DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান,বীর উত্তম কেন এতো জনপ্রিয়????

কর্নেল(অবঃ) মো: আবদুল হকঃ আজ ৩০ মে বাংলাদেশের উন্নয়ণের রুপকার বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুন:প্রতিষ্ঠাতা বীর উত্তম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী।

পৃথিবীতে মাঝে মধ্যে দু’একজন লোকের আগমন ঘটে যারা ইতিহাসের পাতাকে রাঙিয়ে চির স্মরণীয়, বরণীয় ও মানুষের নিকট অনুকরণীয় হয়ে থাকেন। ঠিক এরকমই একজন মানুষের আগমন ঘটে বাংলাদেশে। তিনি ছিলেন লেঃ জেনারেল জিয়াউর রহমান।
সততার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে যিনি তাঁর সারাটা জীবন দেশ ও মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে উৎসর্গ করেছিলেন।

যে সকল কারণে বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেতা ও মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের প্রতিক এবং যিনি মানুষের মনের গভীরে ও ইতিহাসের পাতায় চির অমর হয়ে থাকবেন :

 

১। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে জিয়াউর রহমান একজন চৌকস অফিসার হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। পেশাগত দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলী ও সুহৃদয় আন্তরিক ব্যবহারের কারণে বিশেষ করে বাঙ্গালী অফিসার ও জওয়ানদের নিকট তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে জেন্টলম্যান ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন। তিনি ছিলেন সুদক্ষ প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো, স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কোম্পানি অধিনায়ক হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি দুর্দষ সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দেন। যুদ্ধে দুর্ধর্ষ সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য যেসব কোম্পানি সর্বাধিক বীরত্বসূচক পুরস্কার লাভ করে, জিয়াউর রহমানের কোম্পানি ছিল এদের অন্যতম। এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার জিয়াউর রহমানকে ‘হিলাল-ই-জুরাত’ খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়াও জিয়াউর রহমানের ইউনিট এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য দুটি ‘সিতারা-ই-জুরাত’ ও নয়টি ‘তঘমা-ই-জুরাত’ পদক লাভ করে। ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে পেশাদার ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ লাভ করেন, যা একজন সামরিক অফিসারের জন্য অত্যন্ত মর্যাদা পূর্ণ। সে বছরই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটার স্টাফ কলেজে কমান্ড কোর্সে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হয়ে জয়দেবপুরে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন। কিন্তু এডভান্সড মিলিটারি এন্ড কমান্ড ট্রেনিং কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানিতে যান এবং কয়েক মাস ব্রিটিশ আর্মির সাথেও কাজ করেন। ১৯৭০ সালে একজন মেজর হিসেবে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন।

 

২। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাঙালি জনগনের উপর হামলা করার পর দুঃসাহসী মেজর জিয়া বিদ্রোহ ঘোষনা করেন এবং তিনি তার অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টর পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে ইউনিটের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ও চট্টগ্রামে স্বশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।


৩। জাতীয় জীবনের চরম সঙ্কটময় মুহুর্তে ১৯৭১ সালের ২৬ ও ২৭শে মার্চ তিনি শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করে জাতিকে উজ্জীবিত করেন এবং মহান স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় তাঁর নামকে স্বর্ণাক্ষরে অঙ্কিত করেন।


৪। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে।


৫। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হবার ১০ দিন পর ২৫ আগষ্ট জিয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। নভেম্বর মাসের ৩ তারিখে কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বাধীন ঢাকা ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের সহায়তায় বীর উত্তম মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান ও জিয়াউর রহমানকে চীফ-অফ-আর্মি স্টাফ হিসেবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে গৃহবন্দী করে রাখা হয় যা সেনাবাহিনীর মধ্যে তার জনপ্রিয়তার কারণে অত্যন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় এবং জিয়ার প্রতি অবিচার করায় ক্ষুদ্ধ সেনাসদস্যরা ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার আরেক পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দীত্ব থেকে মুক্ত করে পুনরায় সেনাপ্রধান পদে বসানো হয়। সিপাহি জনতা বিপ্লবের পর তিনি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। দেশের এক অস্থির পরিবেশে জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।


৬। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তণ: একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র কায়েম করেন। নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং অবাধ রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন এবং দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের সার্বিক উন্নয়ণের কাজ শুরু করেন। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং ঘোষণা করেন ১৯ দফা কর্মসূচি। যে গণতন্ত্রের আকাঙ্খায় দেশ স্বাধীন হয়েছিল তিনি সে চেতনায় জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করতে থাকেন।


৭। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা: তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব প্রদান করেন, অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। দেশে বহু বিভিন্ন ধরনের মতের-পথের ও ধর্মের নানা জাতিগোষ্ঠী বাস করে। তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মাত্রা ও ধরন একে অপরের থেকে ভিন্ন। তাই ভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে নয়, ভূখণ্ডের ভিত্তিতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের ঐক্য ও সংহতির ওপর গুরুত্ত্ব আরোপ করেন এবং এই ধারণা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার শক্তি হিসেবে শক্তিশালী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস চালান। বহুধা বিভক্ত দেশের জনগণকে ধর্ম-বর্ণ,দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করেন।

৮। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা: ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। এই দলে বাম, ডান ও মধ্যপন্থীসহ সকল স্তরের লোক ছিলেন। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বিএনপি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে আব্দুল মালেক উকিল এর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৮টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১টি ও মুসলিম ডেমোক্রেটিক লীগ ২০টি আসনে জয়লাভ করে।

 

৯। কৃষি উন্নয়ণ: দেশের চরম খাদ্যাভাব দুর করার জন্য তিনি ‘সবুজ বিপ্লবের’ মাধ্যমে অল্প সময়েই তিনি ব্যাপক সফলতা অর্জন করে সারা দেশের কৃষকদের অতি প্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ফারাক্কা বাঁধের কারণে পানির সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য তিনি ব্যক্তিগত ভাবে দেশের প্রতিটি এলাকায় খাল কাঁটা কর্মসূচী শুরু করেন, যা কৃষি উন্নয়ণে আজও মাইল ফলক হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।১৯৭৬ সালেই তিনি উলশি যদুনাথপুর থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন উদ্বোধন করেন।

 

১০। অর্থনৈতিক উন্নয়ণ: দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে তিনি শক্তিশালী রূপ প্রদান করেন। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি হতে শুরু করে। বেকার মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।

 

১১। আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ণ: ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তিনি দেশে শান্তি শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি পুলিশ বাহিনীকে শক্তিশালী করেন। পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করে তিনি তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালের ৮ই মার্চ মহিলা পুলিশ গঠন করেন।

 

১২। সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ণ: সশস্ত্র বাহিনীতেও তিনি দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি কঠোর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে পেশাগত শৃঙ্খলা উন্নয়নের কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং তাদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করেন। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে যথেষ্ট সফল হলেও তাঁকে বেশ কয়েকটি সেনা-বিদ্রোহ ও সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মোকাবেলা করতে হয়। এসকল বিদ্রোহ দমনে বাধ্য হয়ে তাকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

 

১৩। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ণ: তিনি সকল দেশের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে কলম্বোতে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশ সাত জাতি গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি লাভ করে।

১৪। প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক: সার্কের রূপকার ছিলেন বাংলাদেশের দূরদর্শী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৭৯-৮০ সালে তিনি একটি সংস্থা গঠন করার চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন করেন। যার নামকরণ করা হয়-South Asian Association for Regional Co-operation সংক্ষেপে SAARC। এর সদস্য দেশ হিসেবে প্রথমে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভূটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কাকে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আফগানিস্তান সংযুক্ত হয়।

 

১৫। দেশের যুবক শ্রেনিকে বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে তৈরি করার জন্য তিনি যুব মন্ত্রণালয় গঠন করেন এবং সারা দেশে যুবকদের কারিগরি, কৃষি ও গঠনমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।

 

১৬। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গঠন: মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে আষ্টে-পৃষ্টে ধরে রাখার জন্য এবং দেশের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাগণের কল্যাণের লক্ষ্যে তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গঠন করেন।

 

 

১৭। গণশিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ণ: আদর্শ নাগরিক গড়ার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে তিনি ঢেলে সাঁজিয়ে প্রতিটি নাগরিকের জন্য সহজ লভ্য করে দেন। ছাত্রদেরকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে উৎসাহ প্রদান করেন। তাদের জন্য নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, যেখানে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থাকতেন। ‘হিজবুল বাহার’ নামক একটি জাহাজে করে কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি শিক্ষা ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন।

 

১৮। শিশুদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি বিভিন্ন উৎসাহ ব্যঞ্জক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের পাশে আধুনিক একটি শিশুপার্ক গড়ে তোলেন। যেখানে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা মূল্যে বিনোদনের ব্যবস্থা করেন।

 

১৯। অতি সাধারণ ও কঠোর সততার সাথে জীবন যাপন: জিয়াউর রহমান দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েও অতি সাধারণ, বিলাসহীন ও কঠোর সততার সাথে জীবনযাপন করতেন যা ছিল সর্বজন স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, তাঁর মধ্যে কোন স্বজনপ্রীতির ছিটে-ফোঁটাও ছিল না। কোন আত্মীয়-স্বজন তাঁর ক্ষমতার বলয়ের ধারে কাছেও আসতে পারতো না। তিনি কোন সামান্য অবৈধ সুযোগ-সুবিধাও গ্রহণ করতেন না। এ সকল গুণাবলীর কারণে মানুষের নিকট তিনি ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

 

২০। জিয়াউর রহমানের চিন্তা-চেতনায়, ধ্যানে-জ্ঞানে কেবলই ছিল দেশ ও দেশের জনগণ। উপরে বর্ণিত বিষয় ছাড়াও তিনি দেশ ও জনগণের জন্য আরো অনেক অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলেন, যা এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নহে।

 

২১। বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত রাজনীতির কতিপয় সাফল্য সংক্ষেপে নিম্নে তুলে ধরা হলো :


• সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান।
• জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি।
• বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া।
• দেশে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প উৎপাদনে বিপ্লবের মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ণ।
• সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনর্খনন।
• গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অতি অল্প সময়ে ৪০ লক্ষ মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দান।
• গ্রামাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা প্রদান ও গ্রামোন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর(ভিডিপি) গঠন।
• গ্রামাঞ্চলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, হত্যা বন্ধ করা।
• হাজার হাজার মাইল রাস্তা-ঘাট নির্মাণ।
• ২৭,৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগ করে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধিকরণ।
• নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের ভেতর দিয়ে অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ।
• কলকারখানায় তিন শিফট চালু করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি।
• কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশকে খাদ্য রপ্তানীর পর্যায়ে উন্নীতকরণ।
• যুব উন্নয়ন মন্ত্রাণালয় ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুব ও নারী সমাজকে সম্পৃক্তকরণ।
• ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্টা করে সকল মানুষের স্ব স্ব ধর্ম পালনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণ।
• বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন।
• তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামের জনগণকে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করণ এবং সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব সৃষ্টি করার লক্ষ্যে গ্রাম সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন।
• জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আসনলাভ।
• তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি।
• দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে 'সার্ক' প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণ।
• বেসরকারিখাত ও উদ্যোগকে উৎসাহিতকরণ।
• জনশক্তি রপ্তানি, তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্পসহ সকল অপ্রচলিত পণ্যোর রপ্তানীর দ্বার উন্মোচন।
• শিল্পখাতে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ।

 

২২। একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো এই যে, মুসলিম দেশগুলোতে যে নেতা বা সরকার প্রধান জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে দেশকে একটি শক্তিশালী দেশে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাঁকেই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়্। যেমন- বাদশাহ ফয়সল বিন আবদুল আজিজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক প্রমূখ। দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারিরা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মতো মহান জাতীয়তাবাদী নেতার বিপুল জনপ্রিয়তা ও দেশের উন্নয়ণ কখনোই মেনে নিতে পারেনি। তাই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে তাঁকে হত্যা করে। জিয়াউর রহমানকে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে দাফন করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়ার জানাজায় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ জনসমাগম ঘটে যেখানে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ অংশ গ্রহন করে।


২৩। এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। ইতিহাস সৃষ্টিকারী দুরদর্শী চিন্তা চেতনার অধিকারী অসাধারণ প্রতিভাবান কালজয়ী পুরুষ জিয়াউর রহমানের বার বার জন্ম হয় না। দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে ধুমকেতুর মতো এঁদের আবির্ভাব হয়। বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে যতদিন টিকে থাকবে, বীর উত্তম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকবেন স্মরণীয়, বরনীয় হয়ে এদেশের মাটি ও মানুষের মনের মণিকোঠায় মুক্তির সুউজ্জল আলোকবর্তিকা হিসেবে।
 

লেখকঃ কর্ণেল মোহাম্মদ আবদুল হক, পিএসসি (অবঃ)।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা,সামরিক ইতিহাস বিশ্লেষক।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!