DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে ইউরোপ যাত্রা এখন নিশ্চিত মৃত্যুফাঁদ

image-747971-panoV9free-dcxsদৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ  বাংলাদেশী অভিবাসীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য গ্রীস-তুরস্ক সীমান্ত ব্যবহার করছে বছরের পর বছর ধরে।

চার থেকে পাঁচ ঘন্টায় এজিয়ান সমুদ্র পারি দিয়ে তুরস্ক থেকে গ্রীসের উপকূলে পৌঁছত এই অভিবাসীরা। অবৈধ হওয়ায় এইভাবে গ্রীসে যাওয়া কখনই নিরাপদ ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই পথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা অনেকটা আত্মহত্যার সামিল হয়ে উঠেছে। অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ নীতির কারণে যে কোন মূল্যে গ্রীসে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে চায় গ্রীসের সরকার।

জল ও স্থল দুই পথেই তুরস্ক থেকে বুলগেরিয়া ও গ্রীসের মাধ্যমে ইউরোপে প্রবেশ করা যায়। বাংলাদেশ, আফগানিস্তানসহ অন্যান্য দেশের অভিবাসীরা এতদিন স্থলপথকেই ইউরোপে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করত। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপের কারণে স্থলসীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বুলগেরিয়া ও গ্রীস। ফলে, স্থলসীমান্ত দিয়ে গ্রীস কিংবা বুলগেরিয়া দিয়ে তুরস্কে প্রবেশ করা মোটামুটি বন্ধ হয়ে গেছে। একারণে, কেবল সমুদ্রপথেই তুরস্ক থেকে গ্রীসে যাওয়ার পথটি খোলা আছে।

কিন্তু এইভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত কতমানুষ মারা গেছে তার কোন হিসেব রাখে না ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইউরোপের সাংবাদিকদের হিসাব অনুসারে, গত ১৪ বছরে কমপক্ষে ২৩,০০০ মানুষ ইউরোপের সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে মারা গেছেন।

তুরস্ক-গ্রীস সীমান্ত দিয়ে ইউরোপে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে নির্মমতার কৌশল হাতে নিয়েছে গ্রীস সীমান্ত রক্ষীরা। যে নৌকাগুলো দিয়ে অভিবাসীরা সমুদ্র অতিক্রম করে গ্রীসে পৌঁছানর চেষ্টা করে সেগুলোর অবস্থা থাকে খুবই নাজুক। গ্রীসের সীমান্ত রক্ষীরা আরোহীদের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও নৌকাগুলোকে সমুদ্রের দিকে ফেরত পাঠায়। ফলে, আরোহীরা নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত তুরস্ক থেকে নৌপথে গ্রীস সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে প্রায় পঞ্চাশজন মানুষ মারা গেছেন সমুদ্রে ডুবে। নৌপথ ভয়ঙ্কর হলেও স্থলপথে ইউরোপের ভূখণ্ডে প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ২০১২ সালে ভোরোস নদীতে কাটা তারের বেড়া দিয়ে দেয় গ্রিক সরকার। কমপক্ষে ১,৮০০ জন অতিরিক্ত সীমান্ত প্রহরীও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গ্রীসের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেদেশের সরকার অভিবাসীদের অবৈধভাবে দেশটিতে আসা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।

গ্রীস ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্র এবং তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হতে চায়। একারণে তুরস্ক-গ্রীস সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে নানান চাপ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গ্রীসকে কমপক্ষে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থসহায়তা দিয়েছে সীমান্ত পাহারা শক্তিশালী করার জন্য। আবার তুরস্ক সরকারকে বাধ্য করছে, কোন অভিবাসী তুরস্ক হয়ে গ্রীসে প্রবেশ করলে তাদের ফিরিয়ে নিতে। সম্প্রতি সাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুসারে তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে কেউ ইউরোপে প্রবেশের পর গ্রেফতার হলে তাদের ফেরত নেবে সে দেশের সরকার।

ইউরোপে যাওয়ার জন্য তুরস্ক-গ্রীস সীমান্তের এই পথটি নিরাপদ না হলেও মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই এইভাবে ইউরোপে প্রবেশ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়, নাগরিকত্বও অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশীরা। কিন্তু সম্প্রতি তুরস্ক-গ্রীস সীমান্তে নতুন নজরদারি ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে। এর ফলে, অবৈধ ইউরোপগামীদের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে ওই সীমান্তটি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!