DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

শিক্ষা মন্ত্রীর অকার্যকর আস্ফালনঃ তবে কি প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র ধরা ছোয়ার বাইরেই রয়ে যাবে?

শিক্ষামন্ত্রী-নুরুল-ইসলাম-নাহিদ1-300x174দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ  প্রশ্নপত্র ফাঁসের সত্যতা স্বীকার করলেও বিষয়টি নিয়ে অতিমাত্রায় রহস্য সৃষ্টি করছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ২ই জুলাই প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে, মন্ত্রী এমন পরিবেশ সৃষ্টি করলেন, তাতে যে কারোরেই মনে হতে পারে, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব কাজ।

অনেক চেষ্টার পর সরকারের তদন্ত কমিটি ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের নমুনা সংগ্রহ করতে পেরেছে মাত্র কিন্তু ফাঁসের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি। এছাড়া, মন্ত্রী ফাঁসকারীদের শাস্তি দেবেন ঠিকই কিন্তু ধরবেন কিভাবে? কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সকল সংস্থাগুলোর ভূমিকা বিবেচনায় আনলেই চোখে পড়ে ভিন্ন বাস্তবতা। এমনকি সন্দেহ করার কারণ আছে, শিক্ষামন্ত্রী নিজেও ফাঁসকারী চক্রের চক্রান্তের শিকার হয়ে থাকতে পারেন।

এক সপ্তাহ আগেই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, গত পাঁচ বছরে কোন ধরণের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। অবশেষে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করার পর প্রশ্ন উঠছে, তিনি কেন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন? তাহলে কি প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রটিকে আড়াল করতে ব্যস্ত কোন মহলের প্রভাব বলয়ের মধ্যেই আছেন শিক্ষামন্ত্রী?

শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এই সময়গুলো সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর নিরবতার সুযোগ নিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াটা মহামারির আকার ধারণ করেছে।

সর্বশেষ পিএসসি পরীক্ষার সময় প্রকাশ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কোন সাড়া শব্দ করেনি। এমন বাস্তবতা সত্ত্বেও প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে, এর পেছনের সরকারি সংস্থা সংশ্লিষ্টদের দায়-দায়িত্বের বিষয়গুলো উঠে আসেনি। একারণেই প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে নুরুল ইসলাম নাহিদের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ‘ঘরে শত্রু রেখে ফাঁক-ফোঁকড় বন্ধের উদ্যোগে পরিণত হতে পারে।

এতে করে শত্রুকে না চিনেই ঢাল-তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে। ফলে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্র অক্ষতই থেকে যাওয়ার আশঙ্কাসহ লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে শিক্ষামন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুসারে, লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকেই নিতে হবে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রতিরোধের ভার। শিক্ষামন্ত্রী পরিকল্পনা করছেন, দেড় মাস-দুই মাস ধরে আর কোনও পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এতে প্রশ্নের নিরাপত্তা বিধান করা কঠিন হয়ে পড়ে। এখন থেকে দিনে দুটি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষাবিদদের মতামত নেওয়া হবে। কোনও রকম সরকারি ছুটি ছাড়া পরীক্ষার মাঝে আর কোনও বিরতি থাকবে না।

এছাড়া, পরীক্ষার দিন সকালে লটারির মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ, বেশিসংখ্যক সেটের প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ মূল চারটি সুপারিশ করেছে কমিটি। এছাড়া কিছু সাধারণ সুপারিশও করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ, ব্যবস্থাপক, প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে কথা বলে সুপারিশগুলো করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ইন্টারনেটনির্ভর।

স্পষ্টতঃ এই উদ্যোগগুলোর কয়েকটির বাস্তবায়ন নিয়ে উঠবে চরম প্রতিবাদ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কোন রকমের বন্ধ ছাড়াই টানা পরীক্ষা নিয়ে ফেলা। অন্যান্য উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন হওয়া না হওয়াতে প্রশ্নপত্র ফাঁস কতটা প্রতিহত করা যাবে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর সামগ্রিক উদ্যোগে অপরাধী সনাক্তকরণের বিষয়টি থেকে যাচ্ছে গুরুত্বহীন। ফলে, আপাত রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে ফাঁসকারী অপরাধী চক্র। একারণে, আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে যে, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের কবলেই থেকে যেতে পারে বাংলাদেশের শিক্ষাখাত।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!