DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

দির্ঘ মেয়াদী একদলীয় শাসনের পথে দেশঃ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ধারে কাছেও নাই আওয়ামী লীগ সরকার

a.lig_20640-300x224ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একটি দির্ঘ মেয়াদী একদলীয় শাসনের বোঝায় পিষ্ট হতে চলেছে বাংলাদেশ।৫ই জানুয়ারীর ভোটার বিহীন ,পাতানো  নির্বাচনে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ জনমতের কোন তোয়াক্কা করবে না এটাই তো স্বাভাবিক।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেসকল অঙ্গীকার করেছিল আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ এখন তার উল্টোপথেই চলছে। নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার, তিস্তাচুক্তি, ভারতের সাথে সমুদ্রসীমার রায়ে বিজয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ আরও নানান প্রতিশ্রুত ইস্যুতে সফলতার বিপরীত পথে হাঁটছে সরকার।

 

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগের ওপর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের চাপ আছে। আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারেও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর বদলে গেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থাকলেও আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের আগে এই ইস্যু নিয়ে কথা বলতে নারাজ আওয়ামী লীগ। ফলে, ক্ষমতাসীন দলের দেওয়া নির্বাচনী এই অঙ্গীকারটি আগামী পাঁচ বছরের জন্য জমা রাখা হয়েছে হিমাগারে।



ভারতের সাথে বাংলাদেশের অতিগুরুত্বপূর্ণ বিবাদমান ইস্যুগুলোর কোন ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছতে পারেনি সরকার। সমালোচনা করা হয় যে, ভারতের সমুদ্রসীমার রায়ে বঙ্গোপসাগরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হারিয়েছে বাংলাদেশ,যা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। তিস্তাচুক্তি স্বাক্ষরেও ভারতের কালক্ষেপণের চক্র থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ।

এছাড়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্রে জড়িতদেরও বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। কিন্তু কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় বাস্তবায়ন ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কোন অগ্রগতি হয়নি। গোলাম আযম, দেলোয়ার হুসেইন সাঈদীসহ প্রথমসারির অভিযুক্তদের মামলার রায়গুলো অপেক্ষমান রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বিদেশী প্রবাসী ফাঁসির দণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামীকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও সরকারের নাই উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ। ঢিলেগতির প্রসিকিউশন আর আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়েও জনমনে সন্দেহ তৈরী হয়েছে। এছাড়া রায় নিয়ে গড়িমসি ও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের কার্যক্রমকে অনেকে এই মুহূর্তে জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের গোপন আঁতাতের ফল হিসেবেই দেখছেন।

ক্ষমতাসীন দলের ঘোষিত ইশতেহারে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় যমুনা ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শুরু করার কথা ছিল। সরকারের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও দ্বিতীয় পদ্মা বা যমুনা সেতুর কাজ শুরু করবে তো দূরের কথা এক পদ্মা সেতুর কাজই ভালোভাবে শুরু করতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার। সময়মতো পদ্মাসেতুর কার্যক্রম শুরু ও তার বাস্তবায়ন নিয়েও সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। কেননা, পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দেওয়া হয়েছে বিতর্কিত চীনা কোম্পানিকে। এই চীনা কোম্পানিগুলোর কয়েকটি আবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার-লেনে উন্নীত করার প্রকল্পেও দায়িত্বপ্রাপ্ত। কিন্তু যথাসময়ে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ ওই চীনা কোম্পানিগুলো। ফলে একই পরিণতি গ্রহণ করতে পারে পদ্মাসেতু প্রকল্প।

এছাড়া ক্ষমতায় এলে ফোর-জি চালু, দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা-দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়ান, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার অঙ্গীকার করেছিল আওয়ামী লীগ। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতি দমন কমিশন আগের চাইতেও তুলনামূলকভাবে প্রকাশ্যে সরকারের পক্ষ সমর্থনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন প্রকাশ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।

 

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা, সাত খুনের সাথে সরকারের একজন মন্ত্রীর আত্মীয়ের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ, নূর হোসেনের কলকাতায় পালিয়ে যাওয়া, নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত না আনার লক্ষণগুলো থেকেও আওয়ামী লীগের আরেকটি ব্যর্থতার ঈঙ্গিত বহন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে র‍্যাব বা পুলিশের কার্যক্রম জনগণকে বিষিয়ে তুলেছে।বিশেষ করে র‍্যাবের ভয়াবহ কার্যক্রম আমাদের ইরানের কুখ্যাত শাহ এর আমলের গুপ্ত পুলিশের নির্যাতনের  কথাই  মনে করিয়ে দেয়।এক্ষনে সর্বসাধারনের আস্থা অর্জন করতে অবিলম্বে র‍্যাব বিলুপ্ত করা ছাড়া আর কোন বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করিনা।

 

অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, ঘরে ঘরে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, শ্রমিক ও প্রবাসী কল্যাণে কাজ করার যে প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছিল তা রক্ষার আয়োজনও অত্যন্ত সীমিত। আওয়ামী লীগের শাসন আমলের গত মেয়াদ থেকে ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। ফলে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রমাগত চলে গেছে সাধারণ মানুষের হাতের বাইরে।

গত অর্থ বছরেও, ২০১২-১৩ অর্থ বছরের তুলনায় মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে .৫০ ভাগ। শ্রমিক ও প্রবাসী কল্যাণের মতো ইস্যুতেও সরকারের বিশেষ কোন ইতিবাচক ভূমিকা চোখে পড়েনি। আর তাই, ইরাকে আটকে পড়া বাংলাদেশী শ্রমিকদের দেশে ফেরত আনার মতো পরিস্থিতিতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি সরকার।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!