DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

রক্তচাপ কমে গিয়ে লেখক মুশতাকের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছেঃস্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত রিপোর্ট

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার লেখক মুশতাক আহমেদের শরীরের রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়েছিল।  এতে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এ কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। তার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর তার মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, কারাগারে লেখক মুশতাকের দুজন রুমমেট জানিয়েছেন, তিনি ঘন ঘন ধূমপান করতেন।

এসব বিষয়সহ ৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব শহিদুজ্জামানের কাছে বুধবার জমা দেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব তরুণ কান্তি শিকদার। এতে কারাগারে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী বাড়ানোসহ বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।

লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তরুণ কান্তি শিকদারকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে তুলে দেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব।

এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গাজীপুরের জেলা প্রশাসন ও কারা অধিদপ্তরের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে ‘ন্যাচারাল ডেথ’ (স্বাভাবিক মৃত্যু) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে চূড়ান্তভাবে জানা যাবে।’

জানা গেছে, কারাগারে মৃত্যুর আগে লেখক মুশতাকের শরীরের রক্তচাপ ৪৫-এর নিচে নেমে গিয়েছিল। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে তদন্ত প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো- ক. দেশের কারাগারগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া। খ. ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য উপকরণগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা। গ. কারাগারের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও প্রয়োজনীয়সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স দেয়া। ঘ. মহিলা কারাগারে মহিলা ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া এবং ঙ. কারাগারের জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। এসব কারাগারে ৭-৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব স্টাফ।

এর বাইরে বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনসহ কমবেশি ১০৭ ডাক্তার কারাগারগুলোতে সংযুক্ত রয়েছেন। তাদের দিয়েই চলছে কারাবন্দিদের চিকিৎসা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে মেডিকেল ইউনিট গঠন প্রক্রিয়াধীন।

এ মেডিকেল ইউনিট যাত্রা শুরু করলে এর অধীনে পিএসসির মাধ্যমে এসব কারাগারে চিকিৎসক, প্রয়োজনীয় নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে।

২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যু নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে। বিভিন্ন সংগঠন ঘটনা তদন্তের দাবি জানায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ‘প্রয়োজনে’ তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

শনিবার তদন্ত কমিটি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তরুণ কান্তি শিকদারকে প্রধান করে কমিটি গঠিত হয়।

এর অন্য সদস্যরা হলেন, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম, ময়মনসিংহের কারা উপমহাপরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির ও গাজীপুর জেলা কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. কামরুন নাহার। সদস্য সচিব করা হয় সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব আরিফ আহমদকে। এদের ৪ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। এছাড়া গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও কারা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন হয়। সব কমিটিই ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!