DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

মুনিয়া হত্যা মামলা থেকে বসুন্ধরা এমডি আনভীর সোবহানকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চাঞ্চল্যকর মোসারাত জাহান মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে পূর্ন অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।

একই সঙ্গে যৌক্তিক কোনো কারণ না থাকায় খারিজ করা হয়েছে মুনিয়ার বড় বোন বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার করা পুলিশ প্রতিবেদনের ওপর দেওয়া নারাজির আবেদন।

গতকাল (বুধবার) ঢাকা মহানগর  হাকিম রাজেশ চৌধুরী এই আদেশ দেন। এর আগে মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ওসি আবুল হোসেনের দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বাদী পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত পরবর্তীতে আদেশের জন্য রেখে দেয়।

সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতের দেওয়া আদেশের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তুহিন হাওলাদার বলেন, ‘সায়েম সোবহান আনভীর দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এবং শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। দেশে-বিদেশে তাঁর ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। তাঁর সুনাম ক্ষুণœ করা ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবসায়িক ক্ষতিসাধনের হীনউদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ দীর্ঘ তিন মাসের তদন্তে আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়নি। পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণ ও আদালতের আদেশে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে এই চক্রান্তে বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল রাষ্ট্রবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তিশালী চক্র। যারা দেশের গণতন্ত্র চায় না, উন্নয়ন চায় না তারা এসব চক্রান্তে শামিল হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা নানাবিধ কুৎসা ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। বাদী নুসরাতও সরাসরি এসব টকশো ও অনলাইন সভায় যোগ দিয়ে নানা অপপ্রচার করেন। গতকাল (বুধবার) আদালতের আদেশে বসুন্ধরার এমডি অব্যাহতি পাওয়ার মধ্য দিয়ে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ 

আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ‘মামলার তদন্তে আসামির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করে গুলশান থানা পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এই প্রতিবেদন দীর্ঘ পর্যালোচনা করে গ্রহণ করা হলো। একইসঙ্গে যৌক্তিক কারণ না থাকায় বাদিনীর নারাজির আবেদন খারিজ করা হলো। আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’

জানা গেছে, মামলার বাদী অভিযোগের পক্ষে কোনো দালিলিক, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, মৌখিক বা আইনানুগ সাক্ষ্য বা ঘটনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৯ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেন। পুলিশ প্রতিবেদনে মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলার অভিযোগ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এরপর আদালত এই প্রতিবেদনের ওপর গত ২৯ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করে। একই সঙ্গে মামলার বাদীকেও ধার্য তারিখে আদালতে হাজির থাকার নোটিস পাঠানো হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে লকডাউনজনিত কারণে ওইদিন আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয় ১৭ আগস্ট মঙ্গলবার। নির্ধারিত দিনে মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার পক্ষে আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন দাখিল করেন। বাদিনী নারাজির পক্ষে আদালতে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আদালত বাদীর বক্তব্য মনোযোগসহকারে শোনার পর নথি পর্যালোচনা করে পুলিশের দাখিল করা প্রতিবেদন গ্রহণ করে।

আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা বলেন, ‘এই আদেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো, মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য যাকে আসামি করা হয়েছে তিনি আদতেই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। আত্মহত্যার প্ররোচনার কোনো ঘটনা এখানে ঘটেনি।’

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হোসেন নিজেই মামলাটির তদন্ত করেন। দীর্ঘ তিন মাস তদন্ত করে পুলিশ বাদীর অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে বলা হয়, এই আত্মহত্যা প্ররোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট আসামির কোনো দায় পাওয়া যায়নি।

আদালতে পুলিশের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, মামলাটি তদন্তকালে সংগৃহীত প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ঘটনাস্থল ফ্ল্যাট মালিকসহ অন্য সাক্ষীদের জবানবন্দি নেন। এমনকি তদন্ত কর্মকর্তা মুনিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ডে গিয়েও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এসব তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমের যাপিত জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলিও সংগ্রহ করেন। সার্বিক তদন্তে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলার বাদিনী কর্তৃক ভিকটিমের আত্মহত্যার সহায়তা বা প্ররোচনার অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণ পাননি তদন্ত কর্মকর্তা। এমনকি বাদিনী নিজেও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। গোটা তদন্ত কার্যক্রম তদারকি করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর মহানগর হাকিম আদালতও সময় নিয়ে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করেন। এরপর আসামিকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি বাড়ি থেকে কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার উজিরদিঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  তিনি তড়িঘড়ি করে ‘আত্মহত্যার প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!