DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

হাসিনা সরকার ও বর্তমান ইসির অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  স্থানীয় সরকারের পর এবার বিএনপি জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ফলে ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য লক্ষ্মীপুর-২ উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না দলটি।

শুধু লক্ষ্মীপুর নয়, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে আর কোনো নির্বাচনেই অংশ না-নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে-এমন নিশ্চয়তা বা পরিবেশ সৃষ্টি না-হওয়া পর্যন্ত তারা আর ভোটে যাবে না। এ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেয়ে দুটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা।

এ লক্ষ্যে সরকারের বাইরে থাকা সব দলকে নিয়ে গড়ে তোলা হবে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্রুত আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আরও জানা গেছে, শনিবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়াসহ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে উপস্থিত বেশিরভাগ নেতাই উপনির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দেন।

এক নেতা বলেন, বিএনপি স্থানীয় সরকারের (পৌরসভা) সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তাই নির্বাচন বর্জন করলে সুশীল সমাজ বা বাইরের কোনো শক্তি এ নিয়ে তাদের দোষারোপ করতে পারবে না। কারণ, সারা দেশে নির্বাচনের নামে যে তামাশা হচ্ছে তা প্রমাণিত। বিগত দিনে সব নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের সামনে বিএনপি স্পষ্ট করেছে যে, এই সরকারের অধীন নির্বাচনে গেলে কী হতে পারে।

এখন মানুষই প্রশ্ন তুলছে-কেন আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। তাই এ সরকার ও ইসির অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ না-নেওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান ওই নেতা।

তার এমন যুক্তির পক্ষে প্রায় সবাই একমত পোষণ করেন। সবার মতের ভিত্তিতে আসন্ন লক্ষ্মীপুর-২-সহ এ সরকারের আমলে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে অংশ না-নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। কয়েকদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। নির্বাচন বর্জন করার পর দলের করণীয় কী হবে, তা নিয়ে নেতাদের মত নেওয়া হয়। প্রায় সবাই আন্দোলনের পক্ষে মত দেন।

আন্দোলনের ইস্যু কী হবে, তা নিয়েও নেতারা অভিমত ব্যক্ত করেন। একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনের আমূল সংস্কার এবং বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তনকে সামনে রেখে জনমত তৈরি করতে হবে। কারণ, বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের আমূল সংস্কার না করে নির্বাচনে গেলে ফলাফল বিগত দিনের মতোই হবে।

তাই এ দুটি বিষয় সামনে রেখেই আমাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এক নেতা বলেন, এ নিয়ে আমরা অতীতেও আন্দোলন করেছি; কিন্তু দাবি আদায় না-করেই আমরা সরকারের সঙ্গে সংলাপ করে বিগত নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।

তাই এবার আন্দোলনের আগে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সরকার যদি আলোচনায় বসে, তাহলে আমরা কোন কোন জায়গায় ছাড় দেব। তা ছাড়া এ দাবি শুধু আমাদের একার নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সবার। সবাই চাচ্ছে, এ দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

বর্তমান সরকারের অধীন তা সম্ভব নয় বলে সবাই মনে করছে। আমাদের বাইরে থাকা দল ও সুশীল সমাজকে এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম করতে হবে। প্রয়োজনে এ ইস্যুতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এ কারণে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো বর্জন করতে বাধ্য হয়েছে।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  বলেন, দেশে নির্বাচনি সিস্টেমটা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থা পরিবর্তন না হলে শুধু বিএনপি নয়, জনগণও ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে না।

তাই এ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেয়ে নির্বাচনি ব্যবস্থার পরিবর্তনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই।

তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আমরা নির্বাচনে যাব না, তা কখনোই বলছি না। যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হয় এবং জনগণ যদি তা বিশ্বাস করে, তবে আমরা অবশ্যই নির্বাচনে যাব। সেটা যদি আজ হয়, তাহলে আজই আমরা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেব। কারণ, জনগণের প্রতি আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি।

কারণ, এদেশে নির্বাচন বলতে কিছু নেই। সরকারি দল নির্বাচনকে টেন্ডারের মতো বানিয়ে ফেলছে। কেউ নৌকার টেন্ডার পেলেই তিনি নির্বাচিত। গত ১০ বছরে স্থানীয় সরকারের প্রায় সব নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। সম্প্রতি শেষ হওয়া পৌরসভা নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে।

কিন্তু আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও বাকি পৌর ও উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচনসহ বাকি ভোটও বর্জনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!