DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম উদ্বেগজনক পর্যায়েঃইউএনএইচআর

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর সাম্প্রতিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, হেফাজতে নির্যাতন, মৃত্যুদণ্ডের আধিক্য ও কারাগারে মানবেতর পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিটি।

কমিটি নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতাসহ সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এখতিয়ার বাড়ানো পরামর্শ দিয়েছে। একই সাথে জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার সমুন্নত রাখতে নির্বাচনের সময় সবার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) আলোকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা শেষে কমিটি গতকাল মঙ্গলবার জেনেভা থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছে। এর আগে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে থেকে প্রতিক্রিয়া চেয়েছিল।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সরকার লিখিতভাবে জবাব দিয়েছে। এরপর ৬ ও ৭ মার্চ জেনেভাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক ১৬ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে মৌখিকভাবে কমিটি সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেন। সব পক্ষের প্রতিবেদন ও মৌখিক জবাবের ভিত্তিতে কমিটি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।


প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য কমিটি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। তবে এ জন্য ১৪ বছর কালক্ষেপণ করায় উষ্মা প্রকাশ করেছে।

পর্যবেক্ষণে কমিটি পুলিশ, র‌্যাব ও সৈন্যদের দ্বারা উচ্চ মাত্রায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও রাষ্ট্র কর্তৃক অত্যধিক শক্তি প্রয়োগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত ও জবাবদিহিতার অভাব এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে কোনো ধরনের তথ্য সরবরাহ না করায় উদ্বেগ জানিয়েছে।

কমিটির মতে, বাংলাদেশের আইন গুমকে কার্যকরভাবে অপরাধের আওতায় আনতে পারছে না এবং সরকার গুমের ঘটনা স্বীকারই করছে না।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সরবরাহ করা তথ্য পর্যালোচনা করে কমিটি দেখেছে, জিজ্ঞাসাবাদ বা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতনের পথ বেছে নিলেও সরকার এসব ঘটনার কোনো তদন্ত করছে না।

বাংলাদেশে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ অধ্যাদেশ-২০১৩ বলবৎ থাকলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ অধ্যাদেশের বিলুপ্তি ও নির্যাতনের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি চেয়ে যে আবেদন করেছে- তাতে আরো উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।


বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান হারে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইসিসিপিআরের অনুচ্ছেদ ৬(২) এর আওতায় ‘সর্বাধিক গুরুতর অপরাধ’ এর আওতায় না পড়লেও বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে।

এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় চোরাচালান বা খাদ্যে ভেজাল দেয়া, ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে মাদকদ্রব্য উৎপাদন, প্রস্তুতকরণ বা গ্রহণ এবং ১৯২৩ সালের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা অধ্যাদেশের আওতায় গোয়েন্দাগিরিসংক্রান্ত অপরাধ। কমিটি সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।


কমিটি বাংলাদেশের কারাগারগুলোর করুণ অবস্থা, বিশেষ করে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত আসামি বা কয়েদি রাখা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও কারারক্ষীদের চাঁদাবাজিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে সহিংসতা, রাষ্ট্র কর্তৃক অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ এবং নির্বাচনে ভোটারদের অংশ নিতে বাধা দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার সমুন্নত রাখতে নির্বাচনের সময় সবার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কমিটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

পর্যবেক্ষণে আইসিসিপিআর ও কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা ২০২১ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

 

 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!