DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

মহানবীকে(সা.)নিয়ে বিজেপি নেতাদের চরম আপত্তিকর মন্তব্য,সারা মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ,বাংলাদেশ নিশ্চুপ!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)’র মুখপাত্রের চরম আপত্তিকর মন্তব্যে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে দেশে দেশে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের পাশাপাশি ভারতের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সুপার মার্কেট গুলো থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।

তবে এই ঘটনায় বিশ্বের অন্যতম প্রধান মুসলিম দেশ বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত নিশ্চুপ রয়েছে কেন তা নিয়ে দেশের মুসলিম জনগনের মনে ব্যপক প্রশ্ন রয়েছে।

জানা যায়, বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন বিতর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর (সা.) স্ত্রী হজরত আয়েশাকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। নূপুর শর্মার সহকর্মী জিন্দাল মহানবী (সা.) কে নিয়ে আপত্তিকর একটি টুইট করেন। এরপরই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মাঝে।

কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতাদের হিংসাত্মক বক্তব্যের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সাধারণ মানুষ ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে ঘটনা তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে আরব বিশ্বে। ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয় ভারতীয় দূতকে প্রত্যাহার এবং ইন্ডিয়ান পণ্য বয়কটের।

ভারতের ভেতরেও মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটছে। ভারতের কানপুরের মুসলিম সমাজ শুক্রবার ধর্মঘটের ডাক দেন। জুমার পর বিক্ষোভে পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলা চালায় হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিরা। এসময় মুসলিম বিক্ষোভকারীদের বেদম প্রহার ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ২০ জনকে। হিন্দুত্ববাদী পুলিশের পক্ষ থেকে হাজার হাজার অজ্ঞাত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

সৌদি আরব বলেছে, বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার বক্তব্য ‘অবমাননাকর’।
ইসলামবিদ্বেষী মোদী ও তার দলের নেতাদের প্রতি “বিশ্বাস ও ধর্মের প্রতি সম্মান” জানানোরও আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে কাতার, কুয়েত ও ইরান। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

মহানবী (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিবাদলিপি হস্তান্তর করেছে।

মহানবীকে (সা) নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা ও সরকারিভাবে এর নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে কাতার।

কাতার সহ অন্যান্য মুসলিম দেশের ধমকের পরই ইসলামবিদ্বেষী দুই মূর্তিপূজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করলো মোদীর বিজেপি।

এদিকে, প্রিয়নবীর (সা.) অবমাননার বিরুদ্ধে বিশ্বের সব বড় বড় স্কলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে নিজ নিজ দেশ থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার এবং ইন্ডিয়ান পণ্য বয়কটের ডাক দিচ্ছেন।

এ সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম শায়খ মুহাম্মদ হাসান আদ-দাদো, জনপ্রিয় দাঈ ও বক্তা শায়খ মাহমুদ হাসানাতসহ অনেক আলেম অনবরত লিখে যাচ্ছেন: “প্রিয়নবীর মর্যাদা রক্ষার চেয়ে আমাদের জীবনে বড় কোনো ইস্যু নেই”।

ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি, মিসর এবং লিবিয়ার রাষ্ট্রীয় ফতোয়া বোর্ড অফিসিয়ালি ফতোয়া জারি করেছেন পণ্য বর্জনের মাধ্যমে নবীজি (সা.) এর পাশে দাঁড়ানো এসময় পুরো উম্মাহর ওপর ফরজ। হারামাইন শরীফাইনের প্রধান শায়খ ড. আব্দুর রহমান সুদাইস কঠোর ভাষায় এর নিন্দা জানিয়েছেন।

পণ্য বর্জন ও মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশের ধমকের পর দলের হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন কুমার জিন্দালকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

কাতার এমন সময় মহানবী (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের এই নিন্দা জানিয়েছে, যখন বাণিজ্য বাড়াতে ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে সম্পদশালী আরব উপসাগরীয় দেশটিতে সফরে রয়েছেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু।

ভারত বলেছে, ভিন্নমত পোষণকারী কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এমন মন্তব্য করেছে। তাদের মন্তব্য সরকারের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না। ক্ষমতাসীন বিজেপি এই দুই নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলেও সরকার জানিয়েছে।

এদিকে গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে বিজেপি বলেছে, কোনো সম্প্রদায় বা ধর্মের মর্যাদাহানি করেন এমন যেকোনো মতাদর্শের বিরুদ্ধে বিজেপির শক্ত অবস্থান। বিজেপি এ ধরনের ব্যক্তি ও দর্শনকে উৎসাহিত করে না।

তবে বিজেপির বিবৃতি নাকচ করে দিয়ে ভারতীয় কংগ্রেস বলেছে, এটি ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছুই নয়। এটি সুস্পষ্টভাবে প্রহসন এবং পরিস্থিতি সামলানোর আরেকটি নির্লজ্জ প্রচেষ্টা।

টুইটারে একটি পোস্ট ট্যাগ করে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর লেখেন, ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের অবমাননাকর বক্তব্যের পরে সৌদি আরব, বাহরাইনসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর সুপারমার্কেট থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
এদিকে দল থেকে বহিষ্কারের পর নূপুর শর্মা তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। টুইটটি মুছে দিয়েছেন তাঁর সহযোগী জিন্দাল।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!