DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

মালিবাগ রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা: খুলছে রহস্যের জট

IMG_20140801_183118-e1406898228973 দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ রাজধানীর মালিবাগে ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া প্রাইভেটকার ও তার আরোহীদের নিয়ে ঘনীভূত রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে।

প্রথমে জানা গিয়েছিল, দুর্ঘটনার পর আহত অবস্থায় গাড়ি থেকে দুই জন পালিয়ে গেছে, একজন হাসপাতালে। এখন জানা যাচ্ছে, আরোহী ছিলেন আসলে পাঁচ জন। তাদের পরিচয়ও পাওয়া যাচ্ছে।

দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনার দিন তারা বাড্ডার সাঁতারকুলে একটি জমি দখলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু র‌্যাব-পুলিশের তৎপরতায় তা ভেস্তে যায়। তারা সেখান থেকেই ফিরছিলেন। ওই গাড়িতে ভূমিদস্যুখ্যাত ও মগবাজার মোড়ের থ্রি স্টার রেস্টুরেন্টের মালিক শাওন, ইস্কাটনের মাহবুব, আনসার আলী ও জুয়েল ছিলেন।

দুর্ঘটনায় আনসার আলী গুরুতর আহত অবস্থায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তিনি এখন পুলিশের নজরবন্দি। ওই সময় নূরে আলম খানও গুরুতর আহত হন। তবে তিনি কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তা জানা যায়নি।

এদের মধ্যে মাহবুব ও জুয়েল বর্তমানে বিক্রমপুরে আত্মগোপনে আছেন বলে মগবাজারের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি আরও জানায়, নূরে আলম খান, শাওন, মাহবুব, আনসার আলী ও জুয়েল ভূমি দখল বাণিজ্যের ব্যবসা করেন। অস্ত্র আর প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে এ গ্রুপটি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জমি দখলের কাজ করে। জোরজবরদস্তি করে জমির মালিকের কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে ওই জমি অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। বিনিময়ে মালিককে কোনো টাকাই দেয় না। গ্রুপের অন্যতম সদস্য মাহবুব ইস্কাটনে কেএফসি রেস্টুরেন্টের বিপরীতে একটি বাড়ি দখলে নিয়ে নিজে সেখানে থাকছেন। শাওন মগবাজারের দিলু রোডে থাকেন। সম্প্রতি জাল দলিল তৈরি করে হাতিরঝিলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক নারীর বাড়ি বিক্রি করে দেন শাওন ও মাহবুব। পরে ওই ঘটনায় মামলা হলে তারা দুজন জেলও খেটেছেন।

দুর্ঘটনার শিকার প্রিমিও ব্র্যান্ডের সেই গাড়ির মালিক নূর হোসেনের শ্যালক নূরে আলম খান। তিনি নারায়ণগঞ্জ কাঁচপুরের খানবাড়িতে থাকেন। ঘটনার দিন বন্ধুদের সঙ্গে তিনিও গাড়িতে ছিলেন।

মালিবাগে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির একই মডেলের একটি গাড়ি শাওনের বাসায়ও রয়েছে। অতি সম্প্রতি একই শোরুম থেকে গাড়ি দুটি কেনা হয়েছে। দুটি গাড়িই রেজিস্ট্রেশন ছাড়া চালানো হচ্ছে। গাড়ি দুটি কিনতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা।

এ ব্যাপারে কমলাপুর রেলওয়ে থানার (জিআরপি) ওসি আবদুল মজিদ বলেন, ‘রহস্যের জট খুলতে চেষ্টা করছে পুলিশ। গাড়ির মালিক ও ঘটনার দিন গাড়িতে থাকা পাঁচ আরোহীর নাম শনাক্ত করা গেছে। অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত ওই গাড়ির একজন আরোহী আনসার আলীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তিনি সুস্থ হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাকিদের সন্ধানে কাজ করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেল ৫টায় মালিবাগে সিগন্যাল অমান্য করে কালো রঙয়ের একটি প্রিমিও ব্র্যান্ডের প্রাইভেটকার (ঢাকা-৪৬২/ও) রেলক্রসিংয়ে উঠে যায়। এসময় ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দিলে গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে যায়। কিন্তু প্রাইভেটকারের ভেতরে থাকা পাঁচজন আরোহী প্রাণে বেঁচে যান। তবে তিন আরোহী গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার পর থেকে পাঁচজনই ঘটনাস্থল থেকে রহস্যজনকভাবে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি কমলাপুরের রেলওয়ে থানায় নিয়ে যায়। রাতেই ওই গাড়ির ভেতরে থাকা একটি শপিং ব্যাগ থেকে বিদেশি পিস্তলসহ ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, অস্ত্রটি নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের নামে লাইসেন্স করা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!