DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বেগম খালেদা জিয়াঃ কর্মেই বিখ্যাত যার জন্ম ।

রাকেশ রহমানঃ পৃথিবীতে যত মনিষী বিখ্যাত হয়েছেন, তাঁরা সবাই যার যার কর্মের মাধ্যমেই উঠে এসেছিলেন। ঠিক একই ভাবে বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা যোদ্ধা বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় নিয়োজিত যোদ্ধা বেগম খালেদা জিয়া বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তাঁর কর্মে।

বেগম খালেদা জিয়া ২৪শে মে ২০১১ তারিখে নিউ জার্সি স্টেটে সিনেট কর্তৃক ডেমোক্রেসি ফাইটার হিসেবে সম্মানিত হন। ২৬শে মে ২০১৪ তারিখে 'আমার দেশ' পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য যুদ্ধ করে যাওয়া যোদ্ধা বেগম জিয়াকে আমি রাকেশ রহমান বাংলাদেশে সত্যের শক্তি'র পক্ষ থেকে "মাদার অব ডেমোক্রেসি" পদবীতে সম্মানিত করি।  উপজেলা ও সিটি নির্বাচনগুলোতে যেভাবে নির্লজ্জের মতো বর্তমান সরকার সহিংসতা চালিয়ে জোর করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধর্ষণ করে ক্ষতবিক্ষত করে দিল তা হলুদ মিডিয়া প্রকাশ না করলেও সত্য কখনও চাপা থাকে না।

তাই এই নমুনাগুলো প্রমাণস্বরূপ সবার চোখের সামনে চলে এসেছে। আজ জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রবাসী হয়ে বসবাস করছি। কিন্তু আমি ভীত নই। বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে আমি আমার সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বেগম জিয়া এর বিরোধিতা করেন।

১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নিবাঁচিত হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়।  ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেয়ার পর থেকে মোট চারবার তিনি গ্রেফতার হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে ত্যাগের একটি বিরল ঘটনা এবং তিনি এখনও বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার তাগিদে আপসহীন অটল রয়েছেন।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেফতার হন। সর্বশেষ তিনি ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন এবং এই মামলায় চলতে থাকা তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি।

২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর করেন। আগস্টে তিনি রাজপরিবারের আমন্ত্রণে সৌদি আরবে যান এবং পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। এই সফরে তিনি সৌদি রাজপুত্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সালমান আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। তাদের বৈঠকে দ্বিদেশীয় সম্পর্ক ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের সঙ্কট উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা হয়। অক্টোবরে খালেদা জিয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সফর করেন। সফরকালে তিনি চীনের রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি ও ভবিষ্যত্ একচ্ছত্র নেতা শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা করেন। বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক বিষয়াবলীও তাদের আলোচনায় উঠে আসে। জিনপিং ছাড়াও খালেদা জিয়া কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন। 

এ বছরের মাঝামাঝিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্য মূল অর্থদাতা বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলে বিশ্ব ব্যাংককে অনুসরণ করে একাধিক দাতা সংস্থা ঋণদান থেকে সরে দাঁড়ায় ও প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। বেগম জিয়ার চীন সফর সম্পন্ন হওয়ার একদিন পর তার রাজনৈতিক দল বিএনপি ঘোষণা দেয় যে চীনা নেতারা দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন সরকারের বিনিয়োগের বিষয়ে খালেদা জিয়াকে নিশ্চিত করেছেন।

একই মাসে খালেদা জিয়া ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারত সফরে যান। সফরের শুরুতে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় বিরোধীদলীয় প্রধান ও বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফরকালে তার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন ও পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। খালেদা জিয়ার ভারত সফরের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল দ্বিবার্ষিক সম্পর্ক, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, তিস্তা পানি চুক্তি এবং বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তা।

 বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতার যোদ্ধা বেগম খালেদা জিয়া ২৪ মে ২০১১ তারিখে, নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে একটি ‘ডেমোক্রেসি ফাইটার’ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া সম্মানিত হন। এই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার সব নেতা- নেত্রীর মধ্য থেকে বাংলাদেশের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সিনেট কর্তৃক সম্মানিত পদবি দেয়া হয়। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গর্বের বিষয়। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, তিনি বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের প্রধান। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া ঠিক ১৯৮৬ সালের মতো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচন বয়কট করে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

 অন্যায় নিয়ম গেরিম্যান্ডারিং (নির্বাচনে কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীকে অন্যায় সুবিধাদানের জন্য অসদুপায় অবলম্বন করা), নির্বাচিত হবার যোগ্যতা থেকে বিরোধী প্রার্থীদের বাদ দেওয়া, নির্বাচনী সাফল্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে ভোটদান প্রক্রিয়াকে নিজের পক্ষে সুবিধাজনক করা। এগুলি সেই উপায়গুলির মধ্যে পড়ে যার মাধ্যমে একটা নির্বাচনকে কোনো নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠী বা প্রার্থীর পক্ষে বদলে দেওয়া যায়। প্রচারে অনাহুত হস্তক্ষেপ নির্বাচন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার অথবা তাঁকে খুন করে, প্রচার কাজ দমন করে (বক্তৃতা, পোস্টার, সম্প্রচার, বিজ্ঞাপন), প্রচার সদর দপ্তর জোর করে বন্ধ করে, অপরাধমূলক প্রচার চালিয়ে যাওয়া , প্রচার কর্মীদের হেনস্থা ও মারধর করা , ভোটারদের হুমকি দিয়ে ভয় দেখিয়ে বা বাস্তবেই হিংসা চালিয়ে যাওয়া।

নির্বাচন ব্যবস্থায় গরমিল কীভাবে ভোট দিতে হবে সে সম্পর্কে ভোটারদের বিভ্রান্ত করে বা ভুল বুঝিয়ে, গোপন ব্যালট ব্যবস্থার ব্যাঘাত ঘটিয়ে, ছাপা ভোট দিয়ে, ভোট যন্ত্রে গরমিল করে, বৈধ ভোটকে নষ্ট করে, ভোটারদের মারধর করে, ফলাফল সারণিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে জালিয়াতি করে এবং ভোটকেন্দ্রে পেশীশক্তির ব্যবহার অথবা মৌখিক হুমকি দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থায় গরমিল করা। এই সকল ক্ষেত্রেই কোন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে নিরপেক্ষতার কোন সম্ভাবনাই নেই। বাংলাদেশের তিন সিটি নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণায় যেভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে সেখানে নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এই সরকারের কাছে প্রশ্নই উঠে না। এই সকল কারণেই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবদায়ক সরকার ছাড়া ২০ দলীয় ঐক্য জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ এর এক তরফা নির্বাচনকে বয়কট করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে হেঁটে চলেছেন। সকল ক্ষেত্রেই খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দেশ পরিচালনায় সফল একজন নেত্রী বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, অর্থনীতি স্থিতিশীলতায় ও শিক্ষা ব্যবস্থায় নকল দমনে আজো প্রশংসিত হয়ে আছেন। এই বিষয় গুলো ছাড়াও সরকার পরিচালনায় বহু দিক থেকে প্রশংসিত যা এক লিখায় লিখে শেষ করা যাবে না। বার বার বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় যে ভূমিকা রেখে একের পর এক ত্যাগের ইতিহাস গড়ে যাচ্ছেন তা অতুলনীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে পৃথিবীর বুকে।

 সম্মান জোর করে মিথ্যা প্রচারে আদায় করা যায় না, সম্মান পেতে হলে সুকর্ম জাতিকে উপহার দিতে হয় যা করে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। যেমন- বেগম জিয়া লাশের রাজনীতি করেন না বরং করেন অশুভ মহল আমি তার দৃষ্টান্ত প্রমাণ। তাই খালেদা জিয়া'র কর্মে বিখ্যাত তাঁর জন্ম।

লেখক : রাকেশ রহমান ,কলামিস্ট।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!