DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

রাষ্ট্রপতি জিয়া হত্যাঃএই অপ্রত্যাশিত ঘটনার আড়ালে ছিলো কারা??????

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ৩০শে মে ,১৯৮১ তে মহান স্বাধীনতার ঘোষক,বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অসীম জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান,বীর উত্তমের দুঃখজনক মৃত্যুর কারণ  যথেষ্ট রহস্যময় এবং অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ছিলো জাতির জন্য।

এই হত্যাকান্ডে  সম্ভাব্য কারা কলকাঠি নাড়িয়েছে এবং ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে তাদের নিয়ে আলোকপাত করা যাকঃ

১। ভারত সরকার এবং গোয়েন্দা সংস্থা ' র ' এর সম্পৃক্ততা –

স্বাধীন বাংলাদেশের উপর ভারতের কতৃত্বটা শুরু মুক্তিযুদ্ধকাল সময় থেকে চলে ৭ই নভেম্বর, ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। তারপর তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, পরবর্তীতেতে তিনি রাষ্ট্রপতি হন তারপর বাংলাদেশের উপর থেকে ভারতের কতৃত্ববাদ অনেকাংশ কমে যায়।

কিন্তু ভারত সেই কতৃত্ব ফিরিয়ে আনার জন্য সেনাবাহিনীর ভিতরে ১৯৭৬ – ১৯৮১ পর্যন্ত ২০ – ২১ টি ছোট বড় সামরিক অভ্যুত্থান সংগঠিত করে বলে আমার ধারনা। সেনাবাহিনীর ভিতরে ভারতীয় অস্থিতিশীল অবস্থা করার চেষ্টা করে এবং সেনাবাহিনীর ভিতর থেকে একাংশ ওইসব অভ্যুত্থানে ইন্ধন যোগায় আর বাইরে থেকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্যদান করে ভারতীয়রা।বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সেই অভ্যুত্থানে অনেক সেনা অফিসার নিহত হন ।কিন্তু তাদের থামানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছিল,ঐসময় সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কঠোর হস্তে বিদ্রোহীদের দমন করেন এবং সেনাবাহিনীর শৃঙ্গলা দ্রুত ফিরিয়ে  আেনন। বাংলাদেশে ভারত বিরোধীতা তখন চরম রূপ ধারন করে ছিলো তখন তা  দুই দেশের সম্পর্কেও অনেক প্রভাব বিস্তার করে।

এর ক্লাইম্যাক্স চরমে পৌছায় যখন ভারতীয় নৌবাহিনী ২০ মে, ১৯৮১ সালে তালপট্টি দ্বীপ দখল করে নেনে। বাংলাদেশের জনগণ এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন তিনি এই তালপট্টি আবার বাংলাদেশের অংশ হবে। তালপট্টি সংকট নিয়ে আলোচনা করার জন্য অচিরেই চীনের প্রধানমন্ত্রী ঝাউ জিয়াংয়ের বাংলাদেশের সফরে আসার কথা ছিলো। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ইরাক – ইরান যুদ্ধ বন্ধে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ তেহরান ও বাগদাদ সফরে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তিনি ২৯ মে, ১৯৮১ তেহরান সফর বাতিল করে চট্টগ্রামে যান চট্টগ্রাম বিএনপির দুই গ্রুপের কোন্দল নিরসন করার জন্য। তারপর আসে সেই মুহূত যা বাংলাদেশের ইতিহাস চিরদিনের জন্য পরিবর্তন করে দেয়। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সৈনিক তাকে ভোর ০৪.৩০ মিনিটে নির্মমভাবে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।

সর্বপ্রথম প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যার খবর ভারতীয় আকাশবাণী প্রচার করে তারা কিভাবে বা কোন মাধ্যমে এই খবর জানতে পারলো তা আজো অনেক রহস্যময়। সেই মে মাসের কিছু ঘটনা কি কাকতালীয় নাকি পরিকল্পিত তা আমাদের প্রশ্নঃযেমন – ১৭ মে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা, ২০ মে ভারত কর্তৃক তালপট্টি দখল, ২৯ মে প্রেসিডেন্ট জিয়ার তেহরান সফর বাতিল, চট্টগ্রাম যাওয়া, মুক্তিযোদ্ধা অফিসাররা প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করা, প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যা পরবর্তি সময়ে তৎকালীন সেনা প্রধান এরশাদের রহস্যজনক ভুমিকা ইত্যাদি।

২। দেশীয় ষড়যন্ত্র :

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বিরোধী শক্তি যা গঠিত হয় রাজনীতিবিদ, সরকারি আমলা, ব্যবসায়ী এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যবৃন্দ।

৩।সেনা প্রধান এইচ এম এরশাদের ভূমিকা :

১৯৭৯ সালে এইচ এম এরশাদ সেনাপ্রধান হন। সেনাপ্রধান হওয়ার পর সেনাবাহিনীর ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের লোকদের নিয়োগ দেন। সেনাবাহিনীর ভিতরে নিজের একটা বলয় তৈরি করতে সমর্থ হন। অমুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের বেশী সুযোগ সুবিধা দেন আর মুক্তিযোদ্ধা অফিসাররা নানান বৈষম্যের শিকার হন পোস্টিং, প্রমোশন, বিদেশে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে। এরশাদ মুক্তিযোদ্ধা এবং অমুক্তিযোদ্ধা দ্বন্দ্ব সবসমেত জিয়ে রাখতেন এই দ্বন্ধ সৃষ্টির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ভিতরে নিজের একক ক্ষমতার অধিকারী হন।রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ – ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বেশী নজর দিতে পাড়েননি।এই সুযোগে এরশাদ কোন এক অদৃশ্য কারনে ১৯৮০ সালের শেষদিকে জিয়ার প্রতি বিরক্ত মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের চট্টগ্রামে ২৪পদাতিক ডিভিশনে কৌশলে পোস্টিং করান বলে অভিযোগ রয়েছে।

সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সুস্পষ্ট রিপোর্ট ছিলো ঐসময় চট্্গ্রামে প্রেসিডেন্ট জিয়ার রাত্রিযাপন না করা নিয়ে,এনিয়ে এরশাদ কোন ভূমিকা নেননি,কেনো???

 রাষ্ট্রপতি জিয়া হত্যার খবরে ঐ সময় সেনাসদরে যখন এক ধরনের শোকের ভাব নেমে আসে কিন্তু সেনা প্রধান এরশাদের ব্যবহার পুরোপুরী স্বাভাবিক ছিল। এই সময়ে তিনি সামরিক আইন জারির কথা বলেন কিন্তু তখনকার অন্যান্য সিনিয়র অফিসারদের বিরোধীতার ফলে এরশাদ সামরিক আইন জারি করতে পারেননি।

 

৪। আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্র :

 

তখনকার সময়ে বিশ্ব রাজনীতি বড়ই জটিল ছিল। কারণ সারা বিশ্বের রাজনীতিতে দুই মেরুতে বিভক্ত ছিল – পূর্ব ব্লক ( সোভিয়েত ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণে), পশ্চিম ব্লক ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে )। স্নায়ু যুদ্ধের সময় দেশকে এই দুই পরাশক্তির মাঝে মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হতো।

বাংলাদেশও তার বাইরে ছিলো না।ঐ সময় ১৯৮০ সালের ইরান – ইরাক যুদ্ধ একটা টার্নিং পয়েন্ট। এই ভাতৃঘাতী যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ও আইসির শক্তিশালী আল কুদ্দস কমিটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দেন যুদ্ধবন্ধ করার জন্য।

তিনি তখন অনেকটা সফল হয়েছিলেন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করতে এবং আলোচনা সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হঠাৎ বিয়োগান্তিক মৃত্য যুদ্ধবিরতি ও আলোচনা ভেস্তে যায়।

একটা যুদ্ধে আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদি জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতেন তাহলে সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অতি অল্পসময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যেত। কিন্তু শক্তিধর আর্ন্তজাতিক মহল হয়তো চাননি এই প্রাণঘাতী যুদ্ধ দ্রুত শেষ হউক। তারা চেয়েছিল এই যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলুক আর তাদের দেশের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বাড়ুক। জিয়াউর রহমান তাদের এই চক্রান্তের শিকার হতে পারেন।

পরিশেষে এই বলা যায় যে, এছাড়া অনেক কারণ বিধ্যমান এই হত্যাকান্ডে উক্ত লেখাটি আমি ব্যাক্তিগত বিশ্লেষণ, বই, পত্রিকার বিভিন্ন লেখা ইত্যাদির ভিত্তি করে লিখেছি। এর  সমাপ্তি ঘটানো খুবই কঠিন কাজ। তবে প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যাকান্ড একটা গভীর গবেষণার বিষয়,এ ব্যাপারে আমার  ব্যাক্তিগত অনুসন্ধিৎসা বরাবরই প্রবল। আমি বিষয়টি বিশ্লেষণ করতে চাই,  এবং জানতে চাই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি কেন ঘটেছিল এবং এর নেপথ্যে ছিলো কারা। এই আলোচনা সহসা শেষ হবার নয়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!