DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

পদ্মার অতলে পদ্মাসেতু দুর্নীতি তদন্ত!

padma-bridge (1)বহুল আলোচিত পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির মামলা দেড় বছর পার হয়ে গেলেও এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ তদন্ত কমিটি।

এখানে কানাডীয় প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহর ডায়েরি প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের পর দিন দুদক পার করছে রমেশের ডায়েরির কথা বলে। এভাবে দিনে দিনে এই দুর্নীতি তদন্ত পদ্মার গহীন জলে তলিয়ে যাচ্ছে কি না কে জানে!

এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ কে বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো কাজ করছি। তবে রমেশের ডায়েরি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ঘুষের পার্সেন্টেস লেখা ছিল। এ কারণে রমেশের ডায়েরির অনুলিপি ও বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করতে না পারলে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘কানাডার নিয়ম অনুযায়ী সে দেশের বিচারিক কাজ শেষ না হওয়া পযর্ন্ত নথি পাওয়ার তেমন কোনো সম্ভবনা নেই।’

অন্য দিকে দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘পদ্মাসেতু দুর্নীতির বিষয়ে যথেষ্ট রেফারেন্স রয়েছে দুদকের কাছে। আর এ কারণে রমেশের ডায়েরির অনুলিপি প্রয়োজন নেই।’

তাহলে কেন প্রতিবেদন দাখিল করা হচ্ছে না জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

উল্লেখ্য, কানাডার আদালত থেকে তথ্য পাওয়ার পর অনেকটা লুকোচুরি করে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করে দুদক। গত ১২ জুলাই আবুল হাসান চৌধুরীকে এবং পরদিন ১৩ জুলাই সৈয়দ আবুল হোসেনকে দুদকের বাইরে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সৈয়দ আবুল হোসেন ছয় পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্য দেন। তাতে তিনি আবারও পদ্মাসেতু প্রকল্পে ন্যূনতম দুর্নীতি বা দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়নি দাবি করেন।

তাদের চতুর্থবারের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপপরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা মির্জা জাহিদুল আলম। এছাড়াও ঢাকায় পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনায় এই পর্যন্ত যত জনের নাম এসেছে তাদের সবার বক্তব্য আবার নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নেয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটির বক্তব্য।

২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় (মামলা নং ১৯) মোট সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় আসামিরা হলেন- সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেইন ভূঁইয়া, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, কানাডীয় প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ এবং প্রাক্তন পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল।

তবে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও সৈয়দ আবুল হোসেন এবং আবুল হাসান চৌধুরীকে সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখা হয়েছিল।

এদিকে কানাডার অন্টারিওর সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতে আগামী বছরের ১৩ এপ্রিল পদ্মাসেতু দুর্নীতি ষড়যন্ত্র মামলার বিচার শুরু হবে বলে জানা গেছে।

কানাডার রয়্যাল অন্টারিও মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) দাবি, পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দিতে দুর্নীতির যে ষড়যন্ত্র হয়েছে তার যথেষ্ট প্রমাণ আরসিএমপির হাতে রয়েছে এবং তারা সেগুলো আদালতে উপস্থাপন করেছে।

উল্লেখ্য, ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশের পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দিতে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে রয়্যাল অন্টারিও মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) এসএনসি লাভালিনের সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ ইসমাইল, ভারতীয় বংশোদ্ভূত রমেশ শাহ, কেভিন ওয়ালেস ছাড়াও বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে আদালতের এখতিয়ার নিয়ে তোলা প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আবুল হাসান চৌধুরীকে মামলা থেকে আপাতত অব্যাহতি দেয়া হয়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!