরও জবাব দিয়েছে দেশগুলো। এতে হাসিনা লজ্জা না পেলেও দেশের নাগরিকরা বিব্রত। হাসিনা এখন জঙ্গি জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন। এটি হাসিনার কূটকৌশল। তার বাবাও নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে জনগণকে বাকশালের ভয় দেখাতেন।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভায় আরো বক্তব্য দেন- বৃটেন সফরররত বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালেক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অ্যাসিসট্যান্ট প্রেস সেক্রেটারি মুশফিকুল ফজল আনসারীসহ অনেকে।

 

সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম কয়সর আহমেদ। সমাবেশে তারেক রহমানের হাতে সম্প্রতি শিকাগো সিটি প্রশাসনের স্থাপিত অনারারী জিয়াউর রহমান ওয়ের একটি নাম ফলক হস্তান্তর করা হয়। নামফলক হস্তান্তর করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনর সেক্রেটারি অব স্টেটের জেসিহোয়াইট কাউন্সিলের সদস্য ও জিয়াউর রহমান ওয়ের প্রস্তাবক শাহ মোজাম্মেল নান্টু।

সমাবেশে তারেক রহমান প্রায় একঘণ্টা ২০মিনিট বক্তব্য দেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!