ক্রিমিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষান্ত হবেন না, তিনি আরও দেশ জয় করতে চান বলে জানিয়েছেন তার সাবেক এক উপদেষ্টা। পুতিনের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ইন্দ্রেজ ইলারিওনোভের বরাত দিয়ে রবিবার ব্রিটেনের ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ পত্রিকা এ কথা জানায়।
এতে বলা হয়, ইউক্রেনের ক্রিমিয়ার পর পুতিন বেলারুশ, বাল্টিক স্টেইটস (লিথুনিয়া, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া) ও ফিনল্যান্ডকে রাশিয়ান ফেডারেশনে ফিরিয়ে আনতে চান। এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে রবিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বৈঠক কোনো ধরনের ফল ছাড়াই শেষ হয়েছে। অন্যদিকে সদ্য ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে রাশিয়ায় যোগ দেয়া প্রজাতন্ত্র ক্রিমিয়া সফরে গেছেন রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ।
গণভোটের মধ্যদিয়ে রুশ ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ক্রিমিয়ায় সফরকারী সর্বোচ্চ রুশ কর্মকর্তা হলেন মেদভেদেভ। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপির। ইন্দ্রেজ ইলারিওনোভ বলেন, ক্রিমিয়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করে পশ্চিমা বিশ্বকে উদ্বিগ্ন করে তোলা পুতিন আরও দেশ জয় না করে থামবেন না।
রুশ জার সাম্রাজ্যের সর্বশেষ শাসক দ্বিতীয় নিকোলাস ও স্তালিনের শাসনাধীন সোভিয়েত ইউনিয়নভূক্ত এলাকাগুলো উদ্ধার করে ‘ঐতিহাসিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করতে চান পুতিন। ইলারিওনোভ ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পুতিনের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। সমপ্রতি একটি সুইডিশ পত্রিকা ‘স্যানেস্কা ডগব্লডাট’কে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি পুতিনের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যুক্তি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, রাশিয়া মনে করে ১৯১৭ সালে ফিনল্যান্ডকে স্বাধীনতা মঞ্জুর করাটা ছিল ‘জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে প্রতারণা। আর পুতিনের মতে, তিনি তার ও তার পূর্বসূরিদের জিনিসই তিনি রক্ষা করছেন। জর্জিয়ার কিছু অংশ, ইউক্রেন, বেলারুশ, বাল্টিক স্টেটস এবং ফিনল্যান্ডকে রুশ ফেডারেশনের অধীন পাওয়ার চেষ্টায় আছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
সুইডিশ ওই দৈনিককে ইলারিওনাভ আরও বলেন, পশ্চিমা নেতাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়, অপর একটি দেশ জয় করতে চাওয়ার মতো নেতাও যে বিশ্বে রয়েছেন তারা তা বেমালুম ভুলে বসে আছেন। ফিনল্যান্ড ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশ না হওয়ায় সেখানে রাশিয়া হামলা চালালে শক্তিধর এই সামরিক জোটের কিছুই করার থাকবে না।
ফিনল্যান্ডও সমপ্রতি বাল্টিক সাগর অঞ্চলে তাদের তত্পরতা বাড়িয়েছে। ১০৮ বছর ধরে রুশ সাম্রাজ্যের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ছিল স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা। পুতিন সেখানেও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন কি না জানতে চাওয়া হলে ইলারিওনাভ বলেন, তিনি এমন কিছু ভাবছেন না। তবে পুতিনকে থামাতে না পারলে বিষয়গুলো যে কোনো সময় সামনে আসবেই। পুতিন বারবারই বলেছেন, বলশেভিক ও কম্যুনিস্ট নেতারা বড় ধরনের ভুল করেছেন।
ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন এবং ক্রিমিয়াকে মস্কোর অধীনে আনার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়া রাশিয়ার শীর্ষ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, অবরোধ পুতিনকে কোণঠাসা করার পরিবর্তে তার জন্য আরও সহায়ক হয়েছে। কারণ এতে করে বিশ্ব সম্পর্কে পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ক্রেমলিনের প্রচার-প্রচারণা সুদৃঢ় ও বেগবান হয়েছে।
এদিকে প্যারিসে রবিবারের বৈঠকে ইউক্রেন সঙ্কট নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মস্কোকে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে তাদের সৈন্য প্রতাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তারা সেখানে ‘ভীতিকর পরিবেশ’ সৃষ্টি করছে। তবে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
প্যারিসে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূূতের বাসভবনে কেরি ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠকে ‘খোলাখুলি’ ও ‘গঠনমূলক’ আলোচনা হয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে অনেকটা আকস্মিকভাবে ফোন করেন। এরপর স্নায়ুযুদ্ধোত্তর সময়ে ইউক্রেন নিয়ে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য অচলাবস্থা দূর করতে কেরি-ল্যাভরভের মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষ বলেছে, তারা ইউক্রেনের ব্যাপারে একটি কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে আগ্রহী।
অন্যদিকে গণভোটের মধ্যদিয়ে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়া ক্রিমিয়া সফরে গেছেন রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ। এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু গত সপ্তাহে ক্রিমিয়া সফর করেন। ওই সফরে তিনি প্রজাতন্ত্রটিতে মোতায়েন রুশ সেনাবাহিনী ও সামরিক স্থাপনা পরিদর্শন করেন।
রুশ মন্ত্রীদের একটি প্রতনিধি দল নিয়ে মেদভেদেভ সোমবার ক্রিমিয়ার প্রধান শহর সিমফেরোপোলে পৌঁছান। সেখানে এ উপদ্বীপের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির ব্যাপারে একটি বৈঠকে রুশ প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্ব দেয়ার কথা। ক্রিমিয়ায় পৌঁছার পর মেদভেদেভ এক টুইটার বার্তায় লেখেন, আমি এখন সিমফেরোপোলে রয়েছি।