DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ক্ষমতায় গিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত নীতিগুলো পরিবর্তন করবেন জো বাইডেন।

ক্যা12313345117প্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  এবারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল নজিরবিহীন। গত কয়েক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারী মধ্যে অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই নির্বাচন। আর নির্বাচনের আগে ও বিজয়ের পর থেকে আলোচনায় আসছে বাইডেন নির্বাচিত হলে কোন কাজটিকে আগে গুরুত্ব দিবেন। করবেনই বা কি কি কাজ, এসব বিষয়।

 

 যুক্তরাষ্ট্রের নতন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথে জো বাইডেন দ্রুত একাধিক কার্যনির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পরপরেই তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব আদেশে স্বাক্ষর করবেন।

নির্বাচিত হওয়ার আগে বিভিন্ন প্রচারণায় যোগ দিয়ে বাইডেন জানিয়েছিলেন, দেশের রাজনীতি বদলে গেছে এবং তিনি প্রেসিডেন্ট হলে অগ্রাধিকার ভিত্তি বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে দেশ পরিচালনা করবেন।

 

ট্রাম্প পৃথিবীকে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করা ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তির’ মতো আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ট্রাম্প। বিভিন্ন প্রচারণায় ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের কাছে জো বাইডেন বলেছেন, ভোটে জয়ী হলে তিনি পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আওতায় আনবেন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ত্যাগ করছে। বাইডেন শপথ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আবার যোগ দিবেন। সেই সঙ্গে ডব্লিউএইচও পুর্নর্গঠন সহযোগিতা করবেন।

এছাড়াও কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের উপর যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে-তা প্রত্যাহার করে নিবেন বাইডেন ।

সাবেক এ ভাইস প্রেসিডেন্ট ‘স্বপ্নদর্শীদের’ নাগরিকত্বের কর্মসূচি অর্থাৎ যেসব শিশুকে অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়েছিল, তাদের দেশে থাকার অনুমতি দিয়ে এই কর্মসূচি আবার চালু করবেন।

ক্ষমতা পরিবর্তনের সাথে সাথে ট্রাম্পের অনেক সিদ্ধান্তও বাইডেন পরিবর্তন করবেন। ট্রাম্পের নেওয়া সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যে প্রতিশ্রুতি বাইডেন দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে পারলে তা আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে চমকপ্রদ হবে।

এদিকে তার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে মাসব্যাপী কাজ করার জন্য বাইডেনের শীর্ষ উপদেষ্টারা কয়েকশ 'ট্রান্সফার অফিসার’কে বিভিন্ন ফেডারেল এজেন্সিতে কাজ করার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। তার এজেন্ডা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তার জন্য নীরবে কাজ করছেন তারা।

বাইডেন প্রচারে তার দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রাথমিক সিদ্ধান্তগুলিকে একটি বইয়ে একত্রিত করেছেন।

মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য বাইডেন সোমবার টাস্কফোর্স গঠন করবেন। তারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এ মহামারি কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে কাজ করবেন। টাস্কফোর্সটি কয়েক দিনের মধ্যে একটি সভা করতে পারেন। এই টাস্কফোর্সের সহ-সভাপতি হচ্ছেন প্রাক্তন সার্জন জেনারেল বিবেক এইচ এবং সাবেক খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন কমিশনার ডেভিড ক্যাসলার।

অনেকেই ধারণা করছেন জো বাইডেন দ্রুত কার্যনির্বাহী আদেশ নিয়ে বসবেন। অনেক আইনকেও তিনি সংস্কার করতে পারেন। তবে কংগ্রেসের মাধ্যমে বড় আইন সংস্কার তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

যদিও কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাখতে পারে, তবে সিনেটের চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়।

পলিসি টিম, ট্রানজিশন পলিসি টিম এখন নির্বাহী শক্তির উপর খুব বেশি মনোযোগ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাইডেন অন্যতম সহযোগী, যিনি এই দলগুলোর সঙ্গে কাজ করছেন। তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। আমি আশা করি, সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকলে বাইডেন অবাধে কাজ করতে পারবেন।

এদিকে বাইডেনের জেতা ২ ঘণ্টা পর হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলেসি তার সঙ্গে কথা বলেছেন। বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি ওবামা প্রশাসন ১০০টি স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত নিয়মের তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিস্থাপন করবেন।

বাইডেন হোয়াইট হাউসে পরিচালনার জন্য নতুন নির্দেশিকাও প্রতিষ্ঠা করবেন এবং তিনি প্রথম দিনেই তার প্রশাসনের কোন সদস্য বিচার বিভাগের তদন্তকে প্রভাবিত করবেন না বলে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সারা বিশ্বের সামনে এখন সবচেয়ে বড় যে সমস্যা, তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। বাইডেন এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সঙ্গে আবার যুক্ত হবেন। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি এটি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে গোটা বিশ্বকে এই সমঝোতাকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করবেন।

বাইডেনের দীর্ঘদিনের সহযোগী সেন ক্রিস্টোফার এ কুনস। তিনি বাইডেনের সঙ্গে প্রায় ৩৩ বছর ধরেছেন। তিনি বাইডেনকে প্রাথমিক কর্মসূচির একটি ধারণা দিয়েছেন। তিনি সেখানে জানান, ‘আমাদের এই মহামারী থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যা ট্রাম্পের জন্য খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমাদের অর্থনীতিকে পুনর্নির্মাণ করতে হবে। যা হবে টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক, যাতে বিভাজন ও বৈষম্যের মোকাবিলা করা যায়।

তিনি জানান, ট্রাম্প ও পেলোসি প্রায় এক বছর কথা বলেন না। কিন্তু বাইডেনের পরিকল্পনা হবে একদম আলাদা। তিনি বিজয়ের সাথে সাথে সব দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ করোনা মোকাবিলা তার প্রধান কাজ হবে। এবং তা তিনি বিভিন্ন প্রচারণা বারবার বলেছেন।

বাইডেন আগেই বলেছেন করোনা মোকাবিলার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুরুর আগে তিনি দেশের প্রধান সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসির কাছে যাবেন এবং তার পরামর্শ চাইবেন।

তিনি দ্রুত করোনা পরীক্ষা, ভ্যাকসিন সমন্বয়ের পাশাপাশি মাস্ক এবং পিপিইসহ কোভিড সরঞ্জাম তদারকির জন্য টিম গঠন করবেন।

বাইডেনে এসব পদক্ষেপ দেখাশুনা করছেন তার কাছের উপদেষ্টা টেড কাউফম্যান। ২০০৯ সালে বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে তার স্থানে সিনেটর হয়েছিলেন কাউফম্যান। ওই সময় একটি আইন প্রণয়ন ও ট্রানজিশনের হালনাগাদ লিখতে সহায়তা করেছিলেন তিনি। যা ২০১৫ সালে পাস হয়েছিল এবং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্বাক্ষর করেছিলেন।

বাইডেনের ট্রানজিশন টিমকে সরকারের ইস্যু করা কম্পিউটার, আইফোন প্রদান করা হবে। সেই সাথে ওয়াশিংটনের হারবার্ট সি হুভার ভবনে এক হাজার বর্গফুট অফিস স্পেস দেওয়া হবে। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে বেশির ভাগ সময় ভার্চুয়ালি কাজ পরিচালনা হবে। বাইডেনের ট্রানজিশন টিমের সদস্যদের এফবিআই থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২৯০ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন জো বাইডেন। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও পরাজয় স্বীকার করেননি। তিনি ভোটে কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। কয়েকটি রাজ্যে জালিয়াতির অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত তার অভিযোগের বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারেননি।

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!