DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

কানাডার আদালতের এই রায় সাজানো , প্রশ্ন বিদ্ধ এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিতঃরিজভী আহমেদ

ruhul-kabir-rizvi-690x450-copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সম্প্রতি কানাডার এক ইমিগ্রেশন আদালতের রায়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল বলে যে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে তার পেছনে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন অবৈধ হাসিনা সরকারের চক্রান্ত দেখছে বিএনপি।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, রায় পড়ে যতটুকু বুঝেছি, এটা সম্পূর্ণ চক্রান্তমূলক নাটকের অংশ। আমরা মনে করি, এটি বর্তমান সরকারের একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিষয়। তারা একটি নাটক সাজিয়েছে এবং ওই নাটকটায় ওইভাবে তারা তথ্য-প্রমাণ দিয়েছে। নির্বাচনের আগে জনগণের মধ্যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতে ক্ষমতাসীনরা এসব নাটক সাজাচ্ছে।

কানাডার আদালতের ওই রায় নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়- ‘বিএনপি সন্ত্রাসে ছিল, আছে বা ভবিষ্যতেও থাকতে পারে- এমন ধারণা করার যৌক্তিক কারণ আছে।’ রায়ের একটি অংশের বক্তব্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, বিরোধী দলের একজন ছেলে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীর কথা বলা হচ্ছে, সে তার আবেদনে কি বিএনপির বিরুদ্ধে বলবে? সে তো বলবে আমি বাংলাদেশে একটা প্রতিকূলতার মধ্যে আছি। হয়রানি হচ্ছে, মামলা হচ্ছে, টর্চার হতে পারে, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হতে পারে- এসব কথা আবেদনে বলবে। সে বিএনপির বিরুদ্ধে বলবে কেন? তিনি বলেন, এজন্যই মনে হচ্ছে, এটা একটা সাজানো নাটকের বিষয়। যেটা কানাডায় উপস্থাপন করেছেন, ইমিগ্রেশন বিভাগকে এভাবে ভুল তথ্য তারা দিয়েছেন, বানানো নাটকের ভুল তথ্য দিয়েছেন এবং সেটা তারা কোর্টে নিয়ে গেছেন।

রিজভী বলেন, সরকার প্রভাবিত মিডিয়ায় বুধবার আমরা যেভাবে সংবাদটি দেখেছি, কানাডার যে অনলাইনে এসেছে সেটাও দেখেছি। কানাডায় যে অনলাইন পত্রিকায় সংবাদটি এসেছে, সেটি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শওগাত আলী সাগরের। তারা কানাডায় বসে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও নানা ধরনের চক্রান্ত করছেন, একটা পরিকল্পনা তৈরি করছেন- এটা স্পষ্ট।

এই রায়টি প্রকাশিত হয়েছে গত ২৫শে জানুয়ারি। হঠাৎ করে কালকে আমরা এর প্রচার দেখতে পেলাম। বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের প্রচারিত মিডিয়ায় এটা প্রচার করার ধুম পড়ে গেছে।

বিএনপি এই রায়ের বিষয়ে কী করবে বা কানাডার উচ্চ আদালতে যাবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী আহমেদ বলেন, সেটা আমরা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে বলতে পারবো। এখন যেটা তাৎক্ষণিক জেনেছি, তার প্রতিক্রিয়া জানালাম। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, রায়ে বিচারক বলেছেন- আবেদনকারীর বক্তব্যকে আমলে নিয়ে ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তা বাংলাদেশের রাজনীতিকে সহিংস ঘটনা হিসেবে অবহিত করেন।

বলেন, বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উভয়ে জনগণ ও সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এই যে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার তথ্যের ভিত্তিতে, বিএনপি সন্ত্রাসী কিনা, তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছেন, এটার জন্য প্রসিকিউশনের বিপক্ষে যে ডিফেন্স ল’ ইয়ার, তাদের কোনো যুক্তি-তর্ক এখানে দেখছি না। আমরা রায়ের সূচনা যতটুকু পড়েছি, আরো বিস্তারিত জেনে পরে বলবো।

২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খালেদা জিয়াসহ দলীয় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এবং সকালে সাধারণ মানুষের পুষ্পস্তবক অর্পণের দুটি ছবি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে রিজভী বলেন, পুলিশ এবং সর্বস্তরের জনগণ কোথায় দাঁড়ানো আছে? বিএনপি চেয়ারপারসন এবং অন্য নেতৃবৃন্দ কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন? ঠিক একই জায়গায়। দেখুন নগ্ন পদ, ম্যাডামসহ সবার। তাহলে প্রধানমন্ত্রী যে সত্য কথা বলেন না এটা একেবারেই সুস্পষ্ট।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, কানাডার যে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে, সেখানকার প্রসিকিউশন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছে। সুতরাং শুধু শুধু বিএনপিকে দোষারোপ করার মানে হয় না। বিএনপি যদি সন্ত্রাসী দল হয়, তাহলে রায় অনুযায়ী আওয়ামী লীগও সন্ত্রাসীদের দল। আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ এক ধাপ এগিয়ে আছে, আমাদের আগে আছে।


বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম করা হচ্ছে: রিজভী
রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে দমন-নিপীড়ন ও হামলা-মামলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গুম করা হচ্ছে। কয়েক দিনে বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেয়া হলেও তাদের সন্ধান মিলছে না। এজন্য নিখোঁজ হওয়া লোকজনের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে এক দুই বছর পরে গ্রেপ্তারের নাটক সাজালে গুমের শিকার পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে এসব নাটকের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। রিজভী বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবদুল হাকিমকে মঙ্গলবার বিকাল পৌনে ৪টায় সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোটরসাইকেলযোগে তার নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক থানা পুলিশে যোগাযোগ করা হলেও কোনো হদিস দিতে পারেনি। পরবর্তীতে নানা নাটকীয়তা ও সাসপেন্স শেষে তিন দিন পর তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। 

রিজভী বলেন, দু’দিন আগে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার আবুল কাশেম। তিন দিন অতিবাহিত হলেও তার কোনো খোঁজ মিলছে না। তার পরিবার থানায় জিডি করে পুলিশের সহায়তা চাইলেও পুলিশ তার কোনো সন্ধান দিতে পারছে না। সম্প্রতি কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীতে মাছের ঘের থেকে একটি প্রাডো গাড়ি উদ্ধারে দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত সোমবার কাপাসিয়া থানায় হাজির হয়ে গাড়ির মালিকের স্ত্রী সালেহা বেগম দাবি করেন তার স্বামী হেফজুর রহমানকে ২০১৫ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে গুলশান থেকে তুলে নিয়ে যায়। গাড়ি পাওয়া গেলেও নিখোঁজ ব্যক্তির এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ৫৪ ধারা এবং সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে গত বছরের ৯ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাও মানছে না সরকার। রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গুম-খুনের রাজনৈতিক কর্মসূচি চালু করেছিল তার ছেদ-যতি এখনো টানেনি। তার শিকার হয়ে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হীরু, হুমায়ুন কবির পারভেজ, চৌধুরী আলম, জাকির, সুমন, মুন্নাসহ বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ। গুম-খুনের ফেস্টিভ্যাল এখন জ্যামিতিক হারে বেড়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে একের অধিক মানুষ কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। দেশ যে ভয়ঙ্কর দুঃসময় অতিক্রম করছে পোশাকে কিংবা সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার, গুমের ঘটনা তার উদাহরণ। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুল আউয়াল খান ও মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!